চাতাল নারী শ্রমিকরা আজও বৈষমের শিকার
নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রকাশ : ০৮ মার্চ, ২০১৬
প্রিন্টঅঅ-অ+
শ্রম আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগের অভাবে কয়েক হাজার চাতালকন্যার জীবনে নেমে এসেছে মানবতার চরম বিপর্যয়। দু'বেলা দু'মুঠো খাবারের জন্য এরা কেউ করছে অগ্রিম শ্রম বিক্রি, কেউবা বাধ্য হয়ে করছে দেহ বিক্রি।অধিকার বঞ্চিত এসব নারী জানেন না আন্তর্জাতিক নারী দিবস কি?
স্বামী পরিত্যক্ত, বহু বিবাহের শিকার হয়ে বিকল্প কোনো উপায় না থাকায় চাতালে কাজ করতে বাধ্য হন এসব নারীরা। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ আর নামমাত্র মজুরিতে কাজ করে জীবন ধারণ করলেও সে পথও ছোট হয়ে গেছে দিন দিন।
ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, বরিশাল, রংপুর, ফরিদপুর জেলার হতদরিদ্র নারীরা এলাকায় কাজ না পেয়ে দল বেঁধে কোনো সর্দারের অধীনে বিভিন্ন অঞ্চলের চাতালগুলোতে কাজ নেয়। প্রতিটি চাতালে আছে ৪০ থেকে ৫০ নারী শ্রমিক, যাঁদের অধিকাংশই স্বামী পরিত্যক্ত অথবা বিধবা। আবার অনেক চাতালকন্যার জন্মই হয় চাতাল পরিবারে।
তাঁর মা-বাবা দুজনে মিলেই কোনো চাতালে কাজ করত, তাঁদের ঘরে জন্ম নেওয়া ওই কন্যাশিশুটি একদিন বেড়ে ওঠে ১৩-১৪ বছরে। তাকেও বিয়ে দেওয়া হয় আরেক চাতাল পরিবারের প্রায় সমবয়সী কোনো ছেলের কাছে। নতুন দম্পতিও কর্মজীবন শুরু করে চাতালেই। সংসারে দু'-একটি সন্তান জন্ম নেওয়ার পর কোনো কোনো ক্ষেত্রে ওই স্বামী নতুন করে ঘর বাঁধে ভিন্ন কোনো মেয়ের সঙ্গে। সে ক্ষেত্রে সন্তানদের দায়িত্ব নেয় ওই স্বামী পরিত্যক্ত স্ত্রী। চাতালকন্যারা মজুরি বৈষম্যের শিকার হয়ে মানবেতর জীবন কাটায় প্রতিনিয়ত।
একজন চাতালকন্যা চাল ও নগদ অর্থ মিলিয়ে দৈনিক আয় করে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। অথচ সেই ক্ষেত্রে একজন পুরুষ শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ৯০ টাকা। একজন পুরুষ সর্দারের অধীনে ৪০ থেকে ৫০ জনের চাতালকন্যার দল কাজ করে। সামান্য কোনো ব্যতিক্রম ঘটলে ওদের ওপর নেমে আসে সর্দারের অত্যাচার। অগ্রিম শ্রম বিক্রির ফলে চাতালকন্যারা মহাজনদের ঋণের জাল ছিঁড়ে বেরোতে পারে না সারা জীবনেও। শুধু মৃত্যুই তাদের ঋণ থেকে মুক্তি দেয় । কেউ কেউ মুক্তি পেতে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যায় চাতাল থেকে। কিন্তু পালিয়ে গিয়েও রেহাই মিলে না তাদের, সর্দার আবার ধরে আনে বাড়ি থেকে।
এদিকে নওগাঁয় সমস্যায় জেলায় প্রায় ৬০ ভাগ ধানের চাতাল বন্ধ হয়ে পড়ায় চাতাল কন্যারা বেকার হয়ে পড়ছেন। নওগাঁ জেলা প্রশাসন বলছে এসব চাতাল কন্যাদের অধিকার ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি দূর করতে মালিকদের তাগিদ দেওয়া হচ্ছে।
নওগাঁয় ছোট বড় ১২শ’ ধানের চাতালে কাজ করেন প্রায় ৪০ হাজার নারী শ্রমিক। চাতালে ধান সেদ্ধ, ধান শুকানো ও ধান মাড়াইয়ের কাজ করেন এসব নারী শ্রমিক।অধিকার বা নারী দিবস সম্পর্কে এসব নারী শ্রমিকদের নেই কোনো ধারণা।
মান্দার উপজেলার নুরল্লাবাদ গ্রামের আফরোজা, একই উপজেলার বুড়িদহ গ্রামের শিল্পী খাতুন জানান, তাদের স্বামীরা কারণে অকারণে মারধর করতো। তারপরও অনেক কষ্টে সংসার চালাতেন। এক পর্যায়ে অন্য নারীর ফাঁদে পড়ে তালাক দেয়। এরপর জীবন বাঁচাতে চাতালে এসে কাজ শুরু করেন দারা দুজন।
নওগাঁ সদর উপজেলার নিন্দোইয় গ্রামের তারা খাতুন ও একই উপজলোর গোয়ালবাড়ী গ্রামের আনোয়ারা খাতুন জানান, সপ্তাহে ১৪ কেজি চাল আর মাত্র ৫০ টাকা পান। অনেক সময় রোদ বৃষ্টির কারণে চাতাল বন্ধ থাকে, এ সময় কাজহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়। এ ছাড়া চাতালে নেই ভালো টয়লেট ও স্বাস্থ্যকর বাসস্থান।
নওগাঁয় ১২শ’ ধানের চাতালের মধ্যে নানা সমস্যায় ৭০ ভাগ বন্ধ হয়ে পড়েছে। ফলে বেকার হয়ে পড়েছেন নারী শ্রমিকরা। এসব নারী শ্রমিকের সরকারিভাবে পুনর্বাসনসহ অধিকার নিশ্চিত করার দাবি চাতাল মালিকদের।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।