‘বাংলাদেশ ও ভারত সরকার যৌথভাবে সুন্দরবন ধ্বংস করছে’
সুন্দরবন অভিমুখী জনযাত্রা যশোর থেকে নওয়াপাড়া, ফুলতলা ও দৌলতপুর হয়ে খুলনার পথে চলছে। জনযাত্রা খুলনায় পৌছানোর পর বিকালে হাদিস পার্কে জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। সুন্দরবন রক্ষায় রামপাল ও ওরিয়ন বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল এবং জাতীয় কমিটি ঘোষিত সাত দফা বাস্তবায়নের দাবিতে ঢাকা সহ সারা দেশ থেকে সুন্দরবন অভিমুখী জনযাত্রার আজ তৃতীয় দিন। পথে পথে চলছে জনসংযোগ, প্রচার পত্র বিলি, পরিবেশিত হচ্ছে সুন্দরবন রক্ষার গান।
সুন্দরবন জনযাত্রা আজ সকাল ৯টায় মিছিল সহ যশোরের বিভিন্ন পথ প্রদক্ষিণ করে। এরপর সকাল ১০ টায় যশোর থেকে রওনা করে। যশোরের নওয়াপাড়ায় জনযাত্রা মিছিল সহকারে প্রবেশ করে। নওয়াপাড়ায় বেঙ্গল টেক্সটাইলের সামনে নুরুজ্জামান সর্দারের সভাপতিত্বে ও চিনময় সরকারের পরিচালনায় এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর জনযাত্রা ফুলতলায় পৌছে সেখানে জাতীয় কমিটির খূলনা জেলার নেতৃবন্দ ও স্থানীয় অসংখ্য মানুষ জনযাত্রাকে স্বাগত জানিয়ে জনযাত্রায় যোগ দেন। এর ফুলতলা স্বাধীনতা চত্ত্বরে গাজি নওশেরের সভাপতিত্বে ও আবদুল মালেকের পরিচালনায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ফুলতলা থেকে জনযাত্রা দুপুর ১.৩০ এ দৌলতপুর পৌছে। দৌলতপুরে পুর্নেন্দু দে’র সভাপতিত্বে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এসব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, রুহিন হোসেন প্রিন্স, বজলুর রশীদ ফিরোজ, সাইফুল হক, জোনায়েদ সাকি, কামরুল আহসান, হাফিজুর রহমান ভুইয়া, ডা. মনোজ দাস, দেলোয়ার উদ্দীন দিলু, রহমান চৌধুরি, মানস নন্দী, মোশারফ হোসেন নান্নু, শহীদুল ইসলাম সবুজ, ইয়াসিন মিয়া, শামসুল আলম সহ ছাত্র ও পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
বিভিন্ন সভায় নেতৃবৃন্দ যশোরের জনসভার অনুমোদন বাতিল ও বিকালে সমাবেশ মিছিল প্রতিবন্ধকতা তৈরীর তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন কোন দমন পীড়ন সুন্দরবন তথা সম্পদ রক্ষার আন্দোলন থেকে জনগণকে বিরত করতে পারবে না। বক্তারা এ ধরণের দমন পীড়নের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জবাব দেয়ার আহবান জানান। নেতৃবৃন্দ বলেন, সুন্দরবনের আন্দোলনে বিজয়ী না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়বনা।
সমাবেশে আনু মুহাম্মদ বলেন, “কোন কোন মন্ত্রী নির্বোধের মতো বলেন, মানুষ আগে, পশু-পাখি-গাছপালা-পরিবেশ পরে। যে পরিবেশে গাছপালা-পশু-পাখি-মাছ-প্রাণ বাঁচে না সেই পরিবেশে যে মানুষও বাঁচতে পারে না, তা বুঝতে কান্ডজ্ঞানই যথেষ্ট। কিন্তু মুনাফার লোভে এদের কান্ডজ্ঞানও বিলুপ্ত হয়েছে। বিদ্যুতের কথা বলে দেশী বিদেশী কিছু ব্যবসায়ীর হাতে বিদ্যুৎ খাত সহ গোটা দেশকেই তুলে দেয়া হচ্ছে। এই ধারাতেই এখন সবচেয়ে বড় সর্বনাশের শিকার হতে যাচ্ছে সুন্দরবন।”
আনু মুহাম্মদ আরো বলেন, ”ভারতীয় কোম্পানি এনটিপিসি ভারতের পরিবেশ নীতিমালা ভঙ্গ করে বাংলাদেশে সুন্দরবন বিধ্বংসী প্রকল্প পরিচালনা করছে। কার্যত কর্পোরেট স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের সরকার যৌথভাবে সুন্দরবন ধ্বংসে লিপ্ত হয়েছে। কিন্তু এই সুন্দরবন বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের জন্যই বড় আশ্রয়। সেই জন্য দুইদেশের মানুষকে যৌথভাবেই আন্দোলন ও সংহতির মাধ্যমে সুন্দরবনকে রক্ষা করতে হবে। ”
উল্ল্যেখ্য যে, সুন্দরবন জনযাত্রার প্রতি সংহতি জানিয়ে ভারত থেকে ১২ সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল ১০ মার্চ থেকে জনযাত্রায় অংশ নিচ্ছেন। প্রতিনিধি দলে আছেন পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা, গুজরাট, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, ও দিল্লীর বিজ্ঞানী, লেখক, সাংবাদিক, পরিবেশ সংগঠক, ট্রেড ইউনিয়ন নেতা, বন অধিকার সংগঠক।
তাছাড়া জনযাত্রার প্রতি সংহতি জানিয়ে গতকাল ১১ মার্চ লন্ডনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবং আজ ১২ মার্চ সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে নেদারল্যান্ডে।
দৌলতপুর থেকে জনযাত্রা খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। খুলনার হাদিস পার্কে বিকালে জনযাত্রার তৃতীয় দিনের জনসভা হবে। খুলনায় রাত্রী যাপনের পর রবিবার জনযাত্রার বহর বাগেরহাটের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবে।
যশোর থেকে খুলনার উদ্দেশ্যে যাত্রা পথের বিভিন্ন স্থানে বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ জনযাত্রায় এসে সংহতি জানান এবং সুন্দরবন রক্ষা আন্দোলনে তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেন।
জনযাত্রার সাথে ১০টি বাস ও ৭টি মাইক্রোবাসের বহর যাচ্ছে। বেশ কয়েকটি পিক-আপ ভ্যান প্রচারণা, লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং করছে। বহরের সামনে থাকছে সাংস্কৃতিক কর্মীদের পিক-আপ। বিবর্তন, সমগীত ও সাংস্কৃতিক ইউনিয়নের কর্মীরা পথে পথে গান পরিবেশন করছেন, গানে গানে ছড়িয়ে দিচ্ছেন সুন্দরবন রক্ষার আহবান।
যেসব পয়েন্ট দিয়ে জনযাত্রা যাচ্ছে সেসব জেলা সহ সারা দেশে পোষ্টার, লিফলেট, তেল,গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ছাপানো পুস্তিকা মানুষের কাছে পৌছে দেয়ার কাজ চলছে।
জনযাত্রার রোডম্যাপ :
১০ মার্চ: সাভার, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর। ১১ মার্চ: মাগুরা, ঝিনাইদাহ, যশোর। ১২ মার্চ নওয়াপাড়া, দৌলতপুর, খুলনা ও ১৩ মার্চ রপসা, বাগেরহাট, কাটাখালীতে সমাবেশ অনুষ্ঠিতহবে। পথে পথে গান, নাটক, প্রদর্শনী।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।