বিচারপতি অপসারণ: মন্ত্রিসভায় নীতিগত অনুমোদন
নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল, ২০১৬
প্রিন্টঅঅ-অ+
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে রেখে সংশ্লিষ্ট আইনের খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
আজ সোমবার (২৪ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানান, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বিচারক (তদন্ত) আইন, ২০১৬’ শীর্ষক আইনের খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
সর্বশেষ সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীতে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণে জাতীয় সংসদকে ক্ষমতা দেওয়া হয়।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের নিয়মটি সংবিধানে এ পর্যন্ত তিনবার পরিবর্তন করা হয়েছে। বাহাত্তরের সংবিধানে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা ছিল সংসদের হাতে। সংবিধানের ৯৬ (২) অনুচ্ছেদে বলা ছিল, প্রমাণিত অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের জন্য দুই-তৃতীয়াংশ সাংসদের ভোটে সমর্থিত প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণ করা যাবে। আর ৯৬ (৩) অনুচ্ছেদে বলা ছিল, অপসারণের প্রস্তাব সম্পর্কিত পদ্ধতি এবং বিচারকের অসদাচরণ বা অসামর্থ্য সম্পর্কে তদন্ত ও প্রমাণের পদ্ধতি সংসদ আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। তবে ওই অনুচ্ছেদ অনুসারে আইন আজ পর্যন্ত প্রণীত হয়নি।
এর মধ্যে ১৯৭৫ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীতে ৯৬ (২) অনুচ্ছেদ সংশোধন করে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সরাসরি রাষ্ট্রপতির হাতে দিয়ে দেওয়া হয়। আর আইন-সংক্রান্ত ৯৬ (৩) অনুচ্ছেদটি বিলুপ্ত করা হয়।
১৯৭৭ সালে বিচারকদের অপসারণের পদ্ধতিতে আবার পরিবর্তন আসে। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের এক সামরিক আদেশে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে দেওয়া হয়। এরপর ১৯৭৯ সালে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে এই বিধান সংবিধানে ঢুকে যায়। ২০১০ সালে আপিল বিভাগ পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করলেও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে অনুমোদন দিয়েছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালে ১৫তম সংশোধনীতে বাহাত্তরের সংবিধানের অনেক বিষয় ফিরিয়ে আনা হলেও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বাদ পড়েনি।
প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগের দুজন জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের ক্ষমতা ছিল কোনো বিচারকের সামর্থ্য বা আচরণ সম্পর্কে তদন্ত করার। কাউন্সিলের তদন্ত প্রতিবেদনে যদি বিচারককে অপসারণের সুপারিশ করা হয়, তবে রাষ্ট্রপতি তাঁকে অপসারণ করতে পারতেন।
২০১২ সালে তৎকালীন হাইকোর্ট বিভাগের ও পরে আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে বিচারপতিদের অপসারণের পদ্ধতি আবার সংসদের হাতে ফিরিয়ে আনার দাবি ওঠে। ওই সময়ে স্পিকার ও বর্তমানে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে নিয়ে বিচারপতি শামসুদ্দিনের একটি মন্তব্যের সূত্র ধরে কয়েকজন সংসদ সদস্য তাঁকে অপসারণের দাবি তোলেন। এরপর ২০১৪ সালে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বাহাত্তরের সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ পুনঃস্থাপন করা হয়। এর মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা আবার সংসদের হাতে ফিরে যায়, সেই সঙ্গে অভিযোগ তদন্তের জন্য আইন প্রণয়নের দাবি ওঠে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।