‘জীবনের উপর কোনো অভিযোগ নেই’

জীবনের এই প্রান্তে তিনি কেমন আছেন, খোঁজ নেন তার অগণিত আলোকিত শিক্ষার্থীরা। যার জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয়ে আজ প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে চলেছেন অনেকেই। সবার কাছে তিনি আদর্শ শিক্ষক। প্রায় ১০০ বছর বয়সের ভারে আজ নুয়ে পড়েছেন এই প্রবীণ শিক্ষক সন্তোষ কুমার দে। এলাকায় তিনি একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। সারাটা দিন কাটে এখন খবরের কাগজ পড়ে আর টেলিভিশনের সংবাদ শুনে। শরীর সুস্থ থাকলে একটু হাটাহাটিও করেন বাড়ির ভেতর। দেশজুড়ে রয়েছে তার অসংখ্য শিক্ষার্থী, বন্ধু-বান্ধব আর শুভাকাঙ্ক্ষী।
১৯২৯ সালে কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার খন্দকবাড়ীয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন প্রায় শতবছর বয়সী এই শিক্ষক সন্তোষ কুমার দে। প্রাথমিক পড়া শেষ করেন মিরপুর এম ই প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। ঐতিহ্যবাহী কুষ্টিয়া হাই স্কুলে থেকে ১৯৪৫ সালে এসএসসি পাশ করে ভর্তি হন ভারতের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর কলেজে। সেখান থেকে ১৯৪৭ সালে এইচএসসি পাশ করার পর বিএ শ্রেণিতে ভর্তি হন একই কলেজে। তারপর বিভিন্ন কারণে পড়াশোনা হয়নি শিক্ষক সন্তোষ কুমারের, কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি।
বেছে নেন শিক্ষকতার জীবন। ১৯৫৭ সালে শিক্ষকতা শুরু করেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার প্রথম স্কুল মিরপুর পালইট উচ্চ বিদ্যালয়ে। এলাকার মানুষকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার জন্য স্কুলপ্রতিষ্ঠার বেশ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের অনুরোধে শিক্ষকতায় যোগদান করেন তিনি। জীবনের উপর কোনো অভিযোগ নেই তার। গত ২১ এপ্রিল এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আগে মিরপুর থেকে শিক্ষার্থীদের এসএসসি পরীক্ষা দিতে কুষ্টিয়ায় যেতে হতো। তারপর অনেক চেষ্টার পর আমার হাত দিয়ে মিরপুরে পরিক্ষাকেন্দ্র হয় ১৯৮০ সালে। পরিক্ষাকেন্দ্র আনতে খুব কষ্ট করতে হয়েছিলো আমাকে।
বন্ধুদের খুঁজে বেড়াই প্রতিদিনি কিন্তু এখন আর কাউকেই দেখি না। তাই মাঝে মাঝে মনটা একটু খারাপ হয়। নিঃসঙ্গ জীবন কাটে অনেকটা সময়।
শিক্ষকতা পেশায় কেন আসলেন এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার আগে থেকেই শিক্ষকতা পেশা ভালো লাগতো। শিক্ষকতা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন ও পেশা। এই পেশায় ছিলাম বলে আজও মানুষ আমাকে খোঁজে।
জীবনের সফলতার কথা জানতে চাইলে তিনি জানান, এইতো কিছুদিন আগের কথা, মন্দিরে একটা অনুষ্ঠানে ছিলাম আমার কাছে খবর এলো আমার এক ছাত্র এসেছে আমাকে বাড়িতে যেতে হবে। বাড়িতে এসে দেখি অনেক পুলিশ। আমার ছাত্র হাইকোর্টের জজ হয়েছে। আমার কাছে দোয়া নিতে এসেছে। আমার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করছে। সেই সময় খুব ভালো লাগছিলো।
আমার অনেক ছাত্ররা অনেক জায়গায় আছে। সবার কথাতো আর মনে নেই। সবাই আমার খোঁজখবর নেওয়ার হয়তো সময় পায় না। কিন্তু আমি জানি তারা আমাকে স্মরণ করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন বড় কর্মকর্তা, লক্ষীপুর জেলার ডিসি, তারা সবাই আমার খোঁজ খবর নেয়। আমার বাড়িতে যখন আসে তখন বুকটা আনন্দে ভরে ওঠে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।