পঞ্চগড়ে দখল, দূষণে করতোয়া ও ডাহুকের বিপর্যয়
দখল, দূষণ আর ভরাট বিপর্যয়ে মৃত প্রায় করতোয়া এবং ডাহুক নদী। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী এই নদী দু’টি। দেশের উত্তর অঞ্চলের সর্ববৃহৎ নদী করতোয়া। যা বাংলাদেশে প্রবেশ মুখ তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর দেবনগড় উত্তর সীমান্তে।
আর এই প্রবেশ মুখে এলাকার অসাধু কিছু ব্যবসায়ী পাথর উত্তলনের নামে খনিজ সম্পদ আহরণ করে নদী ভরাটের উৎসবে মেতে উঠেছেন। নদীর ধার ও সমতল ভুমি কেটে মাটি নদীতে ফেলে এবং মেশিন দিয়ে মাটি উত্তোলন করে নদী ভরাট অব্যাহত রেখেছে।
সরকারি নিয়ম উপেক্ষা করে নদী ভরাট করায় সামগ্রিক পরিবেশে বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। যার প্রভাবে নদীতে মাছ থাকাতো দুরের কথা হাটু পানি পাওয়াও ভাগ্যের ব্যাপার। এর ফলে উত্তর অঞ্চলের অন্য জেলায় পানি প্রবাহ কমে যাচ্ছে। বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছে কৃষি আবাদ। পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যাচ্ছে।
বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে পানি প্রবাহ। দেশের সবকটি নদীর উৎস্য প্রতিবেশি দেশ ভারতে। তাই প্রতিটি নদীর প্রবেশমুখে ভারত বাঁধ নির্মান করেছে। ডাহুক ও করতোয়া নদী দিয়ে যেটুকু পানি বাংলাদেশের নদীতে আসছে তা তেঁতুলিয়া উপজেলার কিছু অবৈধ পাথর ব্যবসায়ীরা নদীর প্রবেশ মুখে বালি মাটি দিয়ে পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দিচ্ছে। এতে নদীর গভীরতা কমে গিয়ে গতিপথ পরিবর্তন হয়ে দেই ধার ভাঙে ফসলী জমি নষ্ট হচ্ছে।
বর্ষা মৌসমে নদীর ধারে নিম্নঅঞ্চলে বসবাসকারী পরিবারগুলো অল্প পানিতে জলাবদ্ধতার শিকার হয়।
ভজনপুর, দেবনগড়, বুড়াবুড়ী, তিরনই ও শালবাহান হাট ইউনিয়নের ভূমি কর্মকর্তারা অদৃশ্য কারণে যেন বসে আছেন। আর কোন ধরনের বাধা ছাড়াই এলাকার কিছু প্রভাবশালী স্থানীয় প্রশাসন এবং ভূমি কর্মচারীদের যোগসাজসে অবৈধভাবে কয়েক হাজার একর জমিতে মেশিন এবং শ্রমিক দিয়ে পাথর উত্তলন করে বালুমাটি নদীতে ফেলা হচ্ছে।
সরেজমিনে তেঁতুলিয়া উপজেলার করতোয়া ও ডাহুক নদী ঘুরে দেখা যায়, ভূমিদস্যু দখলদারদের দখল আর ভরাটে মৃতপ্রায় নদী দু’টি। ডাহুক নদীর উৎপত্তি ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ মুখে কাজি এন্ড কাজি টি এষ্টেট নদীর দুইধার ভরাট করে নিজেদের বিনোদনের জন্য নদীকে ড্রেনে পরিণত করেছে। একই সাথে ডাহুক নদীর ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিভিন্ন কল-কারখানার বর্জ, চা বাগানের বিষাক্ত রাসায়নিক এবং অবৈধ পাথর ব্যবসায়ীদের ভরাট বাণিজ্যে মৃত প্রায় ডাহুক।
অপরদিকে দেবনগড় ও ভজনপুর ইউনিয়নের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত করতোয়া নদীর প্রবেশ মুখসহ প্রায় ১৫ কিলোমিটার নদী অবৈধ পাথর ব্যবসায়ীদের ভরাট বিপর্যয়ে হারিয়ে যেতে বসেছে।
দ্রুত এর প্রতিরোধ না হলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় পরিবেশ ও নদীমাতৃক মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাপনে মারাত্বক বির্পযয় ঘটবে।
নদী বাচাঁও পরিবেশ বাচাঁও আন্দোলন নদীমাতৃক এলাকায় হয়ে থাকলেও পঞ্চগড়ে এরকম প্রতিবাদ কখনো দেখা যায়নি।
ভূমিরক্ষা আন্দোলন কমিটির আহব্বায়ক ডিজার হোসেন বাদশা জানান, আমাদের প্রানের নদী ডাহুক ও করতোয়া নদী, আমাদের পরিবেশকে বাচঁতে, জীব বৈচিত্রকে বাচাঁতে নদী রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। নদী ধ্বংসকারী সকল ষড়যন্ত্রের মূল হোতাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।