আমরা প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে চাই
মহিনউদ্দিন চৌধুরী লিটন
প্রিন্টঅঅ-অ+

আমরা প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে চাই! উনি কেন আমাদের সাথে দেখা করছে না! আমরা অনেক কষ্টে আছি। শুনবেন, এই অনুষ্ঠানে আসার ভাড়া আমার কাছে ছিলো না। আমি বাসার পাশের দোকান থেকে টাকা ধার করে এসেছি। এই অনুষ্ঠানের আয়োজক আপা, যখন আমাকে ফোন করেছে তখন আমি তাকে বলেছি আমার কাছে যাওয়ার ভাড়া নেই। উনি বলেছে আপনি আসুন আমি দেখবো। অনুষ্ঠানের বক্তারা তাদের আলোচনায় বলেছে, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রর গান মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহ, অনুপ্রেরণা, সাহস যুগিয়েছে। আমরাও মুক্তিযোদ্ধা কিন্তু কি পেলাম! সাংবাদিক বন্ধুরা লিখুন, আমাদের নিয়ে একটু লিখুন। আমরা যে কি করুন অবস্থার মধ্যে আছি এটা একটু লিখুন। আমরা প্রধান মন্ত্রীর সাথে দেখা করতে চাই। আমাদের কথা গুলো প্রধানমন্ত্রীকে একটু বলতে চাই।
এই কথা গুলো বলছেন গতকাল সন্ধ্যায় শিল্পকলায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীদের দেয়া সম্মননা অনুষ্ঠানে গীতিকার আবদুর জাব্বার। তিনি অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচক ছিলেন না। সম্মননা গ্রহণ করার সময় উপস্থাপককে বলে একটু সময় নিয়ে মাইকে দাঁড়িয়ে উপরোক্ত কথা গুলো বলছেন।
কিন্তু এই রকমতো হবার কথা ছিলো না ! ৭১ যুদ্ধে দেশের মানুষের আশা ছিলো দেশ যদি স্বাধীন হয় তাহলে সব মানুষ অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, কাজ পাবে-পাইনি! ক্ষুধা-দারিদ্র-বেকারত্ম বৈষম্য দূর হবে-হয়নি! পাকিস্তনের ২২ পরিবারের বিরুদ্ধে লড়াই হয়েছে, তারা চলে গেছে, এখানে নতুন করে অল্প কিছু ধনী পরিবার গড়ে উঠেছে। বেশীর ভাগ মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে।
জাব্বারের দেশের সূর্য সন্তান। তাদের কারণে দেশ স্বাধীন হয়েছে। তারা কেন কষ্ট করবে। আমাদের মহান স্বাধীনতা ও সার্বভৌম ভূখণ্ড, বাংলাদেশের সবুজ জমিনের ওপর রক্তখচিত লাল-সবুজ পতাকা, বিদেশের আসনে বাংলাদেশের মানমর্যাদার অহঙ্কার, দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সরকারী সামরিক-বেসামরিক আমলা-কর্মচারী তথা দেশের মূল অবকাঠামোসহ সকল কিছুরই অস্তিত্ব ও ভিত্তি রচিত হয়েছে ৭১-এর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আপোসহীন বীরত্বপূর্ণ অবদানে। আমাদের শাসকদের মনে রাখতে হবে এদের কারণেই আমরা দেশের রাস্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, সচিবসহ বিভিন্ন কিছু হতে পারছি। আজ স্বাধীনতার কারণে সারা বিশ্বে আমরা নিজেদের পরিচয়ে পরিচিত হচ্ছি। নতুবা বলতে হতো পাকিস্তানের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের অমুক জেলা আমার বাড়ি। আজ অনেক স্বাধীনতা বিরোধী আরাম আয়েশ সুখে সাচ্চন্দে জীবন যাপন করছে। সেই ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধারা কেন কষ্ট করবে।
আজ দেশে মুক্তিযোদ্ধাকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়ায় আত্মহত্যার কথা, তাদের নৃশংসভাবে হত্যা, মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে নিজ বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ ও সহায় সম্পদ লুটপাট, মুক্তিযোদ্ধার বা শহীদ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তানদের নির্মমভাবে পিটিয়ে জখম, মুক্তিযোদ্ধার কন্যা অথবা অসহায় পরিবারের নারীর ওপর সমাজবিরোধী, সন্ত্রাসী, অপরাধী, স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবির রাজাকার অথবা তাদের পোষ্যপুত্র, বিষাক্ত বংশধরদের গুণ্ডা-বদমাইশ কর্তৃক অপহরণ বা নির্যাতন সংবাদ পত্রিকায় পড়ে মর্মাহত ও ব্যথিত হতে হয়।
ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলে ১০ হাজার টাকায় বিফ স্টিক পাওয়া যায়, সেটাও অনেক লোকে খায়। আবার এই ঢাকা নগরের রিকশাচালককে ফুটপাতে ৩০ টাকায় খেতে হয়। বৈষম্যটা এ পর্যায়ে থাকলে মানবতাই বিপন্ন হয়। আর গণতন্ত্র, তার কথা আর না-ই বললাম।
বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় বাড়ছে। বাড়ছে ক্রয়ক্ষমতা। বাড়ছে কোটিপতির সংখ্যা। কমছে দারিদ্র্য। অর্জনের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিও মিলেছে বিশ্বব্যাংকের থেকে। বাংলাদেশ এখন নিম্ন মধ্য আয়ের দেশ। বিশ্বব্যাংকের নিজস্ব হিসাবে ২০১৪ সালে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ১০৮০ ডলার, যা ২০১৩ সালে ছিল ১০১০ ডলার। অবশ্য বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ১৩১০ ডলার। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এটি মুদ্রার একটি পিঠ। অন্য পিঠের চিত্র মলিন। আয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বৈষম্য। শহর ও গ্রামের মধ্যকার বৈষম্য সবচেয়ে প্রকট।
বৈষম্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দেশের কোটিপতির সংখ্যা। ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায় মিলে দেশে কোটিপতির সংখ্যা ৫৪ হাজার ছাড়িয়েছে। বিগত ৬ বছরে দেশে নতুন কোটিপতি বেড়েছে ৩৫ হাজার। এর মধ্যে ব্যক্তিপর্যায়ে বেড়েছে সাড়ে ২৭ হাজার। এই কোটিপতির সংখ্যা বাড়াকেও বৈষম্যের লক্ষণ হিসেবে অভিহিত করা যায়। মূলত সম্পদের অসম বণ্টন ও অবৈধ আয়ের উৎসের কারণে আয় বৈষম্য প্রকট হচ্ছে। মুষ্টিমেয় কিছু লোক উন্নয়নের সুফল ভোগ করছেন। এতে নিচের দিকের মানুষ বরাবরই উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত থাকছেন। এখন পর্যন্ত ৪ কোটি মানুষ দরিদ্র। কাজেই আত্মতুষ্টির কারণ নেই।
এই বৈষম্য মূলক রাস্ট্র সমাজ ব্যবস্থার জন্য ’৭১ সালে যুদ্ধ হয়নি নিশ্চয়! রাষ্ট্রক্ষমতায় যারাই থাকুক তাদের মাথায় রাখতে হবে অসম্প্রাদায়িক-গণতৃান্ত্রিক-বৈষম্যহীন সমাজ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্যই ৭১ এ লড়াই হয়েছে। সেই সমাজ ব্যবস্থাই সৃষ্টির লক্ষ্যেই প্রতিনিয়ত কাজ করতে হবে। সেখানে সূর্যসন্তানরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সকল সুযোগ সুবিধা পাবে এই নিয়ম হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। প্রধানমন্ত্রী স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীদের কথা শুনবেন তাদের সুবিধা অসুবিধা বিবেচনায় নিবে এটা আমিসহ দেশবাসী প্রত্যাশা করবেই।
লেখক: সাংবাদিক।
email: [email protected]
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।