- হোম
- >
- কৃষিজ ও প্রাণিজ
- >
- গাইবান্ধায় কাটিং ও কলম পদ্ধতিতে বাঁশ চাষ
গাইবান্ধায় কাটিং ও কলম পদ্ধতিতে বাঁশ চাষ

গাইবান্ধায় উদ্ভাবক নজরুল ইসলামের কাটিং ও কলম পদ্ধতিতে বাঁশ চাষ এলাকা ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আধুনিক কাটিং ও কলম পদ্ধতিতে বাঁশ চাষ করে গাইবান্ধার কৃষকরা এখন সফলতার মুখ দেখছেন। সেই সাথে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই পদ্ধতিতে বাঁশ চাষ। এক দিকে সফলতা দেখে যেমন অনেকেই উৎসাহিত হচ্ছে অন্যদিকে নজরুল ইসলামের এই পদ্ধতিতে বাঁশ চাষ গাইবান্ধা ছাড়াও দেশের জেলাগুলোতে প্রতিনিয়ত জনপ্রিয় হচ্ছে।
পুরাতন পদ্ধতিতে বাঁশ লাগানোর পর বাঁশের উৎপাদন কমে প্রায় বিলুপ্ত পথে। তাই গাইবান্ধার কৃষি বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকতার্, কৃষিবিদ নজরুল ইসলাম বাঁশ ঝাড় রক্ষায় চেষ্টা করতে থাকেন। এক পর্যায়ে চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে নিরলসভাবে গবেষনা শুরু করেন ১৯৬৮ সালে থেকে। প্রথমেই কাটিং পদ্ধতিতে বাঁশ চাষ করেন কিন্তু কোনভাবেই এই পন্ধতিতে চাষের সফলতা আসছিলো না। এভাবে প্রতি বছরই গভেষণা করতে থাকেন আর নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করেন। কিছুদিন পরে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ তারপর তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আবার শুরু করেন কাটিং পদ্ধতিতে বাঁশ চাষে গবেষণা। এতেও সফল হননি বরং বাঁশের চারাগুলো কিছুদিন পরে মারা যাচ্ছিলো। হতাশ হয়ে পড়লেন তিনি তবুও আশা ছাড়লেন না।
নতুন স্বপ্ন নিয়ে আবার এভাবেই বিভিন্ন নিয়মে বাঁশ এর কাটিং পদ্ধতি চালিয়ে যায়। দীর্ঘ ১১ বছর এই পদ্ধতিতে বাঁশ চাষে ব্যর্থ হওয়ার পর ১২ বছরের মাথায় সফলতার মুখ দেখেন নজরুল ইসলাম। তারপরে শুরু করের এই কলম/কাটিং পদ্ধতিতে বাঁশ চাষ। প্রথমে নিজের বাড়িতে পরে গাইবান্ধার অন্তত ২০ গ্রামের ৩০ বিঘা জমিতে কাটিং পদ্ধতিতে বাঁশ চাষ করেন।
এই পদ্ধতিতে খুব অল্প সময়ে বাঁশ ব্যবহার উপযোগী হয়। বিক্রিও করা যায় এবং নিজের কাজেও লাগানো যায়। তার উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে বাঁশ চাষ জনপ্রিয় হলে তার ডাক পড়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে। তার উদ্যোগে দেশের কয়েকটি জেলায় তিনি এই পদ্ধতিতে বাঁশ চাষ করেন। সেখানেও তার ব্যাপক সফলতা আসে।
এই পদ্ধতিতে সাঘাটা উপজেলার সাবেক চেয়্যারম্যান আলতাফ হোসেন সরকার বাঁশ চাষ করেন। ২০০৪ সালে তিনি উদ্ভাবক নজরুল ইসলামের পরামর্শে এই কাটিং পদ্ধতিতে ৩ বিঘা জমিতে বাঁশ লাগান। ২০০৮ সাল থেকে তিনি বাঁশ বিক্রয় ও নিজের প্রয়োজনে কাটতে শরু করেন। এই ঝাড় থেকে বছরে এক থেকে দেড় লাখ টাকা আয় হয়। এ পর্যন্ত ১৫ লাখ টাকার বাঁশ বিক্রি করেছেন। আরও প্রায় ২৫ লাখ টাকার বাঁশ বিক্রির উপযোগি হয়েছে উঠেছে। এই কটিং পদ্ধতির বাঁশঝাড়ের পাশেই ছিলো আগের পুরনো বাঁশ ঝাড়। যা থেকে বছরে ১০ হাজার টাকা বিক্রয় করা সম্ভয় হয় না।
বাঁশ চাষী আলতাফ হোসেন সরকার জানান, এই পদ্ধতিতে বাঁশ চাষ করে অল্প সময়ে বাঁশ বড় এবং মোটা হয়। তাছাড়া অন্য গাছ ও ফসলের চেয়ে অল্প সময়ে এই পদ্ধতিতে বাঁশ চাষ করে লাভবান হওয়া সম্ভব।
এক পর্যায়ে শুধু গাইবান্ধায় নয় দেশের বিভিন্ন জেলায় উদ্ভাবক নজরুল ইসলামের এই বাঁশ চাষে কুমিল্লা, চাদপুর, সিলেট, পঞ্চগড়, নওগা, জেলায় ছড়িয়ে পড়ে।
নজরুল ইসলাম বলেন, যতো দিন বেঁচে থাকবেন কৃষকের পাশে থাকবেন এবং কৃষকের সাথে কাজ করবেন। দেশের যে কোন জেলার কৃষক চাইলে তার সাথে যোগাযোগ করে এই বাঁশ চাষ করতে পারবেন।
এই বিষয়ে গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আ ক ম রুহুল আমীন বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে নজরুল ইসলামের কাজে উৎসাহ বাড়াতে কৃষকদের মাঝে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।