এক ঘাটে জল খায় আ.লীগ-বিএনপি-জামায়াত
জনপ্রিয় লেখক ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. ইয়াসমিন হককে শাবি ত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি-জামায়াত নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত ‘সচেতন সিলেটবাসী’ সংগঠনটির নেতারাও।
এর আগে সিলেট নগরীতে ‘সিলেটবাসী’ ব্যানারে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল-সামাবেশ করেছিল। এছাড়াও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এক সংসদ সদস্য নগরীর কোর্ট পয়েন্টে প্রকাশ্যে জাফর ইকবালকে চাবুক মারার হুমকিও দিয়েছিলেন।
জানা গেছে, রবিবার বিকেলে সিলেট নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে বিএনপি-জামায়াত নেতাদের নিয়ে গঠিত ‘সচেতন সিলেটবাসী’র উদ্যোগে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সচেতন সিলেটবাসীর আহ্বায়ক, সিলেট সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র রেজাউল হাসান কয়েস লোদী সভাপতিত্ব করেন। তিনি সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য পদেও রয়েছেন।
সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আব্দুল মুকিত অপির পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাবিদ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জুবায়ের সিদ্দিকী। বিশেষ অতিথি ছিলেন মদন মোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ লে. কর্নেল (অব.) প্রিন্সিপাল এম আতাউর রহমান পীর ও জালালাবাদ ক্যান্টনম্যান্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ লে. কর্নেল (অব.) সৈয়দ আলী আহমদ। তারা বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত সুশীল সমাজের ব্যক্তিত্ব বলে পরিচিত।
অনুষ্ঠান শেষে রবিবার রাতে ‘সচেতন সিলেটবাসী’ নামের সংগঠনটির পক্ষ থেকে সংবাদ মাধ্যমে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিও প্রেরণ করা হয়েছে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী ড. ইয়াসমিন হককে শাবি ত্যাগের আহ্বান জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় সিলেটবাসীর দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের ফসল। এ অঞ্চলে শিক্ষা-দীক্ষার প্রসারে এ প্রতিষ্ঠানের রয়েছে অভাবনীয় ভূমিকা। দিনে দিনে এই বিশ্ববিদ্যালয় যখন উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল- তখনই এর গতিরোধ করে দাঁড়ান শিক্ষক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এক সময় শাবির হলগুলোর বিতর্কিত নামকরণের মাধ্যমে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশকে অশান্ত করে তুলেন। এর প্রতিবাদে আন্দোলন করতে গিয়ে মারা যায় তরুণ ছাত্র বেলাল। দুই বছরের সেশনজটে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
বিজ্ঞপ্তিতে সভার বক্তাদের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, মাদরাসা ছাত্রদের শাবিতে ভর্তির ক্ষেত্রে ড. জাফর ইকবাল প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে আবারও আন্দোলনে নামে সিলেটবাসী। এতেও তার নৈতিক পরাজয় হয়। ভাস্কর্যের নামে শাবি ক্যাম্পাসে মূর্তি স্থাপনের উদ্যোগ নিলে ক্ষোভে ফেটে পড়ে সিলেটের সচেতন সমাজ। শাহজালালের পূণ্যভূমির ঐতিহ্য রক্ষার সেই আন্দোলনেও জয়ী হয় সিলেটের মানুষ। পরবর্তীতে বিতর্কিত ও বৈষম্যমূলক গুচ্ছ পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করার উদ্যোগ নেন এই অধ্যাপক। এর প্রতিবাদে সচেতন সিলেটবাসীর ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করে সিলেটের মানুষ। শাবি অভিমুখে ঐতিহাসিক গণমিছিল, সর্বাত্মক হরতাল পালিত হলে সেটিও বাতিল করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।
এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে শাবির সম্মানিত ভিসিদের বিরুদ্ধে অন্যায় অভিযোগ তুলে তাদের পদত্যাগে বাধ্য করেছেন দাবি করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশেষ করে ড. মুসলেহ উদ্দিন তারেকের বাসভবনে তার (জাফর ইকবাল) উষ্কানিতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ইতিহাসে কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে। স্বনামধন্য ভিসি ড. সালেহ উদ্দিন আহমদকে সরাতে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
সচেতন সিলেটবাসীর নেতাদের বরাত দিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, সম্প্রতি ড. জাফর ইকবাল সিলেটের একটি স্বনামধন্য পরিবারের উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি, শাবির সিন্ডিকেট সদস্য মাহমুদ উস-সামাদ চৌধুরী কয়েস সম্পর্কে যেসব কটূক্তি করেছেন, তা এক কথায় অমার্জনীয়। একজন শিক্ষক যদি এরকম অশালীন ভাষায় কথা বলেন- তাহলে জাতি তার কাছ থেকে কি নৈতিকতা আশা করতে পারে?
ড. জাফর ইকবাল ও তার অনুসারীরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রকারের অপপ্রচার-কুৎসা রটিয়ে, বিদ্বেষ ছড়িয়ে সিলেটের শিক্ষা ও শান্তির পরিবেশকে কলুষিত করে চলেছেন জানিয়ে বলা হয়েছে, আমরা প্রত্যাশা করি, জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী সিলেটবাসীর আবেগ-অনুভূতির প্রতি সম্মান জানিয়ে অচিরেই শাবি ত্যাগ করবেন। এতে করে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি চিরস্থায়ী শান্তির পরিবেশ সৃষ্টি হবে বলে জানানো হয়েছে ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
এদিকে, এর আগে গত শনিবার বিকেলে সিলেট নগরীতে ড. জাফর ইকবালের বিরুদ্ধে মিছিল-সমাবেশ করেছিল ‘সিলেটবাসী’র ব্যানারে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। ওই মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন ও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদ প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও সিলেট-৩ আসনের এমপি মাহমুদুস সামাদ কয়েছকে নিয়ে ড. জাফর ইকবাল কটূক্তি করেছেন, এমন অভিযোগে তারা মিছিল-সমাবেশে করেছিল। তবে মিছিলে অংশ নেয়া অনেকেই জাফর ইকবাল কী কটূক্তি করেছিলেন বা কি বলেছিলেন তা জানতেন না। অনেকটা না বুঝেই তারা মিছিলে অংশ নেন।
sahos24.com | Online bangla news portal
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।