প্রতিবন্ধী হয়েও স্বয়ংসম্পূর্ণ লেলিন
![প্রতিবন্ধী হয়েও স্বয়ংসম্পূর্ণ লেলিন](https://archive.sahos24.com/assets/images/news_images/2016/02/29/lenin_49110.jpg)
জন্ম থেকে দুই পা অকেজো লেলিন মিয়ার। কোমরের নিচ থেকে দুই পা চিকন ও বাঁকা হওয়ায় সব কাজ দুই হাত দিয়েই সারতে হয় তাকে। তিনি হেঁটে চলাফেরা করতে পারেন না। পা দুটি সম্পূর্ণ অকেজো হলেও তার প্রবল ইচ্ছা শক্তি আছে। এই ইচ্ছাশক্তির প্রতিফলন হিসেবে তিনি ছোট বেলা থেকেই অন্যের মোটরসাইকেল গ্যারেজে মেরামতের কাজ শিখে এখন নিজেই একটি গ্যারেজের মালিক হয়েছেন।
দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিলেও তিনি বাবা-মার বোঝা হয়ে থাকতে চান না। তাই ছোট বেলা থেকেই তিনি অন্য দশজনের মতো স্বয়ংস্বম্পূর্ণ মানুষ হিসাবে রোজগার শুরু করেন। শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও দুই হাতের উপর ভর করে মোটরসাইকেল মেরামতের কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন।
লেলিন মিয়ার বাড়ী জেলার সাদুল্যাপুর উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের জামুডাঙ্গা গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের আমছার আলীর ছেলে। তিন ভাইয়ের মধ্যে লেলিন সবার ছোট।
দুই পা সম্পূর্ণ অকেজো হওয়ায় ও মোটরসাইকেল মেরামতের কাজ করায় গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার অধিকাংশ মানুষের কাছে তিনি পরিচিত। সাদুল্যাপুর শহরতলীর পশ্চিমপাড়া মোড়ে রয়েছে বড় আকারের একটি মোটরসাইকেল মেরামতের গ্যারেজ। বর্তমানে গ্যারেজটি তিনি নিজেই পরিচালনা করছেন।
সরোজমিনে গ্যারেজে গিয়ে দেখা যায়, লেলিন মিয়া মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন খুলে মেরামত করছেন। তার গ্যারেজে প্রতিনিয়ত ১০ থেকে ১৫টি মোটরসাইকেল পড়ে থাকে মেরামতের জন্য। তাছাড়া প্রতিদিন অসংখ্য মোটরসাইকেল মেরামত করা হয় তার গ্যারেজে।
লেলিন মিয়া বলেন, আমি প্রতিবন্ধী হয়েও রোজগার করে নিজের সংসার পরিচালনা করি। সংসারে বাবা-মা ও ভাই-বোন রয়েছে। প্রতিবন্ধী হওয়ায় স্কুলে যাওয়া হয় নি, তবে নিজের নাম ও অক্ষর জ্ঞান রয়েছে আমার।
তিনি বলেন, গ্যারেজ ভাড়া প্রতিদিন লোকজনের পারিশ্রমিক বাদে গড়ে ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত আয় হয়। গ্যারেজ ঘরের প্রতি মাসে ভাড়া ও সংসার চালিয়েও প্রতিমাসে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা আয় হয়। এছাড়া উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে প্রতি মাসে প্রতিবন্ধী ভাতা পাই।
লেলিন আরও বলেন, বাবা-মার সংসারকে স্বনির্ভরশীল হিসাবে গড়ে তোলা ও আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন রয়েছে। নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সরকারি সহায়তা পেলে আরও বহুদুর এগিয়ে যেতাম। এজন্য দরকার একটু সহযোগিতা।
মোটরসাইকেল মেরামত করতে আসা আরমান সাহেব বলেন, মোটরসাইকেল মেরামতের উপর যথেষ্ট দক্ষতা রয়েছে লেলিনের। সে দক্ষতা ও আন্তরিকতা দিয়ে অনেকের মন জয় করে নিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় রবিউল ইসলাম বলেন, লেলিন পরিশ্রম করে দেখিয়ে দিচ্ছেন সে কারও বোঝা নয়। সততা ও নিষ্ঠার কারণে লেলিন মোটরসাইকেল মেরামত করে গ্যারেজের মালিক হয়ে সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। লেলিনের এই সফলতা অবশ্যই অনুকরণীয়।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।