তেজগাঁও নিয়ে মন্ত্রিসভার মহাপরিকল্পনা
তেজগাঁও শিল্প এলাকাকে শিল্প কাম বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকায় রূপান্তরে মাস্টার প্ল্যান (মহাপরিকল্পনা) চূড়ান্ত করেছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। এর আগে ২০১৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর এ মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেয় মন্ত্রিসভা।
সচিবালয়ে রবিবার এক সভায় মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদন, ম্যাপ ও ডাটাবেজ সংশোধন বা পরিমার্জন করে চূড়ান্ত করা হয়। গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন সভায় সভাপতিত্ব করেন।
মন্ত্রী বলেন, তেজগাঁও এলাকাটি হবে ‘বাণিজ্যিক কাম আবাসিক’ এলাকা। দীর্ঘদিন ধরে এটিকে পুরোপুরি বাণিজ্যিক এলাকা করার দাবি ছিল। এরপর আমরা একটি কমিটি করি, ৬টি সভা করি। এ মহাপরিকল্পনা শিগগিরই প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠাবো। তিনি যদি ডেকে পাঠান, ব্যাখ্যা চান বা কোনো নির্দেশনা দেন, তাহলে সে অনুযায়ী কাজ করবো।
মন্ত্রী বলেন, বৈঠক করে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি- সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানায় যে জায়গা রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে নতুন করে সরকারি অত্যাধুনিক ভবন হবে। সরকারি পরিত্যক্ত জায়গাগুলোতে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ভবন হবে। আর ব্যক্তি মালিকানায় যেসব জমি রয়েছে, সেখানে তারা বাণিজ্যিক ভবন করবেন। তবে পার্কিং, গার্বেজ, এটিপি ও ইউটিপি সুবিধাসহ যাবতীয় নিয়ম মেনে করতে হবে এসব ভবন।
তিনি বলেন, বিজি প্রেসের ১৬ থেকে ২০ বিঘা জায়গায় পাকিস্তান আমল থেকে এখনো পর্যন্ত কয়েকটি একতলা ভবন রয়েছে। সে জায়গাগুলোতে বড় ভবন তৈরি করে জায়গার উপযোগিতা বাড়ানো যেতে পারে। তারা চাইলে সরকার কাজগুলো করতে পারে। রাজধানীর কেন্দ্রে এতোটা জমি জুড়ে কেবল একতলা ভবন থাকার কোনো মানে হয় না।
মন্ত্রী বলেন, পুরো এলাকাজুড়ে ট্রাফিক সিস্টেম, পার্কিং- এর জন্য আলাদা ভবন থাকবে। সব ভবনের নিচে অবশ্যই পার্কিং-এর ভালো ব্যবস্থা থাকতে হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ সব বিষয়ে অত্যাধুনিক ব্যবস্থা রাখতে হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এমনিতে ওই এলাকায় ভারি কোনো শিল্পকেন্দ্র নেই। শ্রমঘন কোনো শিল্প সেখানে থাকবে না। কেমিক্যাল কারখানাগুলোকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে। সব শিল্প-কারখানায় বাধ্যতামূলকভাবে ইটিপি করতে হবে, প্রতিদিন সকালেই তাদের স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট করতে হবে।
মোশাররফ হোসেন বলেন, ঢাকার কেন্দ্রস্থলে শিল্প এলাকা করার বিষয়টি আরও আগেই মন্ত্রিপরিষদে পাস হয়েছে। ২০২০ সালের মধ্যে শিল্প মালিক যারা আছেন, তারা অফিস, কনভেনশন সেন্টারসহ বিভিন্ন কিছু এখানে নিয়ে আসবেন। তাদের সহযোগিতায় আমরা এলাকাটিকে একটি নান্দনিক এলাকায় পরিণত করবো।
মন্ত্রী বলেন, এফডিসি বেশ খারাপ অবস্থায় রয়েছে। এটিকে চলচ্চিত্রশিল্প হিসেবে ভালো অবস্থায় নেওয়া হবে।এর আগে বৈঠকে একটি তথ্যচিত্রে দেখানো হয়, ১৯৪৮ সাল থেকে তেজগাঁওয়ের সরকারি ৩০০ একর এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন ২০০ একর জায়গা বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু প্রচুর জমি সেভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে না, কিছু খালি পড়ে আছে। ট্রাকস্ট্যান্ডসহ অন্যান্য কাজে আটকে আছে আরও কিছু জমি। এগুলোকে ঠিকভাবে কাজে লাগালে এ এলাকাটি কার্যকর হয়ে উঠবে।
যদি রেলওয়ে স্টেশনকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায়, এলাকাটি আরও শিল্পবান্ধব হবে। এখন যেভাবে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে- তাতে থাকবে বহুতল ভবন, বাণিজ্যিক সেন্টার, সোলার অ্যানার্জি সিস্টেম। বাড়িগুলোর দূরত্ব থাকবে প্রয়োজনমতো, ভবনগুলো হবে বিল্ডিং কোড মেনে, গার্বেজ সিস্টেম থাকবে অত্যাধুনিক। সব মিলিয়ে পরিবেশবান্ধব এলাকা করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
তারা জানান, ধানমণ্ডি, গুলশান, বারিধারা, বনানীসহ বিভিন্ন আবাসিক এলাকা থেকে বাণিজ্যিক স্থাপনা যেগুলো সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো এখানে স্থানান্তরিত হতে পারে।
ট্রাফিক বিভাগের অ্যাডিশনাল ডিআইজি মোসলেহ উদ্দিন বলেন, তিব্বতসহ কয়েকটি ক্রসিং-এ খুব চাপ পড়বে। আমাদের যানজটের সবচে বড় কারণ, ইন্টারসেকশন ম্যানেজমেন্টের দুর্বলতা। তাই এখানে অন্তত এক বিঘা জায়গা জুড়ে একটি ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেম করা গেলে পুরো ঢাকার যানজট ব্যবস্থাপনা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, একটি বহুতল ভবন করে গেস্ট পার্কিং-এর ব্যবস্থা করলেও যানজট কমবে। শিগগিরই আমরা রিমোর্ট কন্ট্রোল মনিটরিং থেকে সেন্ট্রাল কন্ট্রোল সিস্টেমে যাচ্ছি। একটি প্লট বরাদ্দ পেলে পুরো ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা করা যাবে।
বৈঠকে আলোচকরা বলেন, স্টেকহোল্ডারদের মতামতও এখানে জরুরি। এছাড়া আলাদা নীতিমালাটি সামনে রেখে কাজ করা হলে গন্তব্য সম্পর্কে ধারণা পাবেন সবাই।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।