ঘোড়াশালে নতুন ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হচ্ছে
ঘোড়াশাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ছে। চতুর্থ ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে ২১ কোটি ৭০ লাখ ডলার দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। দেশীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে আরও ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের চুক্তি হতে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন ইআরডির অতিরিক্ত সচিব কাজী শফিকুল আজম এবং বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডাইরেক্টর রাজেশ্বরী পারালকার।
জানা গেছে, বাংলাদেশকে সহজ শর্তে এ ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির ঋণের বিপরীতে বার্ষিক শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ দিতে হবে। এ ঋণের অর্থ ছয় বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩৮ বছরে মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।
এ বিষয়ে ইআরডি বিশ্বব্যাংক উইংয়ের প্রধান কাজী শফিকুল আযম বলেন, ঋণের শর্তসহ যাবতীয় বিষয়ে আলোচনা শেষ হয়েছে। সিদ্ধিরগঞ্জের ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে অর্থায়নের পর ঘোড়াশাল চতুর্থ ইউনিটের রি-পাওয়ারিংয়ে বড় অঙ্কের অর্থ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি গত কয়েক বছর ধরে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বেশি বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু বর্তমানে অবকাঠামো উন্নয়নেও অবদান রাখছে, যা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ইতিবাচক। বৃহস্পতিবার ঘোড়াশাল চতুর্থ ইউনিট বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি হবে।
সূত্র জানায়, রি-পাওয়ারিংয়ের মাধ্যমে দ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে সরকার। কারণ রি-পাওয়ারিংয়ের মাধ্যমে গ্যাসের ব্যবহার কমানো সম্ভব। পুরাতন বিদ্যুৎকেন্দ্রের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি এবং দূষণ কমানোও সম্ভব হয়। এ জন্য ঘোড়াশালে দুটি ইউনিটের কাজ শুরু হচ্ছে। তৃতীয় ইউনিট বাস্তবায়নে অর্থ দিচ্ছে চীনের এক্সিম ব্যাংক। আর চতুর্থ ইউনিট বাস্তবায়নের জন্য বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ঋণ চুক্তি হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, ঘোড়াশাল চতুর্থ ইউনিট রি-পাওয়ারিং প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক ১ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা দেবে। অবশিষ্ট অর্থ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হবে। ২০১৯ সালের মধ্যে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজ শেষ করবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)।
সূত্র জানায়, ঘোড়াশাল চতুর্থ ইউনিট ১৯৮৯ সালে স্থাপিত হয়। আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে যাওয়ায় ২১০ মেগাওয়াটের ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ১৮০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে না। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে ৪০৩ মেগাওয়াট করা হবে। একই সঙ্গে রি-পাওয়ারিং করলে গ্যাস ব্যবহারের দক্ষতা ৫৪ শতাংশ বাড়বে।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, রি-পাওয়ারিংয়ের ব্যয় নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের তুলনায় ৪০ শতাংশ কম। একই সঙ্গে রি-পাওয়ারিংয়ের সময় বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন হতে থাকে। ফলে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়বে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ও বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিস সূত্র জানায়, বর্তমানে বিদ্যুতের সিস্টেম লস কমে গেছে, তাই বিদ্যুৎ খাতে সহায়তা বাড়াচ্ছে বিশ্বব্যাংক। এর আগে সিস্টেম লসের কারণে বাংলাদেশের প্রয়োজন থাকলেও এই খাতে বিনিয়োগে তেমন আগ্রহ দেখায়নি সংস্থাটি। তবে এখন সিস্টেম লস সহনীয় পর্যায় আসায় আবারও ফিরে আসছে বিশ্বব্যাংক। এ বিষয়ে ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ইফফাত শরীফ এর আগে বলেছিলেন, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমরা পাঁচ বছর মেয়াদী যে কান্ট্রি পার্টনারশিপ প্রোগ্রাম তৈরি করছি সেখানে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বিদ্যুৎ খাতকে।
তিনি বলেন, দেশের উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য নিরসনে বিদ্যুৎ খাত বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এ বিবেচনায় বিশ্বব্যাংক বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানো হচ্ছে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।