জনতার উচ্ছ্বাসে ভাসলেন অনুপ চেটিয়া
নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর, ২০১৫
প্রিন্টঅঅ-অ+
প্রায় দেড় দশক পরে স্ত্রীর সঙ্গে দেখা। না, প্রথম দর্শনে চিনতে পারেননি স্বামী! স্ত্রী-ই এগিয়ে এলেন। পরিচয় দিলেন। পরে দুজনই হেসে ফেলেন। দীর্ঘ ২৪ বছর পরে বুধবার আসামে পা রাখলেন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসামের (উলফা) প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়া। গোয়াহাটিতে আদালতের ভেতরে গিজগিজে ভিড়ে একান্তে কথা বলা সম্ভব ছিল না। তবু তার মধ্যেও স্বামী-স্ত্রীর কথা বলার খানিক সুযোগ করে দিয়েছিলেন সিবিআই অফিসাররা।
স্ত্রী মণিকা বরা চেটিয়াকে না চেনার কারণ, একে তো দীর্ঘদিন পর দেখা, দ্বিতীয়ত তার চুলের ছাঁট ছেলেদের মতো হওয়ায় চেহারাটাই পাল্টে গিয়েছিল। ছেলের অবস্থাটা চেনার আরো বাইরে। জ্ঞান হওয়ার পরে এই প্রথম বাবাকে দেখল ২২ বছরের পুত্র জুমন। এত দিন নিজেকে কারাবন্দি ব্যক্তির সন্তান হিসেবেই দেখে এসেছে সে। বুধবার বিমানবন্দর থেকে আদালত অবধি বাবাকে ঘিরে সংবাদমাধ্যম ও আমজনতার যে উচ্ছ্বা চাক্ষুস করলেন, তাতে তিনি অবাক।
অনুপ চেটিয়া নিজেও ১৮ বছর জেলে ছিলেন। এত দিন পরে পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে হাজির হন গোয়াহাটির সিজেএম আদালতে। এজলাসে তোলার আগে অনুপকে দেখে জড়িয়ে ধরলেন উলফার সহসভাপতি প্রদীপ গগৈ। কুশল বিনিময়ের পরে অনুপের সামনের ফোকলা দাঁত আর বেড়ে যাওয়া বয়স নিয়ে কিঞ্চিৎ হাসি-ঠাট্টা হলো।
১১ নভেম্বর ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ চেটিয়ার দায়িত্ব সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেয়। ১২ নভেম্বর দিল্লির বিশেষ সিবিআই আদালত তাকে ৬ দিনের ট্রানজিট রিমান্ড দেয়। চেটিয়া আসবেন জেনে আগের দিন সকাল থেকেই তার স্ত্রী-পুত্র, এমনকি পুলিশ কর্তারাও গোয়াহাটি বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু বিকেল অবধি তিনি আসেননি। পরে উলফার তরফে জানানো হয় ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় তাকে যাত্রীবিমানে আনতে সমস্যা হয়েছিল।
বুধবার বিএসএফের বিশেষ বিমানে চেটিয়াকে গোয়াহাটি আনা হয়। বিমানবন্দরের পেছনের ভিআইপি দরজা দিয়ে ৫টি গাড়ির কনভয় চেটিয়াকে নিয়ে সিজেএম আদালতে রওনা হয়। বিস্তর দৌড়ঝাঁপ করেও বিমানবন্দরে তার দেখা পাননি স্ত্রী মণিকা ও উলফার নেতারা।
বেলা ১০টা ৪০ মিনিটে নীল জামা, কালো প্যান্ট আর লালচে চুলের চেটিয়াকে নিয়ে কনভয় সোজা ঢুকে যায় আদালত চত্বরে। সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে বিচারক সঙ্গীতা হালৈয়ের এজলাসে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেখানেই প্রদীপ গগৈ, উলফার বিদেশ সচিব শশধর চৌধুরী, অর্থসচিব চিত্রবন হাজারিকা, সহ সেনাধ্যক্ষ রাজু বরুয়া, নেতা প্রাণজিৎ শইকিয়া এবং মণিকা দেবী চেটিয়ার সঙ্গে কথা বলেন।
বাইরে এসে প্রদীপ গগৈ জানান, শরীরের বয়স বাড়লেও অনুপ মনের দিক থেকে একইরকম শক্ত আছেন। তার কথায়, ‘২৪ নভেম্বর উলফার সঙ্গে কেন্দ্রের শান্তি আলোচনা রয়েছে। আশা করি অনুপও বৈঠকে থাকবে। অনুপকে দেখার জন্য এই জনসমুদ্র প্রমাণ করে দিল উলফা আজও সমান প্রাসঙ্গিক।’ কিন্তু, আত্মসমর্পণকারী উলফার একাংশ দাবি করেছে, পরেশ বরুয়াকে না ফেরাতে পারলে আলোচনা অর্থহীন।
সিবিআই সূত্র জানায়, চেটিয়ার সঙ্গে কারাগার থেকেই পরেশ বড়ুয়া ও দৃষ্টি রাজখোয়ারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। তবে কী পরেশকে ফেরাতে অনুপকে কাজে লাগাবে উলফা? প্রদীপ গগৈ বলেন, ‘এত কথা হয়নি। অনুপ অবিভক্ত উলফার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং আছেন। তিনি জনতার সামনে আসতে চান। অংশ নিতে চান শান্তি আলোচনায়।’
পৌনে দুয়টা নাগাদ বেরিয়ে আসেন চেটিয়া। অপেক্ষমাণ জনতার দিকে হাত নেড়ে হাসতেই সিবিআই অফিসারেরা দ্রুত, মাথা চেপে তাকে গাড়িতে ঢুকিয়ে দেন। এনএসজি কমান্ডোরা কাউকে কাছে ঘেঁষতে দেননি। চেটিয়াকে বিমানে ফের দিল্লি নিয়ে যায় সিবিআই।
১৯৮৬ সালের হত্যার ঘটনা নিয়ে ১৯৮৮ সালে একটি মামলা দায়ের করেছিল সিবিআই। বুধবার ওই মামলায় সিবিআইয়ের আইনজীবী ১৪ দিনের জন্য চেটিয়াকে হেফাজতে চান। বিচারক চেটিয়াকে পাঁচ দিনের জন্য সিবিআইয়ের হেফাজতে দেন। আরো বলেন, অনুপ অসুস্থ। তাই প্রতিদিন তার ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে হবে। ভালো খাদ্য দিতে হবে।
অনুপ চেটিয়ার মুক্তির ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ সাংবাদিকদের বলেন, ‘অন্যান্য আলোচনাপন্থি নেতার মতো আলোচনার স্বার্থে তাকেও ছাড় দেওয়া যেতে পারে। তবে এটি আদালতের বিচারাধীন বিষয়।’
সন্ধ্যায় পরেশ বড়ুয়া সংবাদমাধ্যমে ফোন করে বলেন, ‘অনুপ ঘরের মাটিতে ফেরায় আমরাও খুশি। ওর সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।’ পরেশ বলেন, ‘উলফায় অনুপের অবদান পর্বতসম। আমরা সকলেই ওকে শ্রদ্ধা করি।’ পরেশ বলেন, ‘আমরা কখনোই আলোচনা বা শান্তির বিপক্ষে নই। তবে আমাদের দাবি একটাই। স্বাধীন আসাম। সেই দাবি মেনে নিয়ে ভারত যদি সসম্মানে আলোচনার আহ্বান জানায় তবে অবশ্যই ভেবে দেখব। এখন চেটিয়া শত্রু শিবিরে। আগে তিনি মুক্তি পান। সুস্থ হোন। এই সব বিষয় পরে ভাবা যাবে।’
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।