চলছে বার কাউন্সিল নির্বাচন
নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রকাশ : ২৬ আগস্ট, ২০১৫
প্রিন্টঅঅ-অ+
আইনজীবীদের সনদ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ও আইন পেশার সর্বোচ্চ সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে।
বুধবার (২৬ আগস্ট) সকাল দশটা থেকে সারা দেশের ভোটকেন্দ্রগুলোতে একযোগে উৎসবমুখর পরিবেশে চলছে ভোটগ্রহণ। বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলা এবারের নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন দেশের ৪৩ হাজারের বেশি আইনজীবী সদস্য।
ঢাকার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবন এবং পুরান ঢাকার দেওয়ানি আদালত প্রাঙ্গণে স্থাপিত ভোটকেন্দ্রে উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে ভোট দিচ্ছেন ভোটাররা। এ দুই কেন্দ্রে ভোটারদের লম্বা লাইন দেখা গেছে ভোটগ্রহণ শুরুর পর থেকেই।
সংশোধিত ভোটার তালিকা অনুযায়ী বার কাউন্সিল নির্বাচনে মোট ৪৩হাজার ৩’শ ২জন আইনজীবী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। প্রত্যেক ভোটারকে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও নিজ আইনজীবী সমিতির আইডি কার্ড সঙ্গে রাখতে হবে। অন্যথায় ভোটাধিকার প্রয়োগ করা যাবে না বলে জানায় বার কাউন্সিল সূত্র।
বার কাউন্সিল সচিব মোহাম্মদ আলতাফ হোসাইন জানান, সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে স্থাপিত ভোটকেন্দ্র, দেশের জেলা সদরের সকল দেওয়ানি আদালত প্রাঙ্গণে স্থাপিত ভোট কেন্দ্র এবং বাজিতপুরসহ দেশের ১২ উপজেলা পর্যায়ে দেওয়ানি আদালত অঙ্গনের ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহন অনুষ্টিত হবে। মোট ৭৭টি কেন্দ্রে এ ভোটগ্রহণ করা হবে। দেওয়ানি আদালতের বিচারকগণ ভোটকেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
গত ১৩ আগস্ট আইনজীবীদের সনদসহ পেশাগত বিষয়ের সর্বোচ্চ সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচনের দিন ধার্য ছিল। সংশোধিত ভোটার তালিকা প্রস্তুত না হওয়ায় বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম নির্বাচন পেছানোর জন্য আবেদন করেন। এর প্রেক্ষিতে গত ৯ জুলাই সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ ২৬ আগস্ট নির্বাচন অনুষ্টানে দিন ধার্য করে আদেশ দেয় । গত ২৫ মার্চ বার কাউন্সিল নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল, যাতে ভোটের দিন রাখা হয়েছিল ২০ মে। এরপর ৯ এপ্রিল ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়, যাতে ভোটার সংখ্যা দেখানো হয় ৪৮ হাজার ৪৬৫ জন। ওই তালিকায় ‘অস্পষ্টতা ও একই নাম একাধিকবার’ থাকার কথা জানিয়ে বার কাউন্সিলের পাঁচজন নির্বাচিত সদস্য এবং ১০১ জন আইনজীবী আলাদাভাবে বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও সচিবকে চিঠি দেন। চিঠিতে তারা তালিকা ঠিক করতে বলেন। এরপর ১২ মে এক জরুরি সভা করে বার কাউন্সিলের এক ‘জরুরি সভায়’ নেওয়া সিদ্ধান্তে নির্বাচন পিছিয়ে ২৭ মে তারিখ ঠিক করা হয়। ভোটার তালিকায় থাকা কিছু ত্রুটি সংশোধন করার জন্য সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। পরে পৃথক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে বার কাউন্সিলের নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত করে গত ২১ মে আদেশ দেয় হাইকোর্ট। বিষয়টি নিয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করলে পরে ভোটার তালিকা সংশোধন সাপেক্ষে বার কাউন্সিল নির্বাচনের তারিখ ঠিক করে দিয়ে আদেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত।
বার কাউন্সিল নির্বাচনে ১৪টি সদস্য পদে নির্বাচনের জন্য চূড়ান্তভাবে ৬১ জন প্রার্থী রয়েছেন। ১৪ জন সদস্যের মধ্যে সারা দেশে সনদপ্রাপ্ত আইনজীবীদের ভোটে সাধারণ আসনে ৭ জন এবং দেশের ৭টি অঞ্চলের লোকাল আইনজীবী সমিতির সদস্যদের মধ্য থেকে একজন করে ৭ জন নির্বাচিত হবেন। সাধারণ আসনে ৭ জন সদস্যের বিপরীতে ৩২ জন প্রার্থী এবং ৭টি অঞ্চলের লোকাল আইনজীবী সমিতির ৭টি সদস্য পদে মোট ২৯ জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন।
৭টি অঞ্চল হলো- গ্রুপ-এ-সাবেক বৃহত্তর ঢাকা জেলার সকল আইনজীবী সমিতি এখানে ৪ জন প্রার্থী গ্রুপ-বি-বৃহত্তর ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর জেলার আইনজীবী সমিতি এখানে ৩ জন প্রার্থী গ্রুপ-সি- বৃহত্তর চট্রগ্রাম ও নোয়াখালী জেলার আইনজীবী সমিতি-এখানে ৩জন প্রার্থী গ্রুপ-ডি- বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা ও সিলেট জেলা অঞ্চলের আইনজীবী সমিতি- এখানে ৫ জন প্রার্থী গ্রুপ-এফ- বৃহত্তর খুলনা, বরিশাল ও পটুয়াখালী অঞ্চলের আইনজীবী সমিতি-এখানে ৩ জন প্রার্থী গ্রুপ-এইচ- বৃহত্তর রাজশাহী, যশোর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের আইনজীবী সমিতি-এখানে ৪ জন প্রার্থী এবং গ্রুপ-জি বৃহত্তর দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া ও পাবনা জেলার আইনজীবী সমিতি-এখানে ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
প্রতি তিন বছর অন্তর বার কাউন্সিল নির্বাচন হয়। বার কাউন্সিল ১৫ জন সদস্যের সমন্বয়ে পরিচালিত হয়ে থাকে। এর মধ্যে রাষ্ট্রের এটর্নি জেনারেল পদাধিকার বলে এর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। আর বাকী ১৪ জন আইনজীবীদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়ে থাকেন। ১৪ জনের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে একজন ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে থাকেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও সমমনা আইনজীবী সংগঠন সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ এবং বিএনপি ও তাদের সমমনা আইনজীবীদের সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল, আইনজীবী ঐক্যফ্রন্টের গোলাপী প্যানেলসহ মোট ৪টি প্যানেল প্রার্থী দিয়েছে। এছাড়াও কিছু একক প্রার্থী এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সাধারণ আসনে সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ সমর্থিত প্রার্থীরা হলেন- সিনিয়র আইনজীবী সুপ্রিমকোর্ট বারের সাবেক সভাপতি ব্যারিষ্টার এম আমীর-উল ইসলাম, এডভোকেট আব্দুল বাসেত মজুমদার ও ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ, এডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু, এডভোকেট পরিমল চন্দ্র গুহ (পি.সি গুহ), এডভোকেট জেড আই খান পান্না ও সুপ্রিমকোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক এডভোকেট শ.ম রেজাউল করিম।
সাধারণ আসনে ৭টি সদস্য পদে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের প্রার্থীরা হলেন- সুপ্রিমকোর্ট বারের বর্তমান সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, সুপ্রিমকোর্ট বারের সাবেক সভাপতি ও সাবেক এটর্নি জেনারেল আব্দুল জামিল মোহাম্মদ আলী (এ.জে মোহাম্মদ আলী), সুপ্রিমকোর্ট বারের বর্তমান সম্পাদক ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন (খোকন), ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি এডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, সুপ্রিমকোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিষ্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি এডভোকেট বোরহানউদ্দিন ও এডভোকেট মহসিন মিয়া।
গোলাপী প্যানেলের প্রার্থীরা হলেন-এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, শাহ মো. খসরুজ্জামান,একেএম জগলুল হায়দার আফ্রিক,আব্দুল মোমেন চৌধুরী, সারওয়ার-ই-দীন, মো. হেলাল উদ্দিন ও মো.শামসুল হক।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।