প্রযুক্তির প্রভাবে হারিয়েছে চিঠিপত্রের লেনদেন
ডাকপিয়নের একটি ডাকে ঘুম আমার ভাঙলোও বুজি তোমার চঠি এলো’, খ্যাতিমান শিল্পীর এই অমর সঙ্গীত এখন আর মানুষের মনকে নাড়া দেয় না। এমনকি সময়ের পরিক্রমায় এবং আমাদের বাস্তবতার বিচারে এই গানের কথা আজ আর দৈনন্দিন জীবনে তেমন গুরুত্ব বহন করে না।
বেশিদিন আগের কথা নয়। সত্যিই মানুষ সেদিন কাক ডাকা ভোরে প্রিয়জনের হাতের একটি চিঠি বা অন্য কোন পত্রাদির জন্য ডাকপিয়নের অপেক্ষায় পথ চেয়ে থাকতেন। সে কি অপেক্ষা, সে কি ব্যাকুলতা। শুধু তাই নয়। মানুষ তখন প্রিয়জন বা প্রিয় মানুষের খবর পেতে তার লেখা একটি চিঠি পাওয়ার জন্য সকালে-বিকেলে ডাকপিয়নের বাড়িতে ছুটোছুটি করতেন। এরপরও যখন আপনজনের কোন চিঠি বা অন্য কোন সংবাদসংবলিত পত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি তখন তারা তাদের চিঠি আসতে পারে এই প্রত্যাশা থেকে ডাকপিয়নকে পোষ্ট অফিসে খোঁজ নিতে বার বার অনুরোধ করতেন। বিশেষ করে তখন যাদের কোন আত্বীয়-স্বজন বিদেশে থাকতো তাদের কাছে ডাকপিয়নের হৃদয়ের কথাতো বলাই বাহুল্য। প্রাপকের হাতে বিদেশি কোন চিঠি তুলে দিতে পারলেই প্রাপক পিয়নকে বকশিস দিয়ে খুশি করতেন।
কেবল চিঠি নয়, পোষ্ট অফিসের মাধ্যমে প্রিয়জনদের পাঠানো টাকা-পয়সা বা অন্যান্য ডকুমেন্টসের জন্যও ডাকপিয়নকে খুঁজতে হতো। অবশ্য ডাকপিয়নও তখন তার দায়িত্ব কর্তব্য যথারীতি পালন করতেন। অনেক সময় তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রাপকের কাছে তার কাঙ্খিত চিঠিপত্র, টাকা-পয়সা বা অন্য কোন ডকুমেন্ট পৌঁছে দিতেন। পাশাপাশি ওই সময় যারা প্রিয়জনের কাছে চিঠিপত্র বা অন্য কোন ডকুমেন্ট পাঠাতেন তারা ছুটে যেতেন কাঙ্খিত ডাকবাক্সের কাছে। ঝড়, বৃষ্টি ও রোদ উপেক্ষা করে আপনজনের কাছে লেখা চিঠি ডাকবাক্সে পোষ্ট করতে পারলে তবেই স্বস্তি। আর তখন ডাকবাক্সগুলোও সবসময় লাল রঙে রাঙিয়ে বেশ যত্মে রাখা হতো। যাতে সহজেই তাতে মানুষের দৃষ্টি পড়ে। শুধু তাই নয় সে সময় ডাকবাক্সে থাকা কোন চিঠিপত্র যাতে বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট না হয় সে জন্য কোন কোন ডাকবাক্স বৃষ্টিমুক্ত রাখারও ব্যবস্থা নেওয়া হতো। কিন্ত কালের বিবর্তনে তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন তথা আধুনিক পদ্ধতির উদ্ভব হওয়ায় এখন আর প্রিয়জনের কোন খবরের জন্য ডাকপিয়নের পথ চেয়ে থাকতে হয় না।
প্রিয়জন বা প্রিয় মানুষ পৃথিবীর যে কোন প্রান্তেই থাক না কেন মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে মুহুত্রের মধ্যে তার খবর নেওয়ার পাশাপাশি তার সাথে যে কোন চিঠিপত্র আদান-প্রদান করা যায়। আর তাদের সাথে টাকা-পয়সা লেনদেন করতেও এখন আর পোষ্ট অফিস বা ডাকপিয়নের শরনাপন্ন হতে হয় না। নিমিষের মধ্যে অনলাইন, বিকাশ, ডার্চ বাংলা, এম ক্যাশ এবং মাই ক্যাশসহ বিভিন্ন উন্নত প্রক্রিয়ায় টাকা-পয়সা লেনদেন করা যায়। সে কারণে এখন আর মানুষের কাছে ডাকপিয়নের কদর নেই। পাশাপাশি একই কারণে মানুষ এখন আর ডাকবাক্স বা পোষ্ট অফিসে গিয়ে চিঠিপত্র পোষ্ট করেন না। কেবল চাকরি বা অফিসিয়াল কিছু চিঠিপত্র বা অন্য কোন ডকুমেন্টস সরাসরি পোষ্ট অফিসে গিয়ে অথবা ডাকবাক্সের মাধ্যমে প্রেরণ করা হয়।
ফলে সৃষ্ট এ পরিস্থিতিতে ডাকবাক্সের গুরুত্ব একদমই কমে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও সেটির আর খুব যত্ন নেয় না। এমনকি ডাকপিয়নও ডাকবাক্সের নিয়মিত খবর রাখেন না। চলার পথে কখনও কোথাও ২/১টি ডাকবাক্স চোখে পড়লেও সেটি জরাজীর্ণ অথবা ব্যবহার অনুপযোগী। চিঠিপত্র পোষ্ট করার অবস্থায় নেই। সব মিলিয়ে বলা যায় এখন আর ডাকপিয়নের যেমন কদর নেই, তেমনিভাবে ডাকবাক্সেরও যত্ন নেই।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।