- হোম
- >
- শিল্প-সাহিত্য
- >
- মার্কেস: নিঃসঙ্গতার অসীম বছরে
মার্কেস: নিঃসঙ্গতার অসীম বছরে
নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল, ২০১৬
প্রিন্টঅঅ-অ+
গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস (স্পেনীয় ভাষায় তাঁর পূর্ণ নাম Gabriel José de la Concordia García Márquez গাব্রিয়েল্ খ়োসে দে লা কোঙ্কোর্দিয়া গার্সিয়া মার্কেস্, (জন্মঃ ৬ মার্চ, ১৯২৭), যিনি গাবো নামেও পরিচিত, একজন কলম্বীয় সাহিত্যিক, সাংবাদিক, প্রকাশক ও রাজনীতিবিদ ছিলেন। সাহিত্যের পাশাপাশি মার্কেজ ছিলেন প্রখর রাজনীতি সচেতন। সাবেক কিউবান প্রেসিডেন্ট ফিদেল ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে তার বন্ধুত্ব সুবিদিত। গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস জীবনের বেশিরভাগ সময় বসবাস করেছেন মেক্সিকো এবংইউরোপে।
এই বিশ্ব বিখ্যাত কলম্বিয়ান ঔপন্যাসিক বিংশ শতাব্দীর শেষার্দ্ধের সবচেয়ে আলোচিত, সবচেয়ে প্রভাবশালী লেখক হিসেবে আবির্ভুত হয়েছিলেন। জীবনের শেষ দুই যুগ তিনি ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচেছিলেন। এ সময় তাঁর লেখালিখি কমে আসে। জনসংযোগ ও ভ্রমণ হয়ে পড়ে সীমিত। এমনকী ২০০৪-এ আত্মজীবনীর প্রথম খণ্ড লিভিং টু টেল আ টেইল প্রকাশের পর পরিকল্পিত ২য় এবং ৩য় খণ্ড আর রচনা করা হয়ে ওঠেনি। তিনি দূরারোগ্য লিম্ফেঠিক ক্যান্সারে ভুগছিলেন। ২০১২'র জুলই থেকে তিনি স্মৃতি বিনষ্টিতে আক্রান্ত হন।
সাহিত্যবিশারদদের মতে তিনি হোর্হে লুইস বোর্হেস (Jorge Luis Borges) এবং হুলিও কোর্তাসারের (Julio Cortázar) সাথে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ দক্ষিণ আমেরিকান কথাসাহিত্যিক। তিনি একই সঙ্গে জনপ্রিয় এবং মহৎ লেখক হিসেবে চার্লস ডিকেন্স, লেভ তলস্তয় ও আর্ণেস্ট হেমিংওয়ের সঙ্গে তাঁর নাম এক কাতারে উচ্চারিত হতো। ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে নোবেল পুরস্কার প্রদানের সময় সুইডিশ একাডেমী এমত মন্তব্য করেছিল যে তাঁর প্রতিটি নতুন গ্রন্থের প্রকাশনা বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার মতো। জনমানুষের সঙ্গে রাজনৈতিক যোগাযোগের কারণে তিনি ছিলেন বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ। কিউবার নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে তার দোস্তি ছিল প্রবাদপ্রতীম।
মার্কেস ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে আইন পড়া বন্ধ করে এল এস্পেক্তাদোর সংবাদপত্রে সাংবাদিকতা শুরু করেন। তাঁর প্রথম ছোটগল্প লা তের্সেরা রেসিগ্নাসিওন এল এসপেক্তাদোর পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। গার্সিয়া মার্কেস তাঁর পেশাজীবন শুরু করেন আঞ্চলিক সংবাদপত্রে সাংবাদিকতার মাধ্যমে। তিনি বারানকিইয়া (Barranquilla) শহরের এল এরাল্দো (El Heraldo) পত্রিকায় রিপোর্টার এবং কার্তাহেনা (Cartagena) শহরের এল উনিবের্সাল (El Universal) পত্রিকায় সম্পাদকের কাজ করেন। এই সময়েই তিনি অপ্রচলিত লেখক এবং সাংবাদিকদের দল হিসেবে পরিচিত বারানকিইয়া গ্রুপে যোগ দেন। এই প্রতিষ্ঠান থেকেই তিনি তাঁর পরবর্তী সাহিত্যজীবনের অনুপ্রেরণা লাভ করেন। পরবর্তীকালে তিনি কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোতায়আসেন এবং এল এস্পেক্তাদোর (El Espectador) পত্রিকায় কাজ করেন। পরবর্তীকালে তিনি রোম, প্যারিস, বার্সেলোনা, ক্যানসাস এবং নিউ ইয়র্কে একজন বিদেশী সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেন।
তাঁর প্রথম বৃহদাকার কাজ ছিল “দ্য স্টোরি অফ এ শিপরেক্ড সেইলর” (Relato de un náufrago রেলাতো দে উন্ নাউফ্রাগো), যা তিনি ১৯৫৫ সালে পত্রিকা ধারাবাহিক হিসেবে রচনা করেন। একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা এ বইয়ে ফুটে ওঠে কলম্বিয়ার নৌবাহিনীর একটি দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজের কাহিনী; জাহাজটি চোরাচালানির পণ্যের অতিরিক্ত ভারে ডুবে গিয়েছিল। বইটি নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়, কেননা এর কাহিনীর সাথে প্রকৃত ঘটনাটির সরকার কর্তৃক প্রকাশিত বিবরণের মিল ছিল না। সরকারি বিবরণীতে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে ঝড়ের কথা বলা হয়েছিল এবং জীবিত নাবিকদের বীরের মর্যাদা দেয়া হয়েছিল। এর ফলশ্রুতিতেই মার্কেসের বিদেশী সংবাদদাতা জীবন শুরু হয় কেননা দেশে তখন তিনি জেনারেল গুস্তাবো রোহাস পিনিয়ার (Gustavo Rojas Pinilla) চক্ষুশুল হয়ে গিয়েছিলেন। এই সিরিজটি পরবর্তীকালে একটি ১৯৭০ সালে প্রকাশিত হয় এবং অনেকে এটিকে উপন্যাস হিসেবেই গ্রহণ করেন।
গার্সিয়া মার্কেসের অনেক কাজ কল্পকাহিনী এবং বাস্তবধর্মী উভয় রূপেই পরিগণিত। “ক্রোনিকা দে উনা মুয়ের্তে আনুন্সিয়াদা” (Crónica de una muerte anunciada, ১৯৮১) পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিশোধপরায়ণ খুনের ঘটনা অবলম্বনে রচিত এবং “এল আমোর এন লোস তিয়েম্পোস দেল কোলেরা" (El amor en los tiempos del cólera, ১৯৮৫) গল্পে তাঁর অভিভাবকের আদালত জীবনের বর্ণনা রয়েছে। এই দুটি কাজ ছাড়াও তার অনেক কাজই “গাব্রিয়েল গার্সিয়ার বিশ্বে” সংঘটিত হয় যেখানে চরিত্র, স্থান এবং ঘটনাসমূহ বারবার বিভিন্ন বইয়ে পুনর্ঘটিত হতে দেখা যায়।
তাঁর সবচাইতে ব্যবসাসফল উপন্যাস "নিঃসঙ্গতার এক শতাব্দী" (Cien años de soledad সিয়েন আনিওস দে সোলেদাদ) সারা বিশ্বে প্রায় ১০ মিলিয়নেরও বেশি বিক্রি হয়। এতে বুয়েনদিয়া পরিবারের বেশ কিছু প্রজন্মের কাহিনী চিত্রিত হয় যাদের বাস দক্ষিণ আমেরিকার কল্পিত গ্রাম মাকোন্দোতে। এই বইটির জন্য তিনি ১৯৭২ সালে রোমুলো গ্যালাওস পুরস্কার জিতে নেন। তিনি ১৯৮২ সালে নোবেল পুরস্কার জয়লাভ করেন যার ভিত্তি হিসেবে তার ছোট গল্প এবং উপন্যাসকে বিবেচনা করা হয়।
১৯৯৯ সালে তার লিম্ফাটিক ক্যান্সার ধরা পড়ে এবং এই ঘটনা তার মধ্যে স্মৃতিকথা লেখার অনুপ্রাণনা সৃষ্টি কর্ ২০০০ সালে পেরুর দৈনিক লা রিপাবলিকা তার মৃত্যুর ভুল সংবাদ ছাপে।
২০০২ সালে তার তিন খণ্ডের আত্মজীবনীর প্রথম খণ্ড হিসাবে স্মৃতিগ্রন্থ বিবির পারা কোন্ত্রালা প্রকাশিত হয় যা স্পেনীয় ভাষাভাষীদের মধ্যেব্যাপক সাড়া ফেলে এবং বেস্টসেলারে পরিণত হয়। ২০০৩ এর নভেম্বরে এডিথ গ্রসম্যানের ইংরেজি অনুবাদ “লিভিং টু টেল দ্য টেল” প্রকাশিত হয় যা ছিল আরেকটি বেস্টসেলার। ২০০৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বোগোতা দৈনিক এল তিয়েমপো মার্কেসের একটি নতুন উপন্যাসের কথা ঘোষণা করে, যার নাম মেমোইরা দি মিস পুতাস ত্রিসতেস। প্রেমের এই উপন্যাসটি অক্টোবরে প্রকাশিত হয় এবং এর প্রথম সংস্করণের দশ লক্ষ কপি নিঃশেষিত হয়ে যায়। উল্লেখযোগ্য গার্সিয়া মার্কেস আর লিখছেন না ; তাঁর আত্মজীবনীর বাকী দুই অংশ প্রকাশের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস ও ফিদেল কাস্ত্রোর মধ্যকার বন্ধুত্ব বহুল বিদিত। মার্কেসকে দক্ষিণ আমেরিকান কিছু বৈপ্লবিক দলের প্রতি সহানুভূতিশীল মনে করা হয়। তিনি কলম্বিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতিরও একজন কঠোর সমালোচক। কলম্বীয় সরকার-দলীয় সমর্থকেরা তাঁর বিরুদ্ধে গেরিলা গ্রুপ, বিশেষ করে এফএআরসি ও ইএলএন-কে সাহায্য করার অভিযোগ করলেও এর কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তিনি টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্র পরিচালক রোদ্রিগো গার্সিয়ার বাবা।
১৭ এপ্রিল, ২০১৪ মেক্সিকোতে ৮৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী কলম্বিয়ান লেখক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ। পরিবারের পক্ষ থেকে এ খবর নিশ্চিত করা হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন মার্কেজ। সম্প্রতি জনসমক্ষে তাকে খুব কমই দেখা গেছে। তার পরিবারের পক্ষ থেকে টুইটারে প্রথম তার মৃত্যুসংবাদ জানানো হয় বলে জানিয়েছে বিবিসি।
গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজকে বিবেচনা করা হয় স্পেনিশ ভাষার সর্বকালের অন্যতম সেরা সাহিত্যিক হিসেবে। আর তার লেখা ‘ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ারস অব সলিচ্যুড’ বিবেচিত হয় বিশ্ব সাহ্যিতের অমূল্য রত্ন হিসেবে।স্প্যানিশ ভাষার বিশ্বজয়ী সাহিত্যিক মার্কেজ তার যাদুবাস্তব উপন্যাস 'শতবর্ষের নির্জনতা'র জন্য বিখ্যাত। ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত এই বইটি বিশ্বজুড়ে ৩ কোটি কপি বিক্রি হয়। ৩০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। স্পেনিশ সাহিত্যের আরেক দিকপাল ও নোবেল বিজয়ী চিলির পাবলো নেরুদার মতে সপ্তদশ শতকে মিগুয়েল সারভানতেসের লেখা ডন কুইক্সোটের পর মার্কেজের লেখা এই উপন্যাসটিই স্পেনিশ সাহিত্যের সবচেয়ে মহান সৃষ্টি। ১৯৮২ সালে তিনি নোবেল পুরস্কার পান।
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট হুয়ান ম্যানুয়েল সানতোস টুইটারে এই লেখকের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন। তিনি লিখেছেন সর্বকালের সেরা এই কলম্বিয়ানের জন্য শতবর্ষের নির্জনতা ও শোক।
তাৎক্ষণিকভাবে মৃত্যুর কারণ জানা না গেলেও সম্প্রতি তিনি ফুসফুস ও মুত্রাশয়ের ইনফেকশন জনিত কারণে মেক্সিকো সিটির একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
গত সপ্তাহে তাকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আনা হয়। তখন জানানো হয়েছিল, বয়সের কারণে মার্কেজের স্বাস্থ্য খুবই নাজুক। কলম্বিয়ার এই লেখক গত ৩০ বছর ধরে মেক্সিকোতে বাস করছেন।
শতবর্ষের নির্জনতা ছাড়া তার অন্য উপন্যাসগুলো হলো, কলেরার দিনগুলোতে প্রেম, গোলকধাঁধায় সেনাপতি ইত্যাদি। বাংলা ভাষায় তার অধিকাংশ লেখা অনূদিত হয়েছে।
পাঠকদের জন্য নিচে তাঁর বিদায়ী চিঠির অনুবাদ দেওয়া হলঃ
ঈশ্বর যদি মুহূর্তের জন্য ভুলে যায় যে আমি এক কাপড়ের পুতুল এবং আমাকে সে দান করে একটু জীবন, তাহলে যা ভাবছি তার সবটুকু হয়তো বলব না, তবে যা বলব-সেসব নিয়ে নিশ্চয় ভাবব।
যার যে মূল্য প্রাপ্য, তাকে সে মূল্য দেবো তার গুরুত্বের জন্য। ঘুমাবো অল্প, স্বপ্ন দেখব বেশি, কারণ প্রতি মিনিটে চোখ বন্ধ করা মানে ৬০ সেকেন্ড আলো থেকে বঞ্চিত হওয়া। হাঁটব, যখন সবাই দাঁড়িয়ে পড়বেন। জেগে উঠব, যখন সবাই ঘুমিয়ে থাকবেন। শুনব, যখন সবাই বলেন। উপভোগ করব ঠান্ডা চকলেট আইসক্রিম।
ঈশ্বর যদি আমাকে এক টুকরো জীবন দান করে, তাহলে একেবারে সাধারণ কাপড়চোপড় পরব, উবু হয়ে শুয়ে থাকব সূর্যালোকে, কেবল শরীরই নয়, আমার আত্মাকেও নেংটো করে দেব।
যদি আমার হৃদয় থাকে,তাহলে বরফের বিরুদ্ধে লিখব আমার যত ঘৃণা; আর অপেক্ষা করব কখন সূর্য আসে। ভ্যান গগের স্বপ্ন নিয়ে নক্ষত্র সম্পর্কে আঁকব বেনেদেত্তির একটি কবিতা। আর সেররাতের একটি গান হবে, চাঁদকে উৎসর্গীকৃত এক সেরেনাতা। কাঁথার আঘাত আর পাপড়ির মাংসল চুম্বন অনুভব করার জন্য গোলাপকে চোখের জলে ভিজিয়ে রাখব।
হে ঈশ্বর যদি আমার এক টুকরো জীবন থাকত, তাহলে মানুষকে যে আমি ভালোবাসি-সে কথা বলতে আমি একদিনের জন্যও ভুলব না। প্রত্যেক নারী-পুরুষকে বোঝাতে চেষ্টা করব যে তারা আমার প্রিয়, তারা যেন ভালোবাসার প্রেমে জীবন যাপন করেন।
বৃদ্ধ হলেই ভালোবাসাকে একপাশে সরিয়ে রাখতে হবে-যারা এ রকম ভাবেন, তাঁরা যে কত ভুল সেটা প্রমাণ করে দেখিয়ে বলতে চাই, প্রেমহীনতাই বৃদ্ধত্ব। শিশুকে দেব ডানা, যাতে সে উড়তে শেখে। আর বৃদ্ধদের শেখাব এই কথা যে বৃদ্ধত্ব নয়, বি্নৃতিই মৃত্যুর কারণ। আপনাদের কাছ থেকে আমি এত কিছু শিখেছি, জেনেছি, সবাই বাস করতে চাই পাহাড়ের চূড়ায়, কিন্তু সত্যিকারের সুখ এবড়ো-খেবড়ো পাহাড়ি পথে আরোহনের মধ্যে। সদ্যজাত কোনো শিশু যখন তার ছোট্ট হাতের মুঠোয় প্রথমবারের মতো বাবার আঙুল চেপে ধরে, তখন সে তা চেপে ধরে চিরকালের জন্য।
যা ভাবেন, তা সব সময় করবেন; যা অনুভব করেন, তা বলুন। যদি জানি যে আজই তোমাকে শেষবারের মতো ঘুমিয়ে থাকতে দেখব, তাহলে তোমাকে আমার গভীর আলিঙ্গন দেব আর ঈশ্বরের কাছে তোমার আত্মার সুরক্ষা প্রার্থনা করব। যদি জানতে পারি এটাই হবে তোমাকে দরজা দিয়ে শেষবারের মতো বেরিয়ে যেতে দেখা, তাহলে তোমাকে দেব আলিঙ্গন, চুমু আর আরও কিছু দেওয়ার কথা বলব। যদি জানি যে এটাই হবে তোমাকে শেষবারের মতো শোনা, তাহলে নিশ্চিতভাবে বারবার শোনার জন্য তোমার কণ্ঠের প্রতিটি শব্দ রেকর্ড করে রাখব। যদি জানি যে এগুলোই হচ্ছে তোমাকে দেখার শেষ মুহূর্ত, তাহলে বলব ‘তোমাকে ভালোবাসি! আগামীকাল আর কর্তব্যগুলো সঠিকভাবে পালনের জন্য জীবন আমাদের আরেকটি সুযোগ এনে দেয়। কিন্তু যদি আমি ভুল করি আর আজকের দিনটিই যদি আমার জীবনের শেষ দিন হয়, তাহলে বলব-তোমাকে এত ভালোবাসি, তোমাকে আমি কোনো দিনই ভুলব না।
তরুণ কিংবা বৃদ্ধ কারোর জন্যই আগামীকালটি নিশ্চিত নয়। হতে পারে আজই তুমি শেষবারের মতো দেখতে পাচ্ছ, যাকে তুমি ভালোবাসো। অতএব, আর অপেক্ষা না করে যা করার তা আজই করে নাও, যেহেতু আগামীকাল কখনো আসবে না। তখন ব্যস্ত থাকার কারণে শেষ আকাঙ্ক্ষাটি বলতে না পারার জন্য এবং একটি হাসি, একটু আলিঙ্গন আর একটি চুমুর জন্য সময় না পাওয়ার জন্য নিশ্চিতভাবেই বিলাপ করবে। যাদের ভালোবাসো তাদের তোমার কাছে রাখো; তাদের কানের কাছে গিয়ে বলো যে তাদের তোমার ভীষণ প্রয়োজন এবং তাদের তুমি ভীষণ ভালোবাসো। সব সময় তাদের সঙ্গে সুব্যবহার কোরো; ‘আমি দুঃখিত’, ‘আমাকে মাফ কোরো’, ‘দয়া করে’, ‘ধন্যবাদ’ এবং ভালোবাসার সব শব্দ বলার জন্য সময় রেখো।
তোমার গোপন ভাবনার জন্য তোমাকে কেউ স্মরণ করবে না। তোমার শক্তি আর জ্ঞান প্রকাশের জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করো। তোমার বন্ধুদের বুঝতে দাও যে তারা তোমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।