সুন্দরবন-সন্দর্শন
দিনটি ছিলো ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, রাতে- ঘড়ির কাটা নয়টার ঘরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণোচ্ছল ৯৯ জন শিক্ষার্থী পর্যটক টিএসসি চত্বর কাঁপিয়ে সমস্বরে হুল্লোড় শুরু করে। এর কিছুক্ষণ পরেই রওনা দিলো ২টি বিশাল বাস। উদ্দেশ্য সুন্দরবন ভ্রমণ। আর এই ভ্রমণের আয়োজন করেছে ঢাকা ইউনিভারসিটি ট্যুরিস্ট সোসাইটি। অভিযানের নেতৃত্ব ও তদারকির ভার পড়লো ডিইউটিএস এর সভাপতি সাদ্দাম ভাইয়ের ওপর।
সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে বাস ছাড়তেই সবার যেন কথার ঝাঁপি খুলে গেলো। এর মধ্যে থেকে কেউ আবার নাচলো, কেউবা গাইলো, আবার কেউ কেউ বইয়ে দিলো হাসির বন্যা, মাঝে মাঝে ধাঁধাঁ দিয়ে সবাইকে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলে তবে তা আর হয়ে ওঠে না। দু’একজন ঘুমানোর চেষ্টা করলেও আমাদের নিশীথ আড্ডা আর দুর্বার কল-কাকলিতে ঘুমতো পালালোই, বরং বাইরের কেউ কেউ মুগ্ধ দর্শক এবং শ্রোতা হয়ে উঠলো। এই তো গেলো খুলনা শহরের যাত্রা পথের কথা।
পরদিন ভোরে খুলনা নদী বন্দর থেকে এম ভি ওয়াটার কিং-৮ এ করে আমরা সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম। যাওয়ার পথে দেখা মিললো শুশুকের ডিগবাজিও। করমজল পৌঁছে কাঠের ট্রেইল ধরে পুরো এলাকা চষে বেড়ালাম। লোনা পানির কুমির ও হরিণ প্রজনন কেন্দ্র আমাদের মুগ্ধ করলো। হাড়বাড়িয়ার সংরক্ষিত পুকুরে জন্মানো শাপলা যেন আমাদের স্বাগত জানাতে বসে আছে। সেখানকার হরিণ এবং বানরের দুষ্টমি আমাদের আনন্দ দেয়।
২৭ ফেব্রুয়ারি কটকা সমুদ্র সৈকতে সমুদ্র স্নানে আমাদের দুই দিনের কান্তিকে দূর কর দেয়। ভয়ে ভয়ে ছিলাম কখন না জানি বাঘমামা এসে হাজির হয়। জামতলার ওয়াচ টাওয়ারে ওঠে পাখির চোখে সুন্দরবনকে দেখি। সূর্যাস্ত দেখি হিরণ পয়েন্টে। সুন্দরবনে পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় লঞ্চের ডেকে বসে খেলা হয় তাস, লুডু। আমাদের উদ্দাম নৃত্য আর বেসুরে গলার গানে কিছুক্ষণের জন্য নিস্তব্ধ সুন্দরবনকে জাগিয়ে দেয়। গভীর রাতে ছিলো ‘বার বি কিউ পার্টি’।
পরদিন ভোরে সুন্দরবনের জেলেদের কার্যক্রম দেখতে যাই দুবলার চরে। এখানে নানারকম মাছ ও কাঁকড়ার সমবেশ। ঐদিন রাতে খুলনা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে পরদিন ভোরবেলা আমরা ঢাকায় পৌঁছালাম অনন্য এক অভিজ্ঞতার ঝুলি সাথে নিয়ে। যা আমাদের রোমাঞ্চিত করবে আজীবন। আর তাই লেখাটি দিয়ে পাঠক আপনাদের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিলাম।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।