‘ইয়াসিন ছাড়া আত্মহত্যা করবো’
নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় প্রেমিকার জোর গলায় বলেন, আমি আমার স্বামী ইয়াসিনের বাসাতেই থাকব। আমাকে অপহরণ করা হয়নি। আমি স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছি। আমাকে যদি বাবার বাড়িতে পাঠানো হয় তাহলে আমি আত্মহত্যা করব। এর জন্য দায়ি থাকবে এই ভাই আর মা।’
বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতপাড়ায় বাদী ও বিবাদী পক্ষের ঝগড়ার সময় এমন কথাই বলছিলেন ফতুল্লার ভুইগর দারুস সুন্নত মাদরাসার দশম শ্রেণির ছাত্রী ইফাত জিম কলি।
আসামি পক্ষের ওপর হামলা হয় আদালত পাড়ায়। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষ বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় প্রেমিকা ইফাত জিম কলিকে নিয়ে টানাটানি করতে থাকেন তার মা ও ভাইসহ স্বজনরা। কয়েক দফা কলিকে মারধরও করা হয়। এর মধ্যে প্রেমিক ইয়াসিন প্রধানের আত্মীয়স্বজন কলিকে নববধূ দাবি করে বাধা দিলে তাদের ওপরও হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ করেছেন ইয়াসিনের চাচাতো ভাই আব্দুর রহমান।
ঘটনা সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৫ বছর আগে ফতুল্লার ভুইগর এলাকার মৃত হারুন উর রশিদের ছেলে গার্মেন্টস শ্রমিক ইয়াসিন প্রধানের সঙ্গে ইফাত জিম কলির প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কলি ইতালি প্রবাসী জামান মাহামুদের মেয়ে ও ভুইগর দারুস সুন্নত মাদরাসার দশম শ্রেণির ছাত্রী। তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক হয়।
গত ২০১৪ সালের ১২ মে ফতুল্লা মডেল থানায় ইয়াসিনের বিরুদ্ধে উত্ত্যক্তের অভিযোগ তুলে একটি জিডি করেছিলেন কলির মা রোকসানা আক্তার। এক পর্যায়ে কলি ঘর ছেড়ে কয়েক দফা ইয়াসিনের সাথে পালানোর চেষ্টাও করেছিল। যে কারণে কলির মাদরাসায় লেখাপড়াও বন্ধ করে দেয় তার পরিবার।
এদিকে চলতি বছর ৭ নভেম্বর ইয়াসিনের সাথে পালিয়ে গিয়ে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বিয়ে করে কলি। পরে গত ৯ নভেম্বর কলির মা রোকসানা আক্তার বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা মডেল থানায় ইয়াসিন প্রধান সহ আলম প্রধান, মাসুম, হামিদা আক্তার, হাফিজা আক্তারকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
ওই মামলায় বৃহস্পতিবার কলিকে নিয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন ইয়াসিন প্রধান। অতিরিক্ত জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিন আবেদন জানালে আদালত তা নামঞ্জুর করে আসামি ইয়াসিনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে ইফাত জিম কলিকে পুলিশ হেফাজতে মেডিকেল পরীক্ষার পাঠানো হয়।
তবে এ বিষয়ে ইফাত জিম কলি বলেন, ‘আমাকে অপহরণ করা হয়নি। আমি স্বেচ্ছায় এবং নিজ জ্ঞানইে বিয়ে করেছি। ইয়াসিন আমার স্বামী।’ ওই সময় তার মা রোকসানা ও খালাতো ভাই শাহিন সামনে থাকলে তাদের বলেন, এমন মা ভাই আমার দরকার নেই। আমি তাদের অনেক বুঝাইছি। আমি বলেছি ইয়াসিনকে ছাড়া আমি কাউকে বিয়ে করব না। কিন্তু তারা আমার কথা শুনে নাই। তাই আমি বাধ্য হয়েই বিয়ে করেছি। এখন আমাকে জোর করে নিয়ে গেলে আমি আত্মহত্যা করব। এর জন্য আমার মা ভাই দায়ী থাকবে। আমি আমার শ্বশুর বাড়িতেই থাকতে চাই। ইয়াসিন ছাড়া আত্মহত্যা করব; তখন দায়ী থাকবে ভাই মা।’
অন্যদিকে আসামি ইয়াসিন প্রধানের চাচাতো আব্দুর রহমান জানান, ছেলে মেয়ে দুজনে প্রেম করেছে। কিন্তু আসামি করা হয়েছে আত্মীয়স্বজনকে। আর ছেলের বাড়িতেও হামলা চালানো হয়েছে। ছোট ছোট বাচ্চাদের মারধর করা হয়েছে। কোর্টে আসার পরও হামলা করা হয়েছে।’
এদিকে এ বিষয়ে কলির মা রোকসানা আক্তার বলেন, আমার মেয়ের বয়স মাত্র ১৪ বছর। সে ভালো মন্দ কিছুই বুঝে না। তাকে সব আসামি ফুসলিয়ে এসব বলাচ্ছে। আমার ছোট্ট মেয়ে।’
এ বিষয়ে আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জিএম ফেরদৌস বলেন, ‘আদালত ইয়াসিনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। আর ইফাত জিম কলিকে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। মেয়ে স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছে বলে জানিয়েছে।’
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।