সাংবাদিক পরিচয়ে রাজনৈতিক নেতারা!
নিজেদের পরিচয়ে নয়, সাংবাদিক পরিচয়ে ভোটের মাঠে নামছেন রাজশাহীর তানোর উপজেলার অন্তত ২৫ জন রাজননৈতিক নেতাকর্মী। এরই মধ্যে উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে তাদের সাংবাদিক হিসেবে পর্যবেক্ষকের কার্ডও দেওয়া হয়েছে। তবে কার্ড পাননি উপজেলার পেশাদার ৯ সাংবাদিক। এতে ক্ষুদ্ধ স্থানীয় সাংবাদিকরা।
অভিযোগ উঠেছে, রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাচন অফিসার এসব কার্ড ইস্যু করেছেন। বিচার বিবেচনা না করেই কার্ডগুলো ইস্যু করেন তিনি। শনিবার তৃতীয় ধাপের তানোরের সাত ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচনে ভোটগহন অনুষ্ঠিত হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নির্বাচন পর্যবেক্ষণে কমিশন থেকে সাংবাদিকদের জন্য ৩১টি কার্ড বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু নিয়ন আনুযায়ি আবেদন করেও শুক্রবার সকালে এসব পর্যবেক্ষণ কার্ড পাননি ৯ জন পেশাদার সাংবাদিক।
আবেদনকারী সংবাদিকরা হলেন, তানোর উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক নতুন প্রভাতের মামুনুর রশিদ মামুন, সহসভাপতি ও দৈনিক নয়াদিগন্তের লুৎফর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক করতোয়ার ইমরান হোসাইন, যুগ্ম সম্পাদক ও দৈনিক রাজবার্তার আবদুস সবুর, অর্থ সম্পাদক দৈনিক সংগ্রামের ডা. আবদুল হান্নান, সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও দৈনিক চাঁপাইচিত্রের সোহানুল হক পারভেজ, প্রেসক্লাবের নির্বাহী সদস্য ও দৈনিক রাজশাহীর আলোর সারোয়ার হোসেন, দৈনিক ভোরের ডাকের মিজানুর রহমান ও দৈনিক আজকালের খবরের আলিফ হোসেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এসব পেশাদার সাংবাদিকরা পর্যবেক্ষণ কার্ড না পেলেও আওয়ামী লীগের অন্তত ২৫ জন স্থানীয় নেতা ও তাদের কর্মী সাংবাদিক পরিচয়ে ওই কার্ড পেয়েছেন। এরা হলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ-আল-মামুন। তিনি স্বত:কণ্ঠ পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ কার্ড অফিস থেকে সংগ্রহ করেছেন। সেই সঙ্গে ঢাকা-মেট্রো-ছ-৮১০৯ নম্বর মাইক্রোবাসের অনুমোদন নিয়েছেন। এছাড়া উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের হোসেন তিনি সুবর্ণ সংবাদ পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয়ে পর্যবেক্ষণ কার্ড নির্বাচন অফিস থেকে সংগ্রহ করেছেন।
অপরদিকে, তানোর পৌর যুবলীগের সভাপতি রাজিব সরকার হিরো তিনিও ওই সুবর্ণ সংবাদ পত্রিকার সাংবাদিক নামে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ কার্ড পেয়েছেন। সেই সঙ্গে উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি আবদুল মালেক সাংবাদিক পরিচয়ে নির্বাচন অফিস থেকে পর্যবেক্ষণ কার্ড সংগ্রহ করেছেন। জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা তিনি সকালের চিত্র পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয়ে পর্যবেক্ষণ কার্ড সংগ্রহ করেছেন। সাংবাদিক পরিচয়ে কার্ড পেয়েছেন তাদের অনুসারীরাও। এমনকি কার্ড মিলেছে মোটরসাইকেল গ্যারেজ মিস্ত্রি মনারও। শনিবারের নির্বাচনে তারা সাংবাদিক পরিচয়ে মাঠে থাকবেন।
সাংবাদিক পরিচয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঠে নামায় সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শংকা প্রকাশ করেছেন বাঁধাইড় ইউনিয়নের বিএনপি চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরুজ্জামান হেনা। তিনি বলেন, তারা সাংবাদিক পরিচয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে পারেন না। এটি অনৈতিক। রিটার্নিং অফিসার তাদের পক্ষ নেওয়ায় এমনটি হয়েছে। বিষয়টি আইন-শৃংখলা বাহিনীকে খতিয়ে দেখারও জন্য অনুরোধ জানান তিনি।
এনিয়ে যোগাযোগ করা হলে অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেন রিটার্নিং অফিসার রবিউল আলম। তবে তিনি দাবি করেন, তারা বিধি মেনেই এসব কার্ড ইস্যু করেছেন। পেশাদার সাংবাদিকদের কার্ড না দেওয়ার বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
তবে সাংবাদিক পরিচয়ে রাজনৈতিক নেতাদের কার্ড নেওয়া উচিৎ হয়নি বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মামুনুর রশিদ। তিনি বলেন, রিটানিং অফিসার যাচাই-বাছাই না করেই এসব কার্ড ইস্যু করেছেন। এনিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহারও হয়েছে বলে জানান তিনি।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।