- হোম
- >
- আইন-মানবাধিকার
- >
- রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে রিটের চূড়ান্ত শুনানি আগামী ২৭ মার্চ
রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে রিটের চূড়ান্ত শুনানি আগামী ২৭ মার্চ
প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানে এ ঘোষণার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটের চূড়ান্ত শুনানির জন্য আগামী ২৭ মার্চ দিন নির্ধারণ করেছেন হাইকোর্ট।
আজ সোমবার বিচারপতি নাঈমা হায়দারের নেত্বত্বে তিন সদস্যর বেঞ্চ এ দিন নির্ধারণ করেন। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি আশরাফুল কামাল।
মামলায় রিটকারীর পক্ষে আইনজীবী হলেন অ্যাডভোকেট জগলুল হায়দার আফ্রিক ও রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
এ প্রসঙ্গে আইনজীবী জগলুল হায়দার আফ্রিক বলেন, প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংক্রান্ত রুলের শুনানির জন্য বৃহত্তর বেঞ্চ ২৭ মার্চ দিন নির্ধারণ করেছেন। এছাড়া রুলের চূড়ান্ত শুনানির আগে ১২ জন সিনিয়র আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনকে শুধু শুনবেন আদালত।
মামলার বিবরণে জানা যায়, সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম অন্তর্ভুক্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯৮৮ সালে হাইকোর্টে রিট করা হয়।এরপর থেকেই আবেদনটি হাইকোর্টে বিচারাধীন ছিল। সংবিধানের পরিবর্তন আনা হয় পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে। কিন্তু রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বিষয়টি বহাল থাকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশিষ্ট সাংবাদিক ফয়েজ আহমেদ রিটটি শুনানির জন্য হাইকোর্টে ২০১১ সালের জুন মাসে একটি সম্পূরক আবেদন দাখিল করেন। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ ওই বছরের ১১ জুন রুল জারি করেন। রুলে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম অন্তর্ভুক্তির বিধান কেন অসাংবিধানিক ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। একইসঙ্গে সিনিয়র ১২ আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। রুল জারি এবং রিট দায়েরের দীর্ঘদিন পর মামলাটি চূড়ান্ত শুনানির জন্য হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে আসে।
সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদের শাসনামলে ১৯৮৮ সালের ৫ জুন চতুর্থ জাতীয় সংসদে অষ্টম সংশোধনী পাস করা হয়। ওই সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে অনুচ্ছেদ ২ক যুক্ত হয়। এতে বলা হয়,‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সম অধিকার নিশ্চিত করিবেন।’ তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এরশাদ ৯ জুন এতে অনুমোদন দেন।
এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের আগস্ট মাসে ‘স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটির’ পক্ষে সাবেক প্রধান বিচারপতি কামাল উদ্দিন হোসেন, কবি সুফিয়া কামাল, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীসহ ১৫ বিশিষ্ট নাগরিক হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। সাবেক বিচারপতি দেবেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য, সাবেক বিচারপতি কে এম সোবহান, অধ্যাপক খান সরওয়ার মুর্শিদ, আইনজীবী সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ,অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, কলিম শরাফী, অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) সি আর দত্ত, বদরউদ্দীন উমর, সাংবাদিক ফয়েজ আহমদ, বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর ও অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। এঁদের অনেকেরই মৃত্য হয়েছে।
আবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে বাস করে নানা ধর্ম বিশ্বাসের মানুষ। এটি সংবিধানের মূল স্তম্ভে বলা হয়েছে। এখানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করে অন্যান্য ধর্মকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এটি বাংলাদেশের অভিন্ন জাতীয় চরিত্রের প্রতি ধ্বংসাত্মক।
এদিকে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে সংবিধান সংশোধনে সংসদীয় বিশেষ কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি রাষ্ট্রধর্ম রাখার সুপারিশ করে। পরবর্তীকালে ওই সুপারিশ অনুযায়ী সংবিধানে আনা হয় পঞ্চদশ সংশোধনী। এই সংশোধনীতে রাষ্ট্রধর্ম রাখার বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি সম্পূরক আবেদন দাখিল করে রিটকারী পক্ষ। আবেদনে বলা হয়, সংবিধানের পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম (আংশিক) ও ত্রয়োদশ সংশোধনী সংসদে পাস হলেও সুপ্রিম কোর্ট এসব সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করেছেন। পঞ্চম সংশোধনী মামলার রায়ের আলোকে ১৯৭২ সালের সংবিধানের চার মূলনীতি জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্র সংবিধানে ফিরে এসেছে। আদি সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল হয়েছে। এটির সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম অব্যাহত রাখা হলে তা হবে সাংঘর্ষিক এবং পঞ্চম সংশোধনীর মামলার রায়ের পরিপন্থী।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।