ভ্রমণ প্রিয়দের তৈদু ছড়া
দিদারুল আলম রাফি
প্রিন্টঅঅ-অ+
যারা খুব বেশি ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন তারা ঘুরে আসতে পারেন তৈদু ছড়া থেকে। ভ্রমণের পুরো স্বাদ পাবেন এই পথে।
জীপ গাড়ি থামিয়ে যখন শুরু হবে ইটের রাস্তা তখন মনে হবে সামনেই তো তৈদু ছড়া! কিন্তু না! পাড়ি দিতে হবে দীর্ঘ দু'ঘন্টারও বেশি পাহাড়িয়া উঁচুনিচু পাথুরে পথ।
তৈদুর পথে পথে রয়েছে উঁচুনিচু সবুজ পাহাড়, বুনো জঙ্গল, নদী পথ, পাথুরে ঝিড়ি পথ পেরিয়ে পাহাড়। রোমাঞ্চকর তৈদু ছড়ায় রয়েছে পরপর তিনটি ঝরণা।
খাগড়াছড়ি জেলাধীন দীঘিনালার চাপ্পাপাড়া কিংবা পোমাংপাড়া হতে দুর্গম পথ, অনেক গুলো ঝিরি, উচু নিচু পাহাড়, কোথাও হাটু সমান আবার কোথাও বুক সমান পানি আর বুনো জঙ্গল পাড়ি দিয়ে অবশেষে প্রায় ৩ ঘন্টা হাঁটার পর আপনি পৌছবেন তৈদুর ১ম ঝর্ণাটিতে। এটি প্রায় ৬০ ফুট উচু। ঝর্ণামুখ হতে পানি পাহাড়ের গাঁয়ে পরে তা পাহাড় বেয়ে নিচে এসে ছোট একটি হ্রদে মিলিত হয়েছে। অসাধারণ সেই দৃশ্য।
প্রথম ঝর্ণার ডানপাশ দিয়ে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে উঠলে খুব কাছাকাছি পেয়ে যাবেন ২য় ঝর্ণাটি। এখানে প্রায় ৭০-৮০ ডিগ্রী এঙ্গেলের ঢাল বেয়ে বানরের মত প্রায় ১০০ ফুট উপরে উঠতে হবে। উপরে উঠলে প্রথমেই চোখে পড়বে ঝর্ণা মুখ যেখান হতে ১ম ঝর্ণার পানি পড়ছে। ২য় ঝর্ণা হতে ঝিরি পথে পানি আসছে এখানে।
ঝিরি পথ ধরে প্রায় ঘন্টা খানেক হাটলে পরে পৌছে যাবেন ২য় ঝর্ণাটিতে। এই চলার পথটি যেমন কষ্টকর তেমনি রোমাঞ্চকর আর আহামরি সুন্দর। উপর থেকে প্রচণ্ড বেগে পানি নেমে আসতেছে। এই বেগ ঠেলে পানি বরাবরই হাঁটতে হয়। ডানে বায়ে যেখানে পানির স্রোত কম সেখানে শ্যাওলা জমেছে। একটুতেই পা পিছলে যায়। মাঝে মাঝে এখানে পানির স্রোত খুব বেশী যে ধাক্কা দিয়ে নিচে নিয়ে যেতে চায়।
তাই এখানে পা টিপে টিপে অনেক সাবধানে হাঁটতে হবে। একবার পিছলে গেলে কয়েকশ হাত দূরে নিক্ষিপ্ত হতে হবে। এখান হতে আরো উপরে উঠতে হবে। চলার পথে পারি দিতে হবে বড় বড় পাথর আর কোমর সমান পানি। অতপর পেয়ে যাবেন দ্বিতীয় তৈদু ঝর্ণা।
অপূর্ব অসাধারণ আর নয়নাভিরাম সে ঝর্ণা। এটি এতই দৃষ্টিনন্দন আর ব্যতিক্রম যে কারো আর তড় সইবে না। ঝর্ণার নিচে ঝাপিয়ে পরতে মন চাইবে। ঝর্ণাটি প্রায় ৮০ ফুট উচু। ঝর্ণার পানি এসে সরাসরি যেখানে পড়ছে সেখানে সিড়ির মত অনেকগুলো পাথুরে ধাপ রয়েছে।
ধাপগুলো বেয়ে পানি নিচে গড়িয়ে পড়ছে। ধাপগুলোতে দাড়িয়ে অনায়েসেই গোসলের কাজটি সেরে নেওয়া যায়। দীর্ঘ ক্লান্তিকর হাটার কষ্ট মুহুর্তেই ধুয়ে যাবে ঝর্ণার জলে। ঝর্ণার জলের শীতল পরশ আপনাকে ক্ষনিকের জন্য হলেও ভুলিয়ে দেবে আবার কতটা পথ আবার হাটতে হবে ফেরান জন্য।
যেভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে প্রথমে রাতের গাড়িতে খাগড়াছড়ি। সকালে খাগড়াছড়ি থেকে জীপে চড়ে দীঘিনালার চাপ্পা পাড়া হয়ে তৈদু ছড়ার পথে রওনা করতে পারেন। অথবা দীঘিনালা থেকে দুই কিলোমিটার সামনে জামতলী মায়াফাপাড়া হয়ে যেতে পারেন অথবা সীমানা পাড়া হয়েও তৈদু ছড়ায় যাওয়া যায়। রওনা হওয়ার আগে অবশ্যই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে নিবেন। খাবার পানি আবশ্যক।
উল্লেখ্য, এখানকার স্থানীয় পাহাড়িদের সাথে পরিচয় ও আলাপচারিতা আর যাত্রা পথের দৃশ্যাবলী অবলোকন হতে বঞ্চিত হলে আপনার তৈদুছড়া ভ্রমনটি অপূর্নই থেকে যাবে। জলপ্রপাত, ঝিরি, পাহাড়ী জীবন, আকাশ আর পাহাড়ের মিতালী, শিবছড়ি পাহাড়ের পাথরের শিব মূর্তি, পাথরের হাতি ও পাথরের সাপ সব কিছু মিলিয় আপনার চোখ ভরে যাবে তৃপ্তিতে, আপনি তুলবেন প্রাপ্তির ঢেকুর।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।