- হোম
- >
- মুক্তিযুদ্ধ
- >
- ১৩ ঘন্টার মধ্যে পিরোজপুরে অস্ত্রাগার দখল
১৩ ঘন্টার মধ্যে পিরোজপুরে অস্ত্রাগার দখল
বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার ১৩ ঘন্টার মধ্যে পিরোজপুরের মুক্তিকামী জনতা মহকুমা অস্ত্রাগার দখল করে রাইফেল গুলি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে পিরোজপুর হচ্ছে প্রথম মহকুমা, যেখানে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহকুমা সংগ্রাম কমিটি বঙ্গবন্ধুর আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণার প্রথম প্রহরেই সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করে।
২৬ মার্চ ভোর বেলায় পিরোজপুরে খবর আসে যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাসভবনে বসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন এবং দখলদার পাকবাহিনী তাকে আটক করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গেছে। ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ চলছে।
এ খবর পেয়েই পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ সদস্য এবং মহকুমা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি এডভোকেট এনায়েত হোসেন খানের বাসভবনে এক জরুরি সভায় মিলিত হয়ে সংগ্রাম কমিটি দুপুর ২ টায় স্থানীয় টাউন ক্লাব মাঠে এক সর্বদলীয় জনসভা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়। শহরে শুরু হয় মাইকিং। চৈত্রের প্রচণ্ড দাবদাহ উপেক্ষা করে হাজার হাজার মুক্তিপাগল ছাত্র যুবক জনতা ছুটে আসে জনসভার নির্দিষ্ট স্থানে।
শ্লোগানে শ্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠে সমগ্র শহর। পিরোজপুর মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মহকুমা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট এনায়েত হোসেন খান এমএনএ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় অন্যান্যের মধ্যে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য ডাঃ ক্ষিতীশ চন্দ্র মন্ডল ও ডাঃ আব্দুল হাই বক্তব্য রাখেন। এনায়েত হোসেন খানের ভাষণের আবেগ উত্তেজনা এতই তীব্র ছিল যে হাজার হাজার জনতা অস্ত্র চাই, অস্ত্র চাই, বঙ্গবন্ধুর মুক্তি চাই গগন বিদারী শ্লোগান দিতে শুরু করে।
এ সময় সভাপতি বলেন, এখনি আপনাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়া হবে। চলুন আমার সাথে। এমএনএ এনায়েত হোসেন খানের নেতৃত্বে স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষিত হাজার হাজার ছাত্র জনতা ছুটে গিয়ে মহকুমা অস্ত্রাগার দখল করে এর গেট ভেঙ্গে ৮২টি থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল আর ১২ বাক্স ভর্তি রাইফেলের গুলি করায়ত্ত করে।
২৭ মার্চ সকালে ছুটিতে আসা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অফিসার লে. জিয়াউদ্দিন আহম্মেদের নামে মাইকিং করে বিকেলে সরকারি বালক বিদ্যালয় মাঠে রাইফেল ও গুলিসহ সকলকে উপস্থিত হবার নির্দেশ প্রদান করা হয়। এদিন বিকেলে সেনাবাহিনী, ইপিআর এবং পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত এবং ছুটিতে আসা ব্যক্তিদের এবং যুবকদের নিয়ে গঠন করা হয় বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনী।
শহরের সরকারি বালক বিদ্যালয় মাঠ, পিটিআই প্রাঙ্গণ, ওয়াপদা প্রাঙ্গন, করিমুন্নেচ্ছা বিদ্যালয় মাঠ ও রায়েরকাঠী জমিদার বাড়ীর বিশাল প্রাঙ্গণে লেঃ জিয়ার কমান্ডে শুরু হয় কমান্ডো প্রশিক্ষণ। এ সব যোদ্ধারা প্রশিক্ষণ নিয়ে খুলনার গল্লামারি গিয়ে সরাসরি পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে বীরত্বের পরিচয় দেয়।
মহকুমা সংগ্রাম কমিটির একমাত্র জীবিত নেতা সেসময়ের প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য অশীতিপর বৃদ্ধ ডাঃ ক্ষিতীশ চন্দ্র মন্ডল সেদিনের অস্ত্রাগার দখলের স্মৃতিচারণ করে বলেন বঙ্গবন্ধুকে আটকের খবরে মানুষ এতটাই উত্তেজিত হয়েছিল যে আমরা নির্দেশ দিলেই জনতা সকল সরকারি স্থাপনা গুড়িয়ে দিতো।
৯নং সেক্টরের সুন্দরবন সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর (অবঃ) জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা শুনেই আমি সামরিক অফিসার হিসেবে আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য চূড়ান্ত করেছিলাম, নিয়েছিলাম গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতি। আর সেজন্যই সুন্দরবনে ঘাটি তৈরি করে পুরো ৯ মাস শত্রুদের আঘাতে আঘাতে পর্যুদস্ত করতে সক্ষম হয়েছি।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।