সাতক্ষীরা জেলায় হত্যা খুন আত্মহননের পথে মাত্র তিনমাসে প্রাণ হারিয়েছে ২২ নারী। হত্যার শিকার হয়েছেন ১২ নারী। অগ্রগামী’র সাংগঠনিক আত্মপ্রকাশের প্রাক্কালে নারীর প্রতি এই নির্মমতার এক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে এ বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত মাত্র তিন মাসে হত্যা খুন ও আত্মহননের পথে বেছে নিয়ে সাতক্ষীরায় ২২নারীর মৃত্যুর চিত্র তুলে ধরা হয়। সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, শুধুমাত্র স্থানীয় গণমাধ্যমে চালানো জরিপে এ চিত্র উঠে এসেছে। বাস্তব চিত্র এর থেকে আর বেশি ভয়াবহ বলে জানানো হয়।

লিখিত প্রতিবেদনে থেকে জানা যায়, সাতক্ষীরা জেলায় হত্যা খুন আত্মহননের পথে প্রাণ হারিয়েছে ২২ জন নারী। হত্যার শিকার হয়েছেন ১২ জন। আত্মহননের পথে বেছে নিয়ে প্রাণ দিয়েছেন ৭জন। অস্বাভাবিক মৃত্যু ৩জন নারীর। সব থেকে বেশি প্রাণ হারায় জেলার শ্যামনগর উপজেলায়। জেলায় অস্বাভাবিকভাবে মোট প্রাণ হারানোর পরিসংখ্যনের অনেকটা এ উপজেলায়। মোট সাতজন নারী অকাতরে প্রাণ হারিয়েছে এই উপজেলায়। এরপরের অবস্থান আশাশুনির। আশাশুনিতে চারজন নারী প্রাণ হারায়, আর সবগুলোই আত্মহননের পথে প্রাণ দিয়েছে। দেবহাটা ও কলারোয়ায় প্রাণ দিয়েছে তিনজন করে ছয়জন নারী। সদরে ও কালিগঞ্জে সম সংখ্যক হিসেবে মোট চারজন নারীর প্রাণ হারানোর খবর দিয়েছে গণমাধ্যমগুলো।আর এদিক থেকে সবচেয়ে কম নারীরা প্রাণ দিয়েছে তালায়। এ উপজেলায় একজন নারী প্রাণ হারিয়েছে। মার্চ মাসে সব থেকে বেশী সংখ্যক নারী প্রাণ হারিয়েছে। এই মাসে মৃত্যুকে বরণ করেছে ৯ নারী। জানুয়ারিতে ৭ ও ফেব্রুয়ারিতে ৬জন নারী প্রাণ দিয়েছে।

গণমাধ্যমে উঠে আসা নির্যাতিত নারীর সংখ্যা ২৫জন। যার মধ্যে সবথেকে বেশি সাতক্ষীরা সদরে। সর্বনিন্ম তালায়। পুরো প্রতিবেদনটি পড়ে শুনলেন অগ্রগামী নারী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মির্জা সুলতানা।

শনিবার সকাল ১০টায় সাতক্ষীরা শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে অবস্থিত শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে শপথ বাক্য পাঠের মধ্য দিয়ে এ সংগঠনটি যাত্রা শুরু করে। শুরুতে তনুসহ সাম্প্রতিক নৃশংসতায় নিহতদের স্মরণে শপথ বাক্য পাঠ করান সংগঠনের সভাপতি আমিনা বিলকিস ময়না। পরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সমাবেশ ও গণমাধ্যমের মুখোমুখি সংগঠনে অনুষ্ঠান হয়। সেখানে সংহতি জানান সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক কল্যাণ ব্যানার্জি, অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ ও সাধারণ সম্পাদক এম কামরুজ্জামান। 

এসময় সংগঠনটির আয়োজনে সদস্যরা মুখে কালো কাপড় বেঁধে একটি প্রতিবাদী মিছিল বের করে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে সমাবেশ করে। 

সমাবেশে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বলেন, নারীরা আজ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছে। রাস্তাঘাটে, বনে বাদাড়ে, খালে বিলে আজ পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে নারীর লাশ। এটা বড় অবমাননাকর। এভাবে চলতে পারে না। এ অবস্থা পাল্টাতে আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে। নারীসমাজকে সচেতন হয়ে পথে নামতে হবে। তিনি নারীর অধিকার সম্মান রক্ষার যে কোন আন্দোলনে পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন।

প্রথম আলোর প্রতিবেদক কল্যাণ ব্যাণার্জি বলেন, এভাবে অসহনীয় পরিস্থিতি চলতে পারে না। নারীদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ভয় কাটিয়ে পথে নামতে হবে। নারীরা তাদের নিরাপত্তার যে আন্দোলনটি এগিয়ে নেবে সাতক্ষীরার সাংবাদিকদের নিয়ে তিনি পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

অগ্রগামীর সভাপতি আমিনা বিলকিস ময়না সভাপতিত্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন-মাসুমা সুলতানা, প্রভাষক অপর্ণা বর্মন, হাসিনা খাতুন, শামিমা আক্তার লিপি, মহসিনা পারভিন প্রমুখ।