এই দেশ আমার, তস্করদের না

(১)
তবে কি সন্তানদের নিয়ে বিদেশেই চলে যাব? বিলাতে গিয়ে থাকবো? কেউ বলবেন সেখানও তো নিরাপত্তা নাই। কিন্তু সেখানে অন্যায় হলেও এই বলে অন্তত সান্ত্বনা পাবো যে এই দেশ আমার না, এই সরকার আমার না, বিদেশীরা আমার প্রতি অন্যায় করেছে। এখানে এইসব কি হচ্ছে ভাই? ছোট্ট একটা মেয়ে, তাকে নির্যাতন করা হয়েছে, হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারীদের রক্ষা করার জন্যে যদি রাষ্ট্রযন্ত্র পাঁয়তারা শুরু করে দেয় আপনি কার আছে বিচার চাইবেন? কাকে দোষ দিবেন?
এই মেয়েটা আমার মেয়েও হতে পারতো। আমার মেয়ের চেয়ে এই হতভাগী মেয়েটা বছর দুই তিন বড় হবে- আমার বন্ধুদের অনেকের ছেলেমেয়েই আছে যাদের বয়স বিশ ছাড়িয়ে গেছে, বিশ্ববিদ্যলয় পর্যায়ে পড়ালেখা করে বা বিয়ে টিয়ে করে ফেলেছে। আমি না হয় ফেসবুক বন্ধ করে বসে থাকবো বা অন্য তর্কে ব্যস্ত হয়ে যাবো, সোহাগীর বাবাকে আপনি কি বলে সান্ত্বনা দিবেন। বেচারা নিজের চোখে মেয়ের ক্ষতবিক্ষত লাশ দেখেছে। নিজের সন্তানের নিথর শরীরে অত্যাচারের চিহ্ন দেখতে হয়েছে তাকে নিজের চোখে।
সকাল থেকে কল্পনা করতে চেষ্টা করছি- সোহাগীর বাবাকে ওরা কিভাবে কি বলেছে। ভাবুন তো! আপনি পারবেন বলতে, 'ও মিয়াভাই, তোমার তনু কিভাবে মরল সেটা তো ডাক্তার সাহেবেরা বলতে পারছে না। কোন লক্ষণ নাকি পাচ্ছে না। ওকে নাকি কেউ মারে নাই।'
(২)
না। আমি যাবো না। 'এই মৃত্যু উপত্যকা আমার না' এই কথা আমি বলবো না। এই দেশ আমার, তস্করদের না। ভালো হলেও আমার দেশ, মন্দ হলেও আমার দেশ।
(৩)
দায় আমারও। তনুকে জীবন দিতে হয়েছে তার জন্য আমারও দায় আছে। সোহাগী তো একজন- এরকম যতটা অন্যায় হয়েছে সবকয়টার জন্যেই আমার দায় আছে। আপনারও দায় আছে- কম বা বেশী। দায় শোধের উপায় হচ্ছে সবার জন্যে বিচার নিশ্চিত করা। সবার জন্যেই।
আমার সন্তানের জন্য আমার দেশটাকে বসবাসযোগ্য আমি করবো না তো কি সাহেবরা এসে করে দিয়ে যাবে? এই দেশে ভালো কিছু হলে কৃতিত্ব নিব আর মন্দ হলে লড়বো না, সেটা হবে না। অন্যকে গালি দিয়েই দায় দায়িত্ব শেষ? সরকারকে গালি দিলেই দায়িত্ব শেষ? সরকারের তো অবস্থা হয়েছে এমন যে সকল মন্দ কাজ করবে আর তারপর ভাব নিবে গান্ধীর তিন বান্দরের মত। মন্দ কিছু হলে সেটা দেখবে না, মন্দ কিছুর বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে সেটা শুনবে না, মন্দ কিছু দেশে হয়েছে কিনা সেটা স্বীকারও করবে না।
আমাদের জন্যে এক প্রজন্ম বন্দুক হাতে লড়েছে, জীবন দিয়েছে। আর আমি এই রাজনৈতিক লড়াইটা করতে পারবো না? লড়াইটা করতে হবে ভাই। যার যার অবস্থান থেকে লড়তে হবে। তরুণরা ছাত্ররা মিছিল করছে, সমাবেশ করছে, স্মারকলিপি দিচ্ছে। আপনি কি করছেন?
(৪)
সংক্ষেপেই বলি। আওয়ামী লীগ তো ক্ষমতায় বসে আছে। ওরা ভাবছে দেশের ইজারা পেয়ে গেছে। ভাববে না কেন? ওরা তো দেখতে পাচ্ছে বিএনপি-জামাত ছাড়া ওদেরকে চ্যালেঞ্জ করার মতো কেউ নাই। বিএনপি জামাতকে সাইজ করে ফেলতে পারলেই কাজ শেষ। আর বাকি যারা আছে ওদেরকে পাত্তা দেওয়ার কিছু নাই।
এইখানেই আপনি আমি ফেইল মেরেছি। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি যে আওয়ামী লীগকে দেশটা ছেড়ে দেয়নাই যা খুশী তাই করার জন্যে সেই জিনিসটা আপনি আমি করতে পারিনাই। আওয়ামী লীগও মজা পেয়ে গেছে। তিনি ভেবে বসে আছেন, 'আরে এইসব লিবারেল সেক্যুলার লোকজন এরা যাবে কই, যতই ফালাফালি করুক আসতে তো হবে আমার কাছেই।' আপনাকে আমাকে পকেটে ঢুকিয়ে রেখেছেন ভেবে এখন তিনি অরাজনৈতিক নানাপ্রকার শক্তিকে তোষণ করছেন।
উনাকে এই বার্তাটা দিতে হবে যে, না, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকলেই উনার কাছে আনুগত্য বন্ধিক রাখে নাই। আওয়ামী লীগ ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির জমায়েট আছে এই খবরটা উনাকে পৌঁছে দিতে হবে।
কিভাবে দিবেন?
(৫)
সেটাই ভাবেন। যারা সরকারে আছেন ওদেরকে আপনি যদি সরানোর ক্ষমতা না রাখেন তাইলে ওরা আপনার কথার গুরুত্ব দিবে কেন? আপনি ফেসবুকে ওদের সম্পর্কে মন্দ কথা বললে তখন ওরা একটু কখনো একটু ডিফেন্সিভ হবে বটে, কিন্তু উল্টা আবার মারতেও আসবে। ওরা তো জানে যে ক্ষমতা থেকে ওদেরকে সরানোর মুরোদ আপনার নাই।
দেখেন না, সরকার প্রধান এখন কি ভাষায় কথা বলেন? তিনি আমাদেরকে এটা করে দিচ্ছেন ওটা দিয়ে দিচ্ছেন সেটা বানিয়ে দিচ্ছেন। ভাবখানা যেন আমাদের প্রতি কি মেহেরবানীটাই না তিনি করছেন! আর আপনি আমি যখন বিচার টিচার চেয়ে উনাদের কাছে দাবী টাবি করি, তখন উনাদের ডিস্টার্ব হয়। বিরক্ত হয়ে উনারা বলেন, 'কেন এইসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা নিয়ে লাফাচ্ছেন, এগুলি তো একটু আধটু হবেই'।
মুল কারণটা ঐখানে। আমাদের জমায়েত নাই। এক জায়গায় জমায়েত করেন। ওরা একবার যদি টের পায় যে ওদের ক্যাম্পের বাইরে লোকজন আছে যাদের উপর মানুষ ভরসা করতে পারে, তাইলে আপনি ক্ষমতায় যেতে পারেন আর নাই পারেন, ক্ষমতায় যারাই থাকবে আপনার দাবীর গুরুত্ব উনারা ঠিকই দিবেন।
দেখেন না? মোল্লারা জমায়েত করতে পারে বলে সরকার ওদের তাঁবেদারি করে। আমাদের জমায়েত যদি এক ক্যাম্পে আনতে পারি তাইলে তখন দেখবেন সরকার মন্ত্রী কোর্ট কাচারি সকলেই কেমন সেক্যুলার হয়ে গেছে। তখন দেখবেন এইসব নাস্তিক হত্যা নারী নির্যাতন এইসবে বিরুদ্ধে সরকার কিরকম তড়িৎ ব্যাবস্থা নেয়।
(৬)
আমাদের সন্তানদের জন্যে একটা স্বাধীন পরিবেশ যদি বানাতে চান, ন্যায্য সমাজ যদি বানাতে চান- এটা আওয়ামী লীগ আপনাকে করে দিবে না। আপনাকেও লড়তে হবে। লড়াইটা কঠিন না। একটা ক্যাম্পে জমায়েত হয়ে দেখুন ন্যুনতম কিছু ইস্যুতে একটা ঐক্য তৈরি করে, তাইলেই আপাতত অর্ধেক কাজ হয়ে যাবে।
বাকি পথ আপনি পথেই চিনে নিতে পারবেন।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।