রডের বদলে বাঁশের ঘটনায় স্কুলে-স্কুলে তদন্ত
গাইবান্ধা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে সদর উপজেলার মেঘডুমুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শৌচাগার নির্মাণ কাজে লোহার রডের পরিবর্তে বাঁশ ও শিক্ষার্থীদের বসার বেঞ্চের ফ্রেম ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদার আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ওই ঠিকাদারের নির্মাণাধীন আরও ৮টি স্কুলে এ কাজ তদন্তে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এর আগে, গত রবিবার এই ঘটনায় গাইবান্ধা সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে গাইবান্ধা জেলায় আরও ২৭৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নির্মিত ওয়াস ব্লক কাজের বিষয়টি খতিয়ে দেখতেও তদন্ত কমিটি গঠন করার দাবি উঠে।
বিদ্যালয়গুলো হল- গাইবান্ধা সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুপতলা ইসলামিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তিনদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, টেংগরজানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাধাকৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বোয়ালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও গোবিন্দপুর(পলাশ) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
এদিকে ওই কাজের তদারকির দায়িত্বে কমকর্তা গাইবান্ধা জনস্বাস্থ্য প্রকৗশল অধিদফতরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আরিফ বিল্লাহর বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। লোক দেখানোর জন্য ওই দফতরের সাইফুল ইসলাম নামে এক নলকূপ মেকানিককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। মূলত বিষয়টি ধামাচাপা দিতে মিডিয়াকর্মী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধিদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করছে অনিয়মের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
গাইবান্ধা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটিতে গাইবান্ধা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের সহকারী প্রকৌশলী তরিকুল ইসলামকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। অন্য দুই সদস্য হলেন, গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের সহকারী প্রকৌশলী শাহজাহান আলী ও সাদুল্যাপুর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইনছার আলী। আগামী ৭ দিনের মধ্যে কমিটিকে সরেজমিন তদন্ত পূর্বক রিপোর্ট প্রদান করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রথম তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক রামচন্দ্রপুর ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, দরজা ও জানালার উপরের অংশে চিকন বাঁশ পাওয়া গেছে। তবে আর কোথাও চিকন বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে কিনা সেজন্য পুরো ছাদ ভেঙ্গে দেখতে সুপারিশ করা হয়েছে।
নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ওই ঠিকাদার মেঘডুমুরসহ মোট আটটি বিদ্যালয়ের কাজ পেয়েছেন। কিন্তু চিকন বাঁশ ও বেঞ্চের ফ্রেম ব্যবহারের অভিযোগ ওঠার পর তার আটটি বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটির রির্পোট পাওয়ার পর এবিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
গাইবান্ধা জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ বলেন, জেলার সাত উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৭৬টি ওয়াস ব্লক নির্মাণের কাজ হাতে নেয়। প্রতিটি ওয়াশ ব্লক নির্মাণে ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়। এসব ওয়াশ ব্লক নির্মাণে ঠিকাদার ও প্রকৌশলী সিন্ডিকেড দরপত্র আহ্বান থেকে শুরু করে নির্মাণ কাজে দুর্নীতির আশ্রয় নেন। গোপন দরপত্র ও নির্মাণ কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। কিন্তু ওই সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম ও ভয়ভীতির কারণে তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে পারেননি। ওই চক্রটি বিষয়টি ধামাচাপা দিতে মিডিয়াকর্মী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধিদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করছে। তাই বিষয়টি তদন্তে উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত টিম গঠনের দাবি জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মেঘডুমুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ কাজ শুরু হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। গাইবান্ধা জেলার সাদুল্যাপুর উপজেলার ঠিকাদার আব্দুল খালেক ওই নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পান। গাইবান্ধা সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত ওই বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যবহারের জন্য এটির নির্মাণ কাজ চলছিল। কিন্তু নীতিমালা অনুযায়ী বিভিন্ন ঢালাইয়ের কাজে দশ থেকে বার মি.লি. লোহার রড ব্যবহার করতে হবে এবং কাজ দিনে করার কথা। কিন্তু ঠিকাদার চিকন বাঁশ ও বেঞ্চের ফ্রেম ব্যবহারের জন্য রাতের অন্ধকারে ঢালাইয়ের কাজ করেন।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।