‘সাংগ্রেং’ উৎসবের শেষ দিনে রাখাইন পল্লীতে উচ্ছ্বাস
তারুণ্যের বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাসের মধ্যদিয়ে শেষ হলো কক্সবাজারের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী রাখাইন সম্প্রদায়ের ৩ দিনের বর্ষবরণ উৎসব ‘সাংগ্রেং পোয়ে’। স্থানীয়দের কাছে ‘পানিখেলা’, দেশবাসীর কাছে ‘জলকেলি’ উৎসব নামে পরিচিত এ উৎসবটি রাখাইন সম্প্রদায়ের বৃহত্তম সামাজিক উৎসব। মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) রাখাইন সম্প্রদায়ের এই ৩ দিনের বর্ষবরণ উৎসব শেষ হয়।
জানা যায়, কক্সবাজারের রাখাইন সম্প্রদায় প্রতিবেশী বার্মিজদের সাথে একই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী রাখাইন নববর্ষ পালন করে। এ বছর বাংলাদেশের প্রায় অর্ধ লক্ষ রাখাইন প্রতিবেশী মিয়ানমারের আরাকানে বসবাসকারী রাখাইনদের সাথে একই সময়ে ১৩৭৮ রাখাইন অব্দ উদযাপন করে। বার্মিজরাও একই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বার্মিজ অব্দ উদযাপন করে।
চলতি বছর কক্সবাজার শহর ও উপজেলায় প্রায় ৪০টি প্যান্ডেলে চলেছে ‘সাংগ্রে পোয়ে’ উৎসবের আনন্দ যজ্ঞ। শুধু রাখাইন সম্প্রদায় নয়, দেশি বিদেশি পর্যটকসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন এই উৎসব দেখতে যায়। তিনদিন ধরে চলা উৎসবের শেষদিন মঙ্গলবার ছিল রাখাইন পল্লীতে তরুণ-তরুণীদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস।
রাখাইন সম্প্রদায়ের নেতা উবাচং জানান, চৈত্র সংক্রান্তি থেকে রাখাইনদের বর্ষবরণ উৎসব শুরু হয়। এ উৎসব চলে সপ্তাহজুড়ে। উৎসবের প্রথম তিনদিন ধর্মীয় এবং শেষদিন সামাজিক উৎসবের মাধ্যমে এই উৎসব উদযাপন করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্ব ‘পানি খেলা’ বৈশাখের চতুর্থদিন থেকে ষষ্ঠদিন পর্যন্ত চলে।
উৎসবস্থল ঘুরে দেখা যায়, শহরের গোলদীঘির পাড়, ফুলবাগ, টেকপাড়া, ক্যাংপাড়া, হাঙ্গরপাড়াসহ রাখাইন পল্লীর বিভিন্ন এলাকায় এ বছর প্রায় ৪০টি প্যান্ডেলে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। উৎসব চলাকালে রাখাইন তরুণ-তরুণীরা নেচে গেয়ে, একে অপরের শরীরে জল ছিটিয়ে উৎসব পালন করে। এ সময় তরুণদের বিভিন্ন দল বাদ্যযন্ত্র নিয়ে নাচতে নাচতে বিভিন্ন প্যান্ডেলে গিয়ে তরুণীদের পানি ছিটিয়ে দেয়।
চৌফলদণ্ডির তরুণ ইউ মংথিন রাখাইন বলেন, ‘আমরা এই উৎসবের জন্য অপেক্ষায় থাকি। ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সেজে জল ছিটিয়ে পুরোনো বছরের সব গ্লানি ভুলে নতুন বছরকে বরণ করে নেই। এবারও হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্নে সবাই নেচে গেয়ে আনন্দ-উল্লাসে নতুন বছরকে বরণ করেছি।
কক্সবাজার সিটি কলেজের অধ্যক্ষ ক্যাথিং অং জানান, রাখাইন অব্দের ১৩৭৭ সালকে বিদায় এবং নতুন ১৩৭৮ সালকে বরণে আয়োজিত ‘সাংগ্রে পোয়ে’ সব সম্প্রদায়ের সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়। পর্যটন শহর হিসেবে দেশি-বিদেশি পর্যটকরাও রাখাইন সম্প্রদায়ের এ অনুষ্ঠানে ভিড় জমিয়েছেন। আমরা সুষ্ঠ পরিবেশে বর্ষবরণ করতে পেরে আনন্দিত।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।