- হোম
- >
- ধর্ম ও জীবন
- >
- দোলযাত্রা বা হোলি উৎসবের ইতিহাস
দোলযাত্রা বা হোলি উৎসবের ইতিহাস
দীপঙ্কর গৌতম
প্রিন্টঅঅ-অ+

দোলযাত্রা একটি হিন্দু বৈষ্ণব উৎসব। বহির্বঙ্গে পালিত হোলি উৎসবটির সঙ্গে দোলযাত্রা উৎসবটি সম্পর্কযুক্ত। এই উৎসবের অপর নাম বসন্তোৎসব। ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে দোলযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।
বৈষ্ণব বিশ্বাস অনুযায়ী, ফাল্গুনী পূর্ণিমা বা দোলপূর্ণিমার দিন বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ আবির ও গুলাল নিয়ে রাধিকা ও অন্যান্য গোপীগণের সহিত রং খেলায় মেতেছিলেন। সেই ঘটনা থেকেই দোল খেলার উৎপত্তি হয়। দোলযাত্রার দিন সকালে তাই রাধা ও কৃষ্ণের বিগ্রহ আবির ও গুলালে স্নাত করে দোলায় চড়িয়ে কীর্তনগান সহকারে শোভাযাত্রায় বের করা হয়। এরপর ভক্তেরা আবির ও গুলাল নিয়ে পরস্পর রং খেলেন। দোল উৎসবের অনুষঙ্গে ফাল্গুনী পূর্ণিমাকে দোলপূর্ণিমা বলা হয়। আবার এই পূর্ণিমা তিথিতেই চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্ম বলে একে গৌরপূর্ণিমা নামেও অভিহিত করা হয়।
দোলযাত্রা উৎসবের একটি ধর্মনিরপেক্ষ দিকও রয়েছে। এই দিন সকাল থেকেই নারীপুরুষ নির্বিশেষে আবির, গুলাল ও বিভিন্ন প্রকার রং নিয়ে খেলায় মত্ত হয়। শান্তিনিকেতনে বিশেষ নৃত্যগীতের মাধ্যমে বসন্তোৎসব পালনের রীতি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময়কাল থেকেই চলে আসছে। দোলের পূর্বদিন খড়, কাঠ, বাঁশ ইত্যাদি জ্বালিয়ে এক বিশেষ বহ্ন্যুৎসবের আয়োজন করা হয়। এই বহ্ন্যুৎসব হোলিকাদহন বা নেড়াপোড়া নামে পরিচিত। উত্তর ভারতে হোলি উৎসবটি বাংলার দোলযাত্রার পরদিন পালিত হয়।
পৌরাণিক উপাখ্যান ও লোককথা
দোলযাত্রা বা হোলি উৎসব সংক্রান্ত পৌরাণিক উপাখ্যান ও লোককথাগুলি মূলত দুই প্রকার: প্রথমটি দোলযাত্রার পূর্বদিন পালিত বহ্ন্যুৎসব হোলিকাদহন বা মেড়াপোড়া সংক্রান্ত, এবং দ্বিতীয়টি রাধা ও কৃষ্ণের দোললীলা বা ফাগুখেলা কেন্দ্রিক কাহিনি।
হোলিকাদহন
স্কন্দপুরাণ গ্রন্থের ফাল্গুনমাহাত্ম্য গ্রন্থাংশে হোলিকা ও প্রহ্লাদের উপাখ্যান বর্ণিত হয়েছে। হোলিকা ছিলেন মহর্ষি কশ্যপ ও তাঁর পত্নী দিতির পুত্র হিরণ্যকশিপুর ভগিনী। ব্রহ্মার বরে হিরণ্যকশিপু দেব ও মানব বিজয়ী হয়ে দেবতাদের অবজ্ঞা করতে শুরু করেন। কিন্তু তাঁর পুত্র প্রহ্লাদ ছিলেন বিষ্ণুর ভক্ত। প্রহ্লাদ বিষ্ণুকে নিজ পিতার উপরে স্থান দেওয়ায় ক্রুদ্ধ হয়ে হিরণ্যকশিপু নিজের পুত্রকে পুড়িয়ে মারার আদেশ দেন। দাদার আজ্ঞায় হোলিকা প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে অগ্নিতে প্রবেশ করেন। কিন্তু বিষ্ণুর কৃপায় প্রহ্লাদ অক্ষত থাকেন; বরং আগুনে পুড়ে হোলিকারই মৃত্যু হয়। হোলিকার এই অগ্নিদগ্ধ হওয়ার কাহিনিই দোলের পূর্বদিনে অনুষ্ঠিত হোলিকাদহন বা চাঁচর উৎসবের সঙ্গে যুক্ত।
শান্তিনিকেতনের বসন্তোৎসব
দোলযাত্রা উৎসব শান্তিনিকেতনে বসন্তোৎসব নামে পরিচিত। অতীতে শান্তিনিকেতনের বিদ্যালয়ে বসন্তের আগমন উপলক্ষ্যে একটি ছোটো ঘরোয়া অনুষ্ঠানে নাচগান, আবৃত্তি ও নাট্যাভিনয় করা হত। পরবর্তীকালে এই অনুষ্ঠানটি পরিব্যপ্ত হয়ে শান্তিনিকেতনের অন্যতম জনপ্রিয় উৎসব বসন্তোৎসবের আকার নেয়। ফাল্গুনী পূর্ণিমা অর্থাৎ দোলপূর্ণিমার দিনই শান্তিনিকেতনে বসন্তোৎসবের আয়োজন করা হয়। পূর্বরাত্রে বৈতালিক হয়। দোলের দিন সকালে ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল গানটির মাধ্যমে মূল অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। সন্ধ্যায় গৌরপ্রাঙ্গনে রবীন্দ্রনাথের কোনো নাটক অভিনীত হয়।
লেখক: সাংবাদিক
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।