বৈশাখী মেলা শুরু, জব্বারের বলীখেলা কাল
চট্টগ্রামের নগরীর লালদীঘি ময়দানে তিন দিনব্যাপী শতবর্ষ প্রাচীন ঐতিহ্য মেলা শুরু হয়েছে।শুক্রবার সকাল থেকে এই মেলা শুরু হয়েছে। এই ঐতিহ্যবাহীর মেলার প্রধান আকর্ষণ আব্দুল জব্বারের বলীখেলা।লালদীঘি মাঠসহ মেলাকে কেন্দ্র করে রকমারি পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানিরা।
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা আসছেন রকমারি পণ্যসামগ্রী নিয়ে। ট্রাক-টেম্পো থেকে মালপত্র নামানো, পাহারা দেওয়া, জায়গা দখল, দোকান সাজানো—এসব কাজে ব্যস্ত সবাই। ক্লান্তি ভর করছে তাঁদের চোখেমুখে, কিন্তু ফুরসত নেই। মাঠের দক্ষিণ প্রান্তে বরাবরের মতো বলীখেলার মঞ্চ। পূর্বপ্রান্তে বিশাল বিশাল প্যান্ডেল তৈরি—পুতুলনাচ, বিচিত্রানুষ্ঠান, সংগীতানুষ্ঠান ইত্যাদির! রাস্তা রাঙিয়ে জায়গা দখল তো অনেক আগেই হয়ে গেছে, এখন চলছে বাঁশ, চৌকি ফেলে দোকান তৈরির কাজ।
শনিবার (২৫ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে তিনটায় একই স্থানে অনুষ্ঠিত হবে ঐতিহ্যবাহী বলীখেলা। বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা উদযাপন কমিটির আয়োজনে এতে সহযোগিতায় থাকছে বাংলালিংক।
সরকারি ছুটির দিন (শুক্রবার) হওয়ায় মেলায় শুরু থেকেই দেখা গেছে ক্রেতাদের আশাব্যঞ্জক উপস্থিতি। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষ কিনতে মেলায় আসছেন গৃহিণী-তরুণীরা।
হাতপাখা, শীতল পাটি, মাটির কলস থেকে শুরু করে চুড়ি ফিতা, রঙিন সুতা, হাতের কাঁকন, নাকের নোলক, মাটির ব্যাংক, ঝাড়ু, খেলনা, ঢোল, বাঁশি, বাঁশ বেতের নানা তৈজসপত্র, কাঠের পুতুল, নকশী কাঁথা, মাছ ধরার চাঁই, বেতের তৈরি চালুনি, তৈজসপত্র, মাটির তৈরি পুতুল, মাটির তৈরি খেলনা, ফুলদানি, তালপাখা, টব, হাঁড়ি-পাতিল, কুলা, গাছের চারা, দা-বটি, বৈশাখী ফল, খাঁচার পাখি, সবকিছুই পাওয়া যাচ্ছে মেলায়। এখানে যেমন রয়েছে ঘর সাজাবার উপকরণ, তেমনি আছে নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রী। এছাড়া মুড়ি মুড়কি, লাড্ডুর মতো রসনা তৃপ্তির নানা উপকরণতো রয়েছেই।
বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় লোকজ উৎসব হিসেবে জব্বার মিয়ার বলীখেলা ও বৈশাখী মেলাকে চিহ্নিত করা হয়। বলীখেলাকে ঘিরে লালদীঘির ময়দানে নাগর দোলা, সার্কাস ও বিচিত্রানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা উদযাপন কমিটির সভাপতি এবং কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী বলেন, বরিশাল, টাঙ্গাইল, গোপালগঞ্জ, ঢাকা, কক্সবাজার, টেকনাফসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিক্রেতারা এসেছেন। এরই মধ্যে মেলা জমে উঠেছে। বলীখেলা শুরু হলে মেলা আরও জমজমাট হয়ে উঠবে।
১৯০৯ সালে চট্টগ্রাম শহরের বদরপতি এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর এক কুস্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন বেগবান করতেই তিনি এ খেলার সূচনা করেছিলেন বলে জানা যায়। তার মৃত্যুর পরে এ খেলা পরিচিতি পায় জব্বারের বলীখেলা নামে।
এ বছর বসছে জব্বারের বলীখেলার ১০৬তম আসর। প্রতিবছর ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের মানুষ একত্রিত হন অন্যতম এ সামজিক উৎসবে।
২৮ এপ্রিল সিটি করপোরেশন নির্বাচন হওয়ায় নিরাপত্তা ঝুঁকির দোহাই দিয়ে এর আগে মেলার অনুমতি বাতিল করে পুলিশ। মেলা উদযাপন কমিটির অনুরোধের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত পুর্নবিবেচনা করে শেষ পর্যন্ত বলীখেলার পাশাপাশি বৈশাখী মেলা আয়োজনের অনুমতি দেয় পুলিশ।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।