আত্মগোপনে বিএনপি পন্থী ৫৬ সিটি কাউন্সিলর প্রার্থী
ভোটের বাকি আর মাত্র তিন দিন। তবে প্রচারের মাঠে নেই ঢাকার দুই সিটির ৫৬ জন বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী। মামলা মাথায় নিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন তারা। এ পরিস্থিতিতে প্রার্থীদের স্ত্রী, সন্তান, ভাই-ভাতিজা এবং দলীয় নেতাকর্মী-সমর্থকদের প্রচারকাজের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে তাদের। বিএনপি নেতারা বলছেন, মামলা মাথায় নিয়ে কয়েকজনকে প্রকাশ্যে গণসংযোগে দেখা গেলেও তা 'খুবই স্বল্প সময়ের জন্য।' পুলিশ নয়তো ক্ষমতাসীন দলের নেতারা তাদের গণসংযোগ না করতে হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তারা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে বিএনপি সমর্থিত ৩১ প্রার্থীর বিরুদ্ধে ১৫৮টি মামলার তদন্ত চলছে। ঢাকা উত্তর সিটিতে বিএনপির ৩০ প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ১৩০টি। অবরোধ-হরতালে গাড়ি পোড়ানোসহ নাশকতার মামলা থেকে হত্যা মামলা পর্যন্ত রয়েছে এসব প্রার্থীর বিরুদ্ধে। ঢাকা উত্তর সিটির ৩ জন ও দক্ষিণ সিটির ৩ জন কাউন্সিলর প্রার্থী ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে রয়েছেন ঢাকা দক্ষিণের ৩৬ ও উত্তরের ২০ জন কাউন্সিলর প্রার্থী। গণসংযোগে আছেন উত্তরে ১৩ ও দক্ষিণে ১৩ প্রার্থী। ৫টি ওয়ার্ড উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ বলেন, প্রায় সব কাউন্সিলর প্রার্থীই মিথ্যা মামলার শিকার। বারবার দাবি জানানো সত্ত্বেও সরকার ও নির্বাচন কমিশন 'লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড' তৈরি করতে পারেনি। পুলিশ আর ক্ষমতাসীন দলের হুমকির মুখে ভোটারদের কাছে যেতে পারছেন না বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা। ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসের নির্দেশনায় ঢাকার দুই সিটিতে কাউন্সিলর প্রার্থী বাছাই ও বর্তমানে প্রচারকাজের তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত রয়েছেন যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সালাম আজাদ। তিনি আরো বলেন, কাউন্সিলর প্রার্থীরা কোনো রকমে দু'একটি জায়গায় গণসংযোগ করেই আবার দ্রুত গা ঢাকা দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
সংরক্ষিত নারী আসনেও কয়েকজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে বলে জানান মহানগর মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদিকা ফরিদা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটির সংরক্ষিত ১২নং আসনের প্রার্থী সুরাইয়া বেগম ও উত্তর সিটির ৪নং আসনের প্রার্থী মিলি জাকারিয়াসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।
গ্রেপ্তার আতঙ্কে বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারে নামতে পারছেন না- এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) জাহাঙ্গীর আলম সরকার বলেন, যার বিরুদ্ধে মামলা আছে এবং আইনি বলে যদি তাকে গ্রেপ্তার করা যায় সেটা করা হবে। পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, কারও বিরুদ্ধে যদি ফৌজদারি মামলা থাকে, কেউ যদি এজাহারভুক্ত আসামি হন বা কারও বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকে তাকে আইনের আওতায় নেওয়া পুলিশের কর্তব্য।
আত্মগোপনে রয়েছেন যারা :দক্ষিণ সিটিতে বিএনপি সমর্থিত ৩১ প্রার্থীর বিরুদ্ধে ১৫৮টি মামলার তদন্ত চলছে। ৪নং ওয়ার্ডের প্রার্থী মো. গোলাম হোসেনের বিরুদ্ধে রয়েছে ১০টি মামলা। ৫নং ওয়ার্ডের মো. হামিদুল হক ৫টি মামলা মাথায় নিয়ে গা ঢাকা দিয়ে আছেন। ৬নং ওয়ার্ডের মো. শামছুল হুদার বিরুদ্ধে রয়েছে ৩টি মামলা। জামিন না পেয়ে তারা রয়েছেন আত্মগোপনে। এ ছাড়াও মামলায় গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে আছেন ইসমাইল হোসেন (ওয়ার্ড-৮), মকবুল আহমেদ আকন্দ (ওয়ার্ড-৯)। ১০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী হারুনুর রশিদের বিরুদ্ধে ২৫টি এবং ১৩নং ওয়ার্ডের প্রার্থী লোকমান হোসেন ফকিরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মামলার সংখ্যা ৪৫টি। আত্মগোপনে থাকা বাকি প্রার্থীরা হলেন_ মো. রফিকুল হক (ওয়ার্ড-১৪), আবুল খায়ের বাবলু (ওয়ার্ড-১৫), জাফর মো. সাদেকুর রহমান (ওয়ার্ড-১৬), মো. জাহাঙ্গীর হোসেন (ওয়ার্ড-১৮), মো. আরিফুল ইসলাম আরিফ (ওয়ার্ড-১৯), জাহিদ হোসেন নোয়াব (ওয়ার্ড-২০), খাজা হাবিবুল্লাহ হাবিব (ওয়ার্ড-২১), সাঈদ হোসেন সোহেল (ওয়ার্ড-২৩), শফিউদ্দিন আহমেদ সেন্টু (ওয়ার্ড-২৪), হাজী আলতাফ হোসেন (ওয়ার্ড-২৫), মীর আশরাফ আলী আজম (ওয়ার্ড-২৬), আনোয়ার পারভেজ বাদল (ওয়ার্ড-২৮), শফিকুল ইসলাম রাসেল (ওয়ার্ড-২৯), হাজি মো. আবদুর রাজ্জাক (ওয়ার্ড-৩০), মো. রফিকুল ইসলাম রাসেল (ওয়ার্ড-৩১), মো. মোহন (ওয়ার্ড-৩৩), হাজি আবেদ উদ্দিন আহমেদ (ওয়ার্ড-৩৪), ইয়াকুব সরকার (ওয়ার্ড-৩৫), এবিএম পারভেজ রেজা (ওয়ার্ড-৩৭), মেহেরুন্নেছা (ওয়ার্ড-৩৮), মো. লিয়াকত আলী (ওয়ার্ড-৪১), আবদুল কাদির (ওয়ার্ড-৪৫), আতিকুল্লাহ আতিক (ওয়ার্ড-৪৮), রাইছেল হাসান হবি (ওয়ার্ড-৫০), বাদল রানা (ওয়ার্ড-৫২), মো. মীর হোসেন মীরু (ওয়ার্ড-৫৩), মোজাম্মেল হোসেন (ওয়ার্ড-৫৪), শহিদুল হক (ওয়ার্ড-৫৫) ও মো. নাঈম (ওয়ার্ড-৫৬)।
ঢাকা উত্তর সিটিতে বিএনপির ৩০ প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ১৩০টি। এরমধ্যে ২৭নং ওয়ার্ডের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ারের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ৪৭টি মামলা রয়েছে। মামলার কারণে নির্বাচনী মাঠ ছেড়ে দূরে থাকছেন অন্যদের মধ্যে কফিলউদ্দিন (ওয়ার্ড-১), কাজী আলী ইমাম আসাদ (ওয়ার্ড-৩), মো. আনোয়ার হোসেন (ওয়ার্ড-৫), মাহফুজ হোসাইন খান সুমন (ওয়ার্ড-৬), দেলোয়ার হোসেন দুলু (ওয়ার্ড-৭), মো. মাসুদ খান (ওয়ার্ড-১০), রুনু আক্তার (ওয়ার্ড-১২), আক্তার হোসেন জিল্লু (ওয়ার্ড-১৪), ফারুক হোসেন ভূইয়া (ওয়ার্ড-১৯), মো. হাবিব উল্লাহ হবি (ওয়ার্ড-২০), এজিএম সামছুল হক সামসু (ওয়ার্ড-২১), ফয়েজ আহমেদ (ওয়ার্ড-২২), আবুল মেছের (ওয়ার্ড-২৩), সাইফুল আলম কাজল (ওয়ার্ড-২৫), নবী সোলায়মান (ওয়ার্ড-২৬), মো. এনায়েতুল হাফিজ (ওয়ার্ড-২৯), ফরিদ উদ্দিন ফরহাদ (ওয়ার্ড-৩১), আতিকুল ইসলাম মতিন (ওয়ার্ড-৩২) ও সাহাবুদ্দিন মুন্না (ওয়ার্ড-৩৩)।সীমিত প্রচার চালাচ্ছেন কয়েকজন প্রার্থী :ঢাকা দক্ষিণে ১নং ওয়ার্ডের প্রার্থী হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে ৪টি মামলা থাকলেও তিনি সতর্কতার সঙ্গে মাঝে মধ্যে ভোটারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া পুলিশ ও ক্ষমতাসীনদের হুমকি মাথায় নিয়ে 'ভোট চেয়ে আবার গা ঢাকা দেওয়া' পদ্ধতি অবলম্বন করে প্রচারকাজে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন কয়েকজন প্রার্থী।
৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী শেখ আমির হোসেন বলেন, মিথ্যা মামলা মাথায় নিয়ে সীমিত পরিসরে প্রচার চালাচ্ছি। কোথাও ভোট চাইতে দেখলে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা হুমকি দিচ্ছেন। একইসঙ্গে পুলিশের হয়রানির ভয়ে পালিয়ে কাজ করতে হচ্ছে।
সীমিত প্রচার চালানো প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন ২নং ওয়ার্ডের হাবিবা চৌধুরী বীথি ও ৩নং ওয়ার্ডের প্রার্থী আবুল হোসেন। অন্যদের মধ্যে আছেন এজিএম মোস্তফা বাদশা (ওয়ার্ড-৭), মো. দেলোয়ার হোসেন (ওয়ার্ড-১১), ফজলে রুবাইয়াত পাপ্পু (ওয়ার্ড-১২), সাইদুর রহমান (ওয়ার্ড-১৭), সাইদা মোর্শেদ (ওয়ার্ড-২৭), ইমরানুল ইসলাম (ওয়ার্ড-৩২), মো. ফারুক (ওয়ার্ড-৪৬), কাজী মাহাবুব মওলা হিমেল (ওয়ার্ড-৪৭), খালিকুজ্জামান চৌধুরী (ওয়ার্ড-৪৯) ও মো. রাসেল আলম (ওয়ার্ড-৫৭)।
ঢাকা উত্তরে সীমিত পরিসরে প্রচার চালাচ্ছেন মো. সাজ্জাদ হোসেন (ওয়ার্ড-২), সাবি্বর দেওয়ান জনি (ওয়ার্ড-৪), ফেরদৌসী আহমেদ মিষ্টি (ওয়ার্ড-৮), ডা. মো. বদিউজ্জামান (ওয়ার্ড-৯), মো. আবদুল মতিন (ওয়ার্ড-১৩), বাবুল শিকদার (ওয়ার্ড-১৫), আলহাজ সৈয়দ একরাম হোসেন বাবুল (ওয়ার্ড-১৬), মো. শাহিনুর আলম (ওয়ার্ড-১৭), ইঞ্জিনিয়ার কাজী আবদুল লতিফ (ওয়ার্ড-১৮), মাহমুদুল আলম মন্টু (ওয়ার্ড-২৪), আফতাবউদ্দিন জসিমের (ওয়ার্ড-২৮) এবং সাজেদা আলী হেলেন (ওয়ার্ড-৩৬)।
কারারুদ্ধ ৬ প্রার্থী :ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে বিএনপি সমর্থিত ৬ প্রার্থী সরকারবিরোধী আন্দোলন চলাকালে অগি্নসংযোগ ও নাশকতা মামলার আসামি হয়ে বর্তমানে কারারুদ্ধ। তারা হলেন_ ঢাকা দক্ষিণের ৪০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী মকবুল ইসলাম খান টিপু, ৪৩নং ওয়ার্ডের ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও ৪৪নং ওয়ার্ডের আবদুস শাহেদ মন্টু এবং ৩০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল হাসেম।গত ৭ এপ্রিল আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর পর বিএনপি সমর্থিত দুই প্রার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন_ ঢাকা উত্তরের ১১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী এএলএম কাওসার আহম্মদ ও ৩৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী ওসমান গনি শাহজাহান।
sahos24.com | Online newspaper
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।