আপনি কি এস আলমের সরকার?

(১)
কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করলে পরিবেশের ক্ষতি হবেই। এটা নিয়ে কোন তর্ক নাই। কয়লা পোড়ানো শুধু নয়- কয়লা আনা নেওয়া করা বা মজুদ করে রাখা এইসব কাজেও পরিবেশের ক্ষতি হয়। এরপরেও কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হয় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। আগে হয়েছে। আগে পরিবশ সম্পর্কে সেরকম অসচেতনটা ছিল না। মানুষের ক্ষতি হয়েছে। সাড়া দুনিয়া ব্যাপী এখন কয়লা পোড়ানোর ব্যাপারে সকলেই অনেক সতর্ক হয়ে গেছে।
কিছু কিছু প্রযুক্তি নাকি বেরিয়েছে, যেগুলি কয়লা পরালে যে কার্বন ডাই অক্সাইড হয় সেগুলিকে আটকে ক্ষতি কমানর চেষ্টা করে। সেগুলি কতোটুকু কার্যকর কতোটুকু ব্যায়বহুল সে বিশেষজ্ঞরা বলতে পারবেন, আমার ধারণা নাই। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে আমি আপনাকে নিশ্চিত করে বলতে পারি, বাঁশখালিতে যেসব কয়লা পুড়িয়ে তার তাপে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা হচ্ছে তাতে পরিবেশের ক্ষতি অবশ্যই হবে।
তারপরেও আমি আপনাদের কথা না হয় মেনে নিলাম, পরিবেশের ঝুঁকি নিয়েও আমরা না হয় উন্নয়নের জন্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্র আমাদেরকে বসাতে হবে। সেগুলি বসানোর আগে প্রয়োজনীয় হিসাব নিকাশগুলি কি আপনারা করেছেন? কতোটুকু ক্ষতি হবে আর কতোটুকু লাভ হবে সেই প্রাথমিক হিসাবটা কি করেছেন? করলে কে করেছে? কবে করেছে? করলে কি সেই হিসাবের ফলাফল?
(২)
আচ্ছা না হয় সেটাও মানলাম, যে হিসাবের ফলাফল অনুকূল। বাঁশখালিতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হবে। হলে সেটা এস আলমকে কেন করতে দিচ্ছেন? আপনারা কি টেন্ডার ডেকেছিলেন? অন্য কোন কোম্পানি দেশী কিংবা বিদেশী অন্য কেউ কি করতে চায় না এরকম বিদ্যুৎ কেন্দ্র? করতে চাইলে টেন্ডার ডাকলেন না কেন? টেন্ডারে তো প্রতিযোগিতা হতো, একাধিক প্রস্তাব পেলে আপনি কারিগরি দিক দরদামের দিক সবকিছু বিবেচনা করতে পারতেন। টেন্ডার না ডেকে শুধু এস আলমকেই কেন সেখানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে দিলেন?
দেখেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্র কে করছে সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা। রাস্তাঘাট বানানোর চুক্তি আর বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালানোর চুক্তি এক মাপে দেখলে হবেনা। অভিজ্ঞতা আর কারিগরি সক্ষমতার জন্যে একই মাপের বিদ্যুৎ কেন্দ্রে একেকজন একেক দামে বিদ্যুৎ দিতে পারে। শুধু কারিগরি দক্ষতার কথাই কেন বলি। ব্যাবস্থাপনার পারঙ্গমতাও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। টেন্ডার করলেই পার্থক্য টের পেতেন। টেন্ডার ছাড়া এস আলমকেই কেন এই কাজটি করতে দিলেন?
কুইক রেন্টাল করেছিলেন, তখন একটা জরুরী অবস্থার মত ছিল, তাড়াতাড়ি বিদ্যুৎ দরকার ছিল। আপনারা পলিসি নিয়েছিলেন যে আর্থিকভাবে লোকসান হলেও জরুরী প্রয়োজনে কিছু বিদ্যুৎ পাওয়ার ব্যাবস্থা করি। তার ফলাফল কি হয়েছে? যাদেরকে ঢালাওভাবে কুইক রেন্টাল কেন্দ্র বসাতে দিয়েছিলেন তাদের কয়টা কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ পাচ্ছেন? যারা আপনাকে বিদ্যুৎ দিচ্ছে এরাও বা কতটা কুইক প্লান্ট চালু করতে পেরেছে? সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিৎ ছিল না?
এখন তো মোটামুটি জরুরী ইয়েটা মিটে গেছে। এখন কেন বিনা টেন্ডারে দিচ্ছেন?
(৩)
যতটুকু জেনেছি এস আলম নাকি সরকারকে বলেছে যে ওদের জমি আছে, নিজস্ব জমিতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করবে। কোথায় সেই জমি? আপনারা তো ভাই বাংলাদেশেরই সরকার, বাংলাদেশের বাস্তবতা জানেন। আপনারা কেন সরেজমিনে দেখে নিলেন না যে আসলেই এস আলমের জমি আছে কিনা? এই ধরনের কোম্পানিগুলি জমি নিয়ে যে দস্যুতা করে সেটা আপনারা জানেন না? এস আলম যদি জমি বায়নার কাগজ পত্রও দাখিল করে থাকে, আপনারা একবার ভূমিতে গিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে পারলেন না?
ন্যুনতম স্বচ্ছতা তো থাকবে? নাকি? যেখানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করার কথা হচ্ছে সেখানে বারো তেরো শ মেগাওয়াটের একটা বা দুইটা কোল বেইজড পাওয়ার প্লান্ট বসলে সেই এলাকার ভউগলিক বৈশিষ্ট্যই তো পাল্টে যাবে। এই কথাটা বুঝার জন্যে তো আর বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার হয় না আরকি। আপনি তো সরকার। আপনি এটার ভাল মন্দ পরীক্ষা করবেন না? এস আলম এসে বলল, 'আপা আপা, বিদ্যুতের ফ্যাক্টরি বানাইতে চাই', আর দিয়ে দিবেন? আপনি কি এস আলমের সরকার? নাকি দেশের সরকার?
আচ্ছা সেগুলিও না হয় ছেড়ে দিলাম। এখন তো দেখলেন যে এস আলমের জায়গা নাই সেখানে। পাঁচজন মানুষের জীবন গেল, যাক, এইসব মানুষের জীবনের দাম যে কি আছে আপনাদের কাছে সে আলোচনা না হয় নাই করলাম। কিন্তু বিদ্যুৎ কেন্দ্র করার মতো জায়গা যে এস আলমের নাই, ওরা যে সরকারে কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করার জন্যে অনুমতি নিয়ে তারপর জমি দখলের পাঁয়তারা করছে সেটা তো বুঝতেই পারছেন নাকি? এখন কেন এস আলমের সাথে বিদ্যুৎ ক্রয়ের চুক্তি বাতিল করবেন না বলেন?
(৪)
আর আমাদের যে খবরের কাগজ আর টেলিভিশন এরা আছেন, আপনারাই বা এইসব কি খবর দেখান? টেলিভিশনগুলিতে বলছে যে 'ভূমি অধিগ্রহণ' নিয়ে নাকি বিবাদ। ভূমি অধিগ্রহণ কি জিনিস আপনারা জানেন না? এই শব্দ আপনাদেরকে কে ধরিয়ে দিয়েছে? ভূমি অধিগ্রহণ করতে পারে সরকার। এস আলম কি করে অধিগ্রহণ করবে? ওরা কিনতে পারে। কেনা আর অধিগ্রহণ এক জিনিস হলো?
সরকার যখন আমার জমি অধিগ্রহণ করতে চাইবে তখন সে জমি দিয়ে দিতে আমি আইনত বাধ্য। ক্ষতিপূরণ পাবো, কিন্তু সরকার যদি আয়ন মেনে জমি চায় জমি দিতে আমি অস্বীকার করতে পারবো না। সেটা হচ্ছে অধিগ্রহণ। এস আলম যদি কিনতে চায় আমি তো সেই জমি এস আলমের কাছে বেচতে বাধ্য না। আমার ইচ্ছা, আমার জমি আমি বেচতে পারি, নাও বেচতে পারি। আপনারা টেলিভিশনে খবরের কাগজে ইচ্ছামত বলে দিলেন জিম্মি অধিগ্রহণ নিয়ে দ্বন্দ্ব! ভুল করে? মনে তো হয়না। ইচ্ছা করেই এইসব করেন।
খবরের কাগজ বা টেলিভিশনে খবর দিয়ে আপনারা সরকারের সিদ্ধান্ত পাল্টাতে বাধ্য করতে পারেন না, সত্যি কথা। কিন্তু খবরটা তো ঠিকঠাক মতো দিবেন, নাকি? এইরকম ভুল খবর দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করেন কেন? এটা তো অন্যায়।
(৫)
পাঁচজন মানুষ মরেছে শুনেছি। মরুক। কিন্তু এই পাঁচটা জীবনের বিনিময়ে হলেও তো সরকারে চোখ খোলা উচিৎ। নাকি? নাকি আপনারা এতোই অন্ধ যে বাশখালিতে কয়জন মানুষ মরল আর কিভাবে মরল সেটাও দেখতে পাননা। নাকি এই খবরটাও নথীতে নোটাংশে সিনিয়র সহকারী সচিব লিখে যেভাবে উপস্থাপন করবে সেভাইবেই আপনাকে দেখতে হবে?
এতোটুকু দায়িত্ববোধ থাকলে তো এতদিনে সরকারের নড়েচড়ে বসার কথা। বাশখালিতে ঐ বিদ্যুৎকেনদের কার্যক্রম বন্ধ করে বিষয়টা একটু বিস্তারিত দেখার কথা। কেন করছেন না? করেছেন কি? কই খবরের কাগজে তো সেরকম কিছু দেখলাম না। নাকি এটা দেখার দায়িত্ব অনুভব করছেন না? নাকি এই পাঁচটি মৃত্যুর কারণ ক্ষতিয়ে দেখতেও আপনাদেরকে ঘুষ দিতে হবে?
শোনেন, জনগণের সাথে এইগুলি করবেন না। জনগণ ক্ষমা করবে না। বিএনপি জামাতকে সাইজ করে যদি মনে করেন যে দেশের সকল মানুষ সাইজ হয়ে গেছে আর যা খুশী তাই করবেন, ভুল করবেন।
আপনাদের এইসব অপকর্মের জন্যে সে ভাল কাজটির দোহাই দিয়ে টিকে যাচ্ছেন, সেটা থেকেও মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিবে। পরে বলবেন না যে আমরা বলি নাই।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।