কমলগঞ্জে চড়ক পূজা ও মেলা শুরু
মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের ছয়চিরী দিঘীর পারে ঐতিহ্যবাহী চড়ক পূজা ও মেলা বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে শুরু হয়। ঐতিহ্যবাহী চড়ক পূজা ও মেলাকে কেন্দ্র করে কমলগঞ্জের ছয়চিরিসহ আশেপাশের এলাকার মানুষের মধ্যে বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে। ২ দিনব্যাপী এ চড়ক পূজা ও মেলা শেষ হবে বৃহস্পতিবার। ঐতিহ্যবাহী এই চড়ক উৎসব দেখতে দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে।
প্রায় ২০০ বছরের অধিক সময় ধরে প্রাচীন ঐতিহ্য লালিত রহিমপুর ইউনিয়নের ছয়চিরি দিঘীর পাড়ে পুঞ্জিকা মতে প্রতিবছরের চৈত্র সংক্রান্তিতে ২ দিনব্যাপী চড়ক পূজা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
জানা যায়, চড়ক পূজা উৎসবের ১০/১২ দিন আগে থেকে বিভিন্ন এলাকার পূজারীর মধ্যে ৪০/৫০ জন সন্ন্যাস ধর্মে দীক্ষিত হয়ে গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিব-গৌরীসহ নৃত্যগীত সহকারে ভিক্ষাবৃত্তিতে অংশ নেন। এ ক’দিন তারা পবিত্রতার সহিত সন্যাস ব্রত পালন করে নিরামিষ ভোজি এবং সারাদিন উপবাস পালন করেন। চড়ক পূজার ২ দিন আগে পূজারীরা শ্মশানে গিয়ে পূজা অর্চনা করেন ও শেষে গৌরীর বিয়ে, গৌরী নাচ ও বিভিন্ন গান গেয়ে ঢাকের বাজনায় সরগরম করে গোটা এলাকা। ছয়চিরি দিঘীর পাড়ে ভক্তরা নৃত্য করার জন্য কলাগাছ ও বাঁশের খুটি বেষ্টিত মন্ডলী তৈরি করে। পূজার প্রথম দিন মঙ্গলবার গভীর রাতে তান্ত্রিক মন্ত্র ধারা কাঁচপড়া দিয়ে জলন্ত ছাইয়ের ওপর কালী সাজ নিয়ে নৃত্য করে। ভক্তগণ ছন্দে ছন্দে ঢোল, কাশি, করতাল বাজিয়ে তার তালে তালে নৃত্য করে থাকেন। এসময় দর্শনার্থীরা জয়ধ্বনি ও নারীরা হুলুদ ধ্বনি দিতে থাকেন। জ্বলন্ত আগুনের মধ্যে এই ‘কালীনাচ’অত্যন্ত আকর্ষনীয় এবং তান্ত্রিক মন্ত্র দিয়ে ৭টি বলিছেদ (লম্বা দা) এর ওপর শিব শয্যা করেন। শিবের উপর উঠে কালী ভয়ানক এক অদ্ভুত রূপ ধারণ করেন।
কালীকাঁচ শেষ হওয়ার পর সকালে পূজারীরা পূজা করে পান বাটা দিয়ে চড়ক গাছকে নিমন্ত্রণ জানানো হলে পার্শ্ববর্তী ঐতিহাসিক ছয়চিরি দিঘী থেকে ভেসে উঠে ১০০ ফুট লম্বা চড়ক গাছ। এ গাছের চূড়া থেকে মাচা পর্যন্ত চারটি পাখার মতো করে বাধা হয় চারটি মোটা বাঁশ এবং তাতে যুক্ত করা হয় মোটা লম্বা রশি। আগের বছর উৎসব শেষে এই দিঘীতে ডুবিয়ে রাখা হয়ে ছিল চড়ক গাছ। দিঘীর পাড়ে গর্ত খুড়ে সোজা এবং খাড়া করে পোঁতা হয় এ গাছ।
বুধবার দুপুর থেকে নারী পুরুষ দর্শনার্থীর বিশাল সমাগম ঘটে। এদিন বিকেল থেকে ভক্তরা বিশাল দা (বলিছেদ) দিয়ে নৃত্য, শিবের নৃত্য ও কালীর নৃত্য দেখায়। নৃত্য শেষে ঐতিহাসিক ছয়চিরি দিঘীতে স্নান করে ভক্তদেরকে লোহার শিকড় শরীরের বিভিন্ন অংশে পিষ্ট (গাঁথা) করা হয়। বিশেষ করে জিহ্নবা ও গলায় গেঁথে দেয়া হয়। নৃত্যের তালে তালে চড়ক গাছ ঘুরানো হয়। দেবতার পূজা-অর্চনা শেষে অপরাহ্নে মূল সন্ন্যাসী ৪ জন ভক্তের (জ্যান্ত মানুষের) পিঠে লোহার দু’টি করে বিরাট আকৃতির বড়শি গেঁথে রশিতে বেঁধে ঝুলিয়ে চড়ক গাছ ঘুরানো হয়। এ সময়ে দর্শনার্থীদের অনেকে বাতাসা আর কলা উপরের দিকে উড়িয়ে দেন আর দর্শনার্থীরা তা কুড়িয়ে নেন।
পরদিন বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে ফেরা চড়ক পূজা। ওই দিন দেবতার পূজা অর্চনা করা হবে। ঐতিহ্যবাহী ছয়চিরি দিঘীর চার পাড়ের মধ্যে দিঘীর পূর্বপাড়ে ১টি, উত্তর পাড়ে ১টি এবং দক্ষিন পাড়ে ২টি চড়ক গাছ স্থাপন করে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।