- হোম
- >
- কৃষিজ ও প্রাণিজ
- >
- দিনাজপুরে লিচুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা
দিনাজপুরে লিচুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা
লিচু হলো বিশ্বের সবচেয়ে রোমান্টিক ফল। প্রায় দুই হাজার বছর ধরে ফলটি এ মর্যাদা পেয়ে আসছে। বাংলাদেশে লিচু খ্যাত জেলা দিনাজপুর। এ জেলায় এবারও লিচুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। জেলার প্রতিটি লিচু গাছে মুকুল থেকে থোকায় থোকায় লিচুর সমারোহ দেখা যাচ্ছে বাগানগুলোতে। তাই মধুর মাসে লিচু বাম্পার ফলন পাওয়া যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে, খরার কারণে গাছ থেকে লিচুর গুটি ঝরে পড়া রক্ষা করতে দিন-রাত বাগানে সেচ দিচ্ছেন বাগান মালিকরা। সেই সঙ্গে পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষায় কীটনাশক স্প্রে করছেন তারা। সব মিলিয়ে লিচু চাষী ও বাগান মালিকরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।
দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক গোলাম মোস্তফা জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার লিচুর বাম্পার ফলন হবে। জেলার ১৩টি উপজেলায় এবার ৪ হাজার ১শ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ করা হয়। উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ২৬ হাজার মেট্রিক টন। ২/৩ দিনের মধ্যে পাকা লিচুর রং বদলে যায়। কিন্তু সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বিদেশে পাঠানো সম্ভব হয় না।
তিনি আরো জানান, এ লিচু বিখ্যাত জেলাটির ১৩টি উপজেলাতেই লিচু চাষ বেড়ে চলছে। প্রতি বছরই লিচু চাষের জমির পরিমাণ বাড়ছে। উৎপাদনের জন্য অনুকূল পরিবেশ থাকায় এবার মধুমাসের ফল লিচুর বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে, জানিয়েছেন তিনি।
এ দিকে লিচু বিখ্যাত এ অঞ্চলের লিচু বাগান মৌসুমের পূর্বেই মৌসুমী ব্যবসায়ীরা ক্রয় করে নিয়ে পরিচর্যা করছেন। মৌসুমী ব্যবসায়ী বিশেষ করে মুন্সীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, নেত্রকোনা, গাজীপুর, ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারসহ বিভিন্ন জেলা থেকে এসে অনেকে আগাম বাগান কিনে রেখেছেন বলে জানা যায়।
জেলা কৃষি অধিদপ্তরের ফল বিশেষজ্ঞ কৃষিবিদ নজরুল ইসলাম জানান, দিনাজপুরে প্রসিদ্ধ বেদেনা লিচু সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নে ব্যাপকভাবে হয় বলে জনশ্রুতি রয়েছে। আউলিয়াপুর ইউনিয়নে কসবা, উলিপুর, মাসিমপুর, খানপুর, দাইনুর, মহদেবপুর, রসুলপুর, চেরাডাঙ্গী, শিকদারহাট এসব এলাকা বেদেনা লিচুর জন্য প্রসিদ্ধ। বেদেনা লিচু বাজারে উঠার আগেই বাগান থেকেই পাইকারি দরে বিক্রি হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মৌসুমের শুরুতেই বেদেনা লিচু ক্রয় করে নিয়ে যায়। অন্যান্য জাতের লিচুর মধ্যে হাইব্রিড চায়না থ্রি, চায়না ফোর, দেশি বোম্বে ও মাদ্রাজী লিচুর বাগান জেলার ১৩টি উপজেলাতেই গড়ে উঠেছে। এই সব উপজেলায় এবার ৪ হাজার ১শ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ করা হয়। এর মধ্যে প্রায় ৬৬৭টি লিচুর বাগান ও অধিকাংশ বাড়িতেই লিচুর গাছ রয়েছে, বলে জানান তিনি।
লিচু সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় প্রতি বছরই ব্যাপকহারে লিচু নষ্ট যাচ্ছে। দিনাজপুরে ফল এবং শাক-সবজি সংরক্ষণের জন্য কোনো বিশেষায়িত হিমাগার না থাকায় প্রতি বছর লিচু ব্যবসায়ীরা এই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। চেম্বার থেকে উদ্যোক্তাদের বিশেষায়িত হিমাগার তৈরির জন্য অনুপ্রাণিত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন, দিনাজপুর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মোসাদ্দেক হুসেন।
এদিকে বেশ কয়েকজন লিচু চাষীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতবারের তুলনায় এবারও লিচুর ফলন ভালো হবে। বৃষ্টি কম হওয়ায় এবং রোদের কারণে কিছুটা গুটি ঝরে পড়ে গেছে। তারপরও লিচু গাছে যে পরিমাণ গুটি রয়েছে তাতে ফলন কম হবে না। আগামী জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথমেই লিচু বাজারে উঠবে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে এবং পরিবহন সমস্যা না হলে গতবারের লিচুর লোকসান পুষিয়ে নেওয়া যাবে। সেই সঙ্গে এ দিনাজপুরের লিচু পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোতে রপ্তানি করা হবে, বলে আশাবাদ করছেন এ অঞ্চলের লিচু চাষীরা।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।