ট্রেনের ছাদে উত্তরের কৃষি শ্রমিকরা ছুটছেন দক্ষিণে
এটি কোনো ঈদ কিংবা ধর্মীয় উৎসবের জন্য বাড়ি ফেরার দৃশ্যও নয়। জীবন-জীবিকার টানে প্রতিদিন দল বেঁধে ট্রেনে চড়ে কৃষি শ্রমিকরা ছুটছে দক্ষিণে। তারা যাচ্ছেন, মাস খানেকের জন্য বাড়িতে মা-বাবা, স্ত্রী, পুত্র, কন্যাকে রেখে। ট্রেনের ভেতরে পা রাখার মতো কোনো জায়গা নেই। তারপরও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার কৃষি শ্রমিকরা রোজাগারের আসায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে চড়ে কাজের সন্ধানে ছুটছে দক্ষিণের জনপদে।
জানা গেছে, দিনাজপুরসহ বৃহত্তর রংপুর বিভাগের কয়েকটি জেলার মানুষ ঠিক এ সময় প্রতি বছরের মত এবছরেও কাজের সন্ধানে কাস্তে হাতে, ব্যাগে কিছু কাপড়-চোপড় নিয়ে ছুটে যান দক্ষিণে। ওই অঞ্চলে বিভিন্ন স্থানে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে আবার কোন কোন স্থানে সপ্তাহখানেকের মধ্যে ধান কাটা মাড়াই শুরু হতে পারে।
ট্রেন যাত্রী কৃষি শ্রমিক রুস্তম আলী (৩৫) বলেন, গত বছর সান্তাহার ও নওগাঁয় যে সব গৃহস্থ বাড়িতে কাজ করেছিলাম তাদের সবার মোবাইল নম্বর নিয়ে এসেছি। ধান পেকেছে জানিয়ে ফোন করায় এবারও নওগায় যাচ্ছি। রুস্তম আলীর দলে শ্রমিকের সংখ্যা ১৪। সে জানালো গত বছর তারা গড়ে প্রতিদিন তারা খরচ বাদে ৬ থেকে ৭ শত টাকা আয় করেছে। এবারও সে আশাতেই যাচ্ছি। এতে কিছুটা হলেও সংসারের অভাব দূর হবে।
সোমবার (১৮ এপ্রিল) সকাল ১১টায় পার্বতীপুর রেল স্টেশনের ৪নং প্লাটফরমে কথা হয় নীলফামারী জেলার কিশোরীগঞ্জ থেকে আসা আঃ লতিফের সঙ্গে। তিনি বলেন, অভাব-অনটনের সংসারে বৃদ্ধ বাবা-মা ও সন্তানের মলিন মুখের দিকে তাকিয়ে দু’পয়সার উপার্জনের আশায় রোজগার করতে যাচ্ছি। এভাবে অনেকেই জানিয়েছেন তাদের নানা দুঃখ দুর্দশার কথা।
এসময় উত্তরাঞ্চলে মাঠে কোন কাজ না থাকায় কৃষি মজুররা দল বেধেঁ কাজের সন্ধানে ছুটে যাচ্ছে দক্ষিণের বিভিন্ন জেলায়। বিশেষ করে পাঁচবিবি, জয়পুরহাট, আক্কেলপুর, তিলকপুর, সান্তাহার, আদমদীঘি, আত্রাই, নওগাঁ, নাটোর ও বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলায় প্রভৃতি এলাকায়।
কৃষি শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের জন্য দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে যাতায়াতের সহজ ও সাশ্রয়ী মাধ্যম হচ্ছে ট্রেন। তাই উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ শ্রমিক খুলনা, রাজশাহী ও ঢাকাগামী বিভিন্ন মেইল ও আন্তঃনগর ট্র্র্র্রেনে ভ্রমণ করে থাকে।
কিন্তু এ সময় শ্রমিকের ঢল নামায় ট্রেনে আসন পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। তাই তারা বেশীর ভাগ সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে চড়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করে থাকে।
শ্রমিকরা জানান, দক্ষিণে আগাম ইরি-বোরো জাতের ধান কাটা মাড়াই শুরু হয়। আর সেখানকার কাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে তাদের নিজ এলাকায়ও ধান কাটা মাড়াই শুরু হওয়ার সময় হয়। তখন তারা নিজ এলাকায় ফিরে আসেন।
পার্বতীপুর মন্মথপুর গ্রামের কৃষক ভরত চন্দ্র জানান, দেশে এখন আর কোনো মানুষই বেকার বসে থাকেন না। বছর জুড়ে দেশের কোন না কোন স্থানে ধান ভুট্টা, গম, আলু, কলা, কালাই, শাক সবজি, ক্ষেতে কাজ লেগেই থাকে। কখনো কাজের অভাব দেখা দিলে হয় তারা রিক্সা ভ্যান চালায়, নাহলে হাট বাজারে কিংবা গ্রামে গ্রামে বিভিন্ন পণ্য ফেরি করে জীবিকা নির্বাহ করে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।