আজ বিশ্ব ধরিত্রী দিবস
নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রকাশ : ২২ এপ্রিল, ২০১৬
প্রিন্টঅঅ-অ+
আজ বিশ্ব ধরিত্রী দিবস। বিশ্বের প্রকৃতি ও পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা ও ভালোবাসা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এবং পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখতে প্রতিবছর ২২ এপ্রিল দিবসটি পালিত হয়। বিশ্ব ধরিত্রী দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘পৃথিবীর জন্য বৃক্ষ’।
১৯৭০ সনের এই দিনে মার্কিন সিনেটর গেলর্ড নেলসন ধরিত্রী দিবসের প্রচলন শুরু করেন। পরবর্তীতে এটি ১৯৯০ সালে আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হয় এবং ১৪১টি জাতি দ্বারা আয়োজন করা হয়।
আমাদের মনে রাখতে হবে প্রকৃতি যখন বিরূপ হয় মানুষ তখন অসহায় হয়ে পড়ে। প্রকৃতিকে কাবু করার চেষ্টা মানুষের মধ্যে অনেকদিন থেকেই। সবক্ষেত্রে সফল হয়েছে এমন কথা বলা যাবে না। আবার উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছে এমনও বলা যাবে না। তেমনি একটা অবস্থায় আবার এসেছে ধরিত্রী দিবস। মানুষকে নতুন করে ভাবতে হবে আমরা প্রকৃতির সন্তান। মাতৃশ্রদ্ধা যেন পায় প্রকৃতি।
পৃথিবীর অনেক দেশেই সরকারিভাবে এই দিবসটি পালন করা হয়। উত্তর গোলার্ধের দেশগুলিতে বসন্তকালে আর দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলিতে শরতে ধরিত্রী দিবস পালিত হয়।
সিনেটর গেলর্ড নেলসন ১৯৭০ সালে যে আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন তার নাম 'Environmental Teach-In'। এ আন্দোলনের প্রথম সম্মেলনে প্রায় ২০ মিলিয়ন লোককে যুক্ত করেছিলেন নেলসন। কিন্তু দিবস উদযাপন, সভা-সেমিনার আয়োজন, আন্দোলনে অংশগ্রহণের ফল বিশ্ববাসী কী পেয়েছে? দিনে দিনে এ ধরিত্রীর আরো বিপর্যয় !!!। বিশ্বের অস্তিত্বের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি কার্বনের নিঃসরণ না কমে বরং বাড়ছে। এ গ্যাস নিঃসরণকারীদের তালিকায় উন্নত বিশ্বের পাশাপাশি যোগ হয়েছে চীন, ভারত আর ব্রাজিলের মতো উন্নয়নশীল দেশ। ফলে বিপর্যয় আরো ঘনীভূত হচ্ছে। হাইতিতে ভূমিকম্পে মারা গেল দুই লাখ ৩০ হাজার মানুষ। তার পরপরই চিলি, ফিলিপাইন আর সবশেষ চীনে ভূমিকম্পে মারা যায় কয়েক হাজার মানুষ। কয়েক বছর আগে ভূমিকম্প ও সুনামি আঘাতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় জাপান। মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র।
বিশ্বে এখন এই যে ঘন ঘন ভূমিকম্প, খরা, অতিবৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢল এর সবই আমাদের নিজেদের ডেকে আনা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর সবই হচ্ছে বিশ্বের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায়। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে বরফ গলে সাগরের উচ্চতা বাড়ছে। ফলে ইতিমধ্যে তলিয়ে গেছে বিশ্বের বহু জনপদ। আর এই ঝুঁকির মধ্যে থাকা দেশগুলোর শীর্ষে আছে আমাদের এই বাংলাদেশ। কিন্তু এ তাপমাত্রা বৃদ্ধি সম্পর্কে আমাদের দেশের মানুষ কতটা সচেতন? আমাদের দেশে আজ পাহাড় কেটে বসতি গড়ে তোলা হচ্ছে, বনের গাছ কেটে উজাড় করা হচ্ছে, সমুদ্র সৈকতে হচ্ছে আবাসিক এলাকা।
বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শহরের দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ঢাকা শহরের মানুষ হুহু করে বাড়ছে। আর এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বাড়ি-গাড়ি। গাড়ির তালিকায় বাসের তুলনায় প্রাইভেট কারের পরিমাণ ১০ গুণের বেশি।
গবেষণায় দেখা যায়, কোনো শহরে প্রাইভেট কারের পরিবর্তে যদি ট্রেন ও বাসের মতো Mass transport ব্যবহার করা যায়, তাহলে সেখানে ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস নিঃসরণ কমানো সম্ভব। কিন্তু আমাদের এ শহরে বাস-ট্রেন কমছে আর প্রাইভেট কার বাড়ছে। তাও আবার রিকন্ডিশনড, যা পরিবেশের জন্য ভয়ানক ক্ষতিকর। এ অবস্থায় আমাদের এই আবাসভূমিকে বাঁচাতে আবারও জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশ এবিষয়ে যতটা সোচ্চার আমরা ঝুঁকির শীর্ষে থেকেও ততটাই নমনীয়। আমাদের আন্দোলন বিশ্ববিদ্যালয়ের হল দখল, রাজনীতির মাঠ দখল আর সবশেষে ক্ষমতা দখলের। কিন্তু ক্ষমতায় বসতে গেলে আগে দেশকে বাঁচাতে হবে। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে দেশকে বাঁচাতে এক দিকে যেমন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে জোটবদ্ধ আন্দোলন দরকার, তেমনি দরকার নিজের দেশের প্রত্যেক নাগরিককে এ ব্যাপারে সচেতন করে তোলা। এবারের ধরিত্রী দিবসে সেটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।