নড়াইলে আমাদা কলেজে শেষ হলো পিঠা উৎসব
নড়াইলের আমাদা আদর্শ কলেজ চত্বরে ঐতিহ্যবাহী পিঠাউৎসব ও লাঠিখেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমাদা আদর্শ কলেজের আয়োজনে দিনব্যাপী পিঠা উৎসব, লাঠিখেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উৎসবের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক হেলাল মাহমুদ শরীফ।
কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শিকদার আব্দুল হান্নান রুনুর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফয়জুল আমির লিটু এবং লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সেলিম রেজা। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কলেজ অধ্যক্ষ আল ফয়সাল খান, লোহাগড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুর রহমান, লক্ষ্মীপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট কাজী বশিরুল হক বশির, কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য আবুল কাশেম খান, সিনিয়র সাংবাদিক সুলতান মাহমুদ, জেলা অনলাইন মিডিয় ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায় ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ হিমেল মোল্যা প্রমুখ।
দৃষ্টিনন্দন নকশা আর ভিন্ন স্বাদের পিঠাপুলি এবং লাঠিখেলা আয়োজনে উৎসবমুখর ছিল কলেজ প্রাঙ্গণ। হাজারো মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয় এ উৎসব। শাহি টুকরো পিঠা, ভাপা পিঠা, দুধকুলি, শাহি রুটি, ধুপি পিঠা, হাত আনদোসা, রসপাকান, খড়েপাকান, ফুলপাকান, পদ্মপাকান, ঝুনঝুনিপাকান, ভাজা পিঠা, তকতি পিঠা, নকশা পিঠা, সিরিঞ্জ পিঠা, জজি পিঠা, আদিপাকান, আপেল পিঠা, চিতই পিঠা, কুলি পিঠা, নাড়ু পিঠা, খেজুর পিঠা, দুধরুটি, লাভ পিঠা, ডিম পিঠা, নারকেলের চিড়া, দুধচিতই, পাতা পিঠা, ফুল পিঠা, ত্রিভুজ পিঠা, গোপাল পিঠা, তারা পিঠা, পাটিসাপ্টা, পুলি পিঠা, দুধপুলি, জিলাপি পিঠা, ধুনেপাতা চিতই, গোলাপ পিঠা, সেমাই পিঠাসহ অন্তত ৪০ প্রকার পিঠার সমারোহে ভরে উঠে স্টলগুলো।
শুধু পিঠার স্বাদ আর নকশারই বৈচিত্র্য নয়, স্টলের নামের ক্ষেত্রেও ছিল ভিন্নতা। কলেজশিক্ষার্থী পিনজিরা, বায়েজিদ, সুমন, আশিক, সাবিনা, শাহনাজ, আরশিদা, আরজু, ফাতেমা, তানিয়া, রাজিব, সারমিন, জেসমিন জানান, আমাদের পিঠা উৎসবকে আরো প্রাণবন্ত করতে স্টলের নামের ক্ষেত্রে রয়েছে ভিন্নতা। ‘জামাই আদর’ পিঠাঘর, ‘যেমন তেমন’ পিঠাঘর, ‘বাঁকা চরণ’ পিঠাঘর, ‘আড়াই মিনিট’ পিঠাঘর, ‘রসালো রস’ পিঠাঘর, ‘কুটুমবাড়ি’ পিঠাঘর, ‘রকমারি’ পিঠাঘর, রসের হাঁড়িসহ বিভিন্ন স্টল। আমাদা আদর্শ কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী সাথী খানম বলেন, ‘আবহমান বাংলার ঐহিত্য সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে পিঠাউৎসবের এই আয়োজন।
জাকিয়া তাজিন অন্তর ও আফসানা মিমি অন্তরা বলেন, ‘আজকের দিনটি একেবারে অন্যরকম। অনেক আনন্দের, হাজারো মানুষের মিলনমেলার দিন এটি।’
প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থী আঞ্জুমান, পপি, লিপা জানান, দিনব্যাপী এই পিঠাউৎসবের আয়োজনে প্রতিটি স্টলে স্টলে দর্শনার্থীদের ব্যাপক ভিড় ছিল। শিশু-কিশোর, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অতিথি থেকে শুরু করে নানা বয়সী মানুষ নিয়েছেন ভিন্ন ভিন্ন পিঠার স্বাদ। হারিয়ে যাওয়া অনেক পিঠার আয়োজন ছিল এই উৎসবে।
নড়াইল সদরের মোস্তাক আহমেদ বলেন, তরুণ-তরুণীসহ বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষদের অংশগ্রহণে লাঠিখেলার নৈপূণ্য দেখে মুগ্ধ হয়েছি।
নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র ফাহিম শাহরিয়ার বলেন, লাঠিখেলা দেখে খুব ভালো লাগলো। এমন নৈপূণ্যের লাঠিখেলা আগে দেখিনি। আমাদা আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ আল ফয়সাল খান বলেন, আগের দিনে গ্রামেগঞ্জে হরেক রকম পিঠা তৈরি করা হতো। যান্ত্রিকতার যাতাকলে পিঠাপুলির আয়োজন এবং লাঠিখেলা আনন্দ-উৎসব কিছুটা হলেও কমে গেছে। বিশেষ করে নব প্রজন্মের কাছে পিঠার আদি ঐহিত্য ছড়িয়ে দিতে এই উৎসবের আয়োজন। আগামিতেও আমাদের এই আয়োজন অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছি।
রাত অবধি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নৃত্য ও কৌতুক পরিবেশন করেন কলেজ শিক্ষার্থী ফাতেমা, আরজু, ইরানি, জাকিয়া, সাথী, তানিয়া, শাহনাজ, আমিরুল, সুমন, বায়েজিদ, লিপা, রাজু, আফসানা, রিফাত, বিপুল, রাজিব, সাজ্জাদ, বিশ্বজিৎ, রেজা, সুজন, জীবন ও সাথী। গান গেয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করেন এনায়েত মাহমুদ, এম সবুজ সুলতান, জন্মান্ধ কণ্ঠশিল্পী খালিদ শাওন, এসআই বিরু, মোল্যা খালিদ গানে গানে মাতিয়ে তোলেন সবাইকে।
এছাড়া বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার প্রদান করেন জেলা প্রশাসক হেলাল মাহমুদ শরীফসহ অনুষ্ঠানের অতিথিবৃন্দ।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।