ঝিনাইদহে আ.লীগ প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলায় ৩নং দিগনগর ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ৫ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসাবে মাঠে নেমেছেন। তারা হলেন মোঃ শামসুজ্জামান পান্না খান, বর্তমান চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হক তোজাম, আ.ব.ম নাসিরুল ইসলাম খান, জিল্লুর রহমান তপন ও মোঃ ইদ্রিস আলী বিশ্বাস। আগামী ৪ জুন শৈলকুপা উপজেলার ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবারে প্রথমবারের মত ইউপি নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হতে যাচ্ছে। এ কারনে নৌকা প্রতীক পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন এই ৫ প্রার্থী। তাদের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর নানাবিধ অভিযোগ রয়েছে।
দেবতলা গ্রামের সন্তান মোঃ শামসুজ্জামান পান্না খান বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। তিনি ১৯৭৩ সালে কমিউনিষ্ট পার্টির কুড়েঘর প্রতীকে পক্ষে নির্বাচন করেছিলেন। এরপর ১৯৭৭ সালে বিএনপিতে যোগ দেন। সেখান থেকে তিনি জাসদে যোগদান করেন। সর্বশেষ ১৯৯০ সালে আবার পুনরায় বিএনপিতে ফিরে গিয়ে থানা বিএনপির সহ-সভাপতি ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি পদ দখল করেন। ১৯৯২ সালে ভোট জবর দখল করে বিএনপির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। শুরু করেন এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব। ২০০১ সালে জাতীয় নির্বাচনে পুরনায় বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তিনি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য দহখোলা গ্রামের তার নিজ দলীয় এক পাগলকে রাতের অন্ধকারে খুন করে প্রতিপক্ষকে ফাঁসিয়ে দেয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রাম শুরু হয় লুটপাট আর চাঁদবাজি। এরমধ্যে রয়েছে দহখোলা, দেবতলা, অচিন্তপুর ও ইটালী গ্রাম। তিনি ওই সময় এলাকার জনগণের কাছে ভূমিমন্ত্রী ও বনমন্ত্রী হিসাবে আখ্যয়িত হয়েছেন। মাঠের পিয়াজ, রসুন, কলা, বেগুন, মরিচ, পটলসহ বিভিন্ন গাছপালা কেটে ও পরের জমি দখল করে তার নিজ দলীয় লোকজনদের দিয়ে চাষাবাদ করাতেন। এলাকা ছাড়া করেছিলেন কয়েক গ্রামের নারী পুরুষদের। যা ২০০২-৩ ও ৪ সালে সংসদ অধিবেশনে শৈলকুপা সংসদ সদস্য আব্দুল হাই অধিবেশনে বক্তব্য রেখেছিলেন যা রেকর্ড বাজালে শুনতে পাওয়া যাবে। সংসদ সদস্য আব্দুল হাই তৎকালিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দৃষ্টি আকর্শন করে এই বক্তব্য রেখেছিলেন। তার একমাত্র ছেলে মুক্ত হোসেন খান ছাত্রদল ও যুবদলের নেতৃত্ব দিতেন। ওই সময় তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে চাঁদাবাজি, নারীদের শ্লীলতাহানি ও মোটরসাইকেল চুরি করে ধরা পড়ে মামলার আসামি হয়েছেন। পূজার মাঠে মেলা দেখতে গিয়ে এক মেয়েকে শ্লীলতাহানি করতে গিয়ে র্যাবের লাঠিপেটা খেয়ে দৌড়ে পালিয়ে জীবন রক্ষা করেছিলেন। তিনি অচিন্তপুর গ্রামের রোজদার হত্যা মামলার চার্জভুক্ত আসামি। এত অপকর্ম করার পরও ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গেলে জীবন বাঁচানোর স্বার্থে গোপনে আব্দুল হাইয়ের সাথে যোগাযোগ করে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে তিনি নৌকা প্রতীক পেতে উঠে পড়ে লেগেছেন।
এছাড়াও নৌকা প্রতীক পেতে মাঠে নেমেছেন দেবতলা গ্রামের নাসির উদ্দিন খান। তিনি ১৯৮০ সালে খুলনা বিএল কলেজের ছাত্রলীগের সদস্য পদে ছিলেন। ১৯৮৩ সালে তিনি ঝিনাইদহ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও শৈলকুপা উপজেলার ছাত্রলীগের সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৯৯৬ সালে শৈলকুপা উপজেলার যুবলীগের আহবায়ক হিসাবে প্রায় ১৪ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি রাজনীতি জীবনে বর্তমান শৈলকুপা সংসদ সদস্য আব্দুল হাইয়ের কাছে মানুষ হিসাবে পরিচিত রয়েছেন।
বর্তমান চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হক তোজাম সারাজীবন জাসদ দলের রাজনীতি করে এসেছেন। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন মামলা ছিল। তিনি ক্রসফায়ারের আসামি হিসাবে চিহিৃত রয়েছেন। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় তিনি জীবনের নিরাপত্তা ভেবে আব্দুল হাইয়ের হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। এবারের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করতে আগ্রহী।
দলের আরেক প্রার্থী মোঃ জিল্লুর রহমান তপন সেটেলমেন্ট অফিসে আমিনের চাকুরী করতেন। গত ইউনিয়ন নির্বাচনের সময় চাকুরী ছেড়ে দিয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে পরাজিত হন। এরপরে কয়েক বছরে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষের সময় পুলিশ লাঞ্চিতসহ পুলিশের অস্ত্র ছিনতাই হয়ে যায়। সেই ঘটানায় পুলিশ বাদি হয়ে মোঃ জিল্লুর রহমান তপন ও বর্তমান চেয়ারম্যান তোজাম্মেলকে আসামি করে শৈলকুপা থানায় মামলা করেন।
একটি সূত্র জানায়, বর্তমান প্রায় ১৩/১৪টি মামলার আসামি মোঃ জিল্লুর রহমান তপন। এবারের ইউনিয়ন কমিটিতে সদস্যপদ লাভ করে নৌকা প্রতীক পেতে আগ্রহী। তার পিতা লুৎফর রহমান বিশ্বাস কামরুজ্জামানের সঙ্গে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন। আরেক প্রার্থী ইদ্রীস আলী জাতীয় পার্টি করতেন। তার মামা আব্দুল হাই এমপি হওয়ার পরে এবারের ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য পদ লাভ করে নৌকা প্রতীক পেতে আগ্রহী।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।