ইনানীতে বঙ্গবন্ধুর ‘অজ্ঞাতবাসে’ সহযোগিতাকারী আদিবাসীদের সংবর্ধনা
১৯৫৮ সালে রাজনৈতিক হুলিয়া মাথায় নিয়ে ‘অজ্ঞাতবাসে’ থাকা কক্সবাজারের ইনানী অরণ্যের সেই চেনছড়ি চাকমা পল্লীর আদিবাসী পরিবারের সদস্যদের সন্মাননা জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) বঙ্গবন্ধুর ৯৭তম জন্মদিনে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং কক্সবাজার সদর আসনের এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল উখিয়ার অরণ্যঘেরা ইনানী চেনছড়ি গ্রামে গিয়ে ১০ আদিবাসী পরিবারের সদস্যদের হাতে রজনীগন্ধা দিয়ে সন্মাননা জানান।
আদিবাসী পল্লীর প্রয়াত চাকমা নেতা ফেলোরাম রোয়াজা ছিলেন জাতির জনকের অন্যতম ঘনিষ্টজন। তার বাগান বাড়িতে ছিল বঙ্গবন্ধুর এককালের ‘অজ্ঞাতবাস।’ প্রয়াত ফেলোরাম রোয়াজা চাকমার উত্তরসুরি সদস্যদের সম্মাননা জানাতেই জাতির জনকের ৯৭তম জন্মদিন উপলক্ষে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন চেনছড়ি চাকমাপল্লীতে এই ব্যতিক্রমধর্মী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
সমুদ্রপাড়ের অরণ্যঘেরা ইনানী চেংছড়ি গ্রামটি এখন ইতিহাসের অংশ। কক্সবাজার জেলা শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণের এ গ্রামটি জাতির জনকের স্মৃতি বিজড়িত। আজ থেকে প্রায় ৫৮ বছর আগে ১৯৫৮ সালে পুর্ব পাকিস্তানের নিষিদ্ধ রাজনীতির এক দুঃসময়ে পূর্ব বাংলার অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এখানেই এসেছিলেন। গ্রামের আদিবাসী নেতা প্রয়াত ফেলোরাম রোয়াজা চাকমার বাগান বাড়ীতে অবস্থান করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাই ইনানী চেংছড়ি গ্রামটি এখন ইতিহাসের অংশ হয়ে পড়েছে। দীর্ঘকাল ধরে জাতির নিকট অজানা ছিল এই ইতিহাস।
পরবর্তীতে এ সংক্রান্ত ইতিহাস জানাজানি হয় ২০১০ সালের ১৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯১তম জন্মদিনে।
গণমাধ্যমে ‘ইনানীতে বঙ্গবন্ধুর অজ্ঞাতবাস’ শীর্ষক অজানা অধ্যায় নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ পায়। প্রকাশ পায় সেই দুর্গম এলাকায় বঙ্গবন্ধুকে রান্না করে খাওয়ানো সেই নারী স্থানীয় প্রয়াত সখিনা খাতুন এবং বঙ্গবন্ধুকে সহযোগিতাকারী আদিবাসী নেতা প্রয়াত ফেলোরাম রোয়াজা চাকমার পরিবারের কথা।
ইতিহাসের এই অজানা অধ্যায়ের সাথে জড়িত উখিয়ার দুই বঙ্গবন্ধু ভক্ত সোনার পাড়ার মুক্তিযোদ্ধা মাষ্টার লোকমান হাকিম এবং রাজাপালং খয়রাতি গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আবদুল খালেকও এখন কালের সাক্ষী হয়ে রয়েছেন।
বঙ্গবন্ধুর ৯৭ তম জন্মদিন উপলক্ষে কক্সবাজার সদর-রামু আসনের এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল, জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন এবং পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা চেনছড়ি আদিবাসী পল্লীতে যান। তারা জাতির জনকের স্মৃতি বিজড়িত স্থানটি পরিদর্শন করেন।
এমপি কমল প্রয়াত আদিবাসী নেতা ফেলোরাম চাকমার উত্তরসুরি আদিবাসী দরিদ্র পরিবারের সদস্যদের জন্য এক লাখ টাকার অনুদানও ঘোষণা দেন। আদিবাসীদের ৫ দশমিক ৫৭ একরের সরকারি খাস জমির অবৈধ দখলদারদের সরিয়ে অবিলম্বে ঘেরা দিয়ে সেখানে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি ফলক স্থাপনের কথাও জানান জেলা প্রশাসক।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজারের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (উপ সচিব) আবুল ফজল মোঃ আলাউদ্দিন খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ডঃ অনুপম সাহা, উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাঈনুদ্দিন, উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান, উখিয়া উপজেলা ভুমি কর্মকর্তা নুরুদ্দিন মাহমুদ শিবলী, মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ শাহজাহান, মুক্তিযোদ্ধা পরিমল বড়ুয়া, সাংবাদিক তোফায়েল আহমদ, মুহাম্মদ আলী জিন্নাত, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আবদুর রহিম, উখিয়া উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা কবির আহমদ ও একটি বাড়ি একটি খামার সমন্বয়ক আবদুল করিম, জালিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন চৌধুরী প্রমুখ।
এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষ্যে প্রশাসন, জেলা ও উপজেলা শহরে রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবি সংগঠন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান র্যালীসহ দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।