ঝালকাঠিতে সরবরাহ হচ্ছে না এলপি গ্যাস
ঝালকাঠি জেলায় সরকারি এলপি গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। অবরোধ আর হরতালে এক মাস অতিবাহিত হলেও গ্যাস বহনকারী ট্রাক আসছে না। যে কারণে গোটা জেলার তিনটি কোম্পানির প্রায় ৩ হাজার বোতলজাত এলপি গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
এর প্রভাবে বেসরকারি এলপি গ্যাসের সরবরাহ যেমন কমে গেছে তেমনি দামও বেড়েছে অনেকাংশে। ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন এলপি গ্যাস ব্যবহারকারী সাধারণ গ্রাহকরা। দেশের বৃহত্তম তিনটি এলপি গ্যাস কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা’র এলপি গ্যাস এক মাস ধরে ঝালকাঠিতে আসছে না। চলমান হরতাল আর অবরোধে সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে বলে কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
এলপি গ্যাস কোম্পানি পদ্মা ও মেঘনার ডিলার ঝালকাঠির মিম ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী নজরুল ইসলাম পনির বলেন, ঝালকাঠিতে পদ্মা ও মেঘনার মূল ডিপো। এখানে সর্বশেষ গেল বছরের ডিসেম্বরে এক ট্রাক গ্যাস এসেছিল। এরপর এক মাস ধরে গোটা বিভাগে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
ডিলার নজরুল বলেন, প্রতি মাসে পদ্মা কোম্পানির তিন থেকে চার গাড়ি গ্যাস বরিশাল বিভাগের জন্য আসে। প্রতি গাড়িতে ৩০০ সিলিণ্ডার এলপি গ্যাস সরবরাহ হলেও মাসে পদ্মার এলপি গ্যাস সরবরাহ হয় প্রায় ১ হাজার ২০০ সিলিণ্ডার। একইভাবে মেঘনা ডিপোতেও প্রায় ৬০০ সিলিণ্ডার এলপি গ্যাস আসে। কিন্তু অবরোধের কারণে গ্যাসের চালান বরিশালে আসছে না।
এর কারণ হিসেবে ডিলার নজরুল বলেন, চট্টগ্রাম ও সিলেট থেকে এসব গ্যাস আসে বিধায় অবরোধের কারণে এত দূর থেকে গ্যাস সরবরাহ করছে না কর্তৃপক্ষ।
তিনি বলেন, এক্ষেত্রে গ্রাহকের দুর্ভোগের কথা জানিয়ে ডিপোকে জানালেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এমনকি ঝালকাঠি জেলা প্রশাসকও এ বিষয়ে এলপি গ্যাস ডিপো কর্তৃপক্ষকে তাগিদ দিচ্ছেন না।
এলপি গ্যাস কোম্পানি পদ্মা ডিপোর মিটার ম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, সিলেট থেকে তাদের গ্যাস সরবরাহ হয়। প্রতি মাসে ১ হাজারের অধিক সিলিণ্ডার আসে। কিন্তু অবরোধের কারণে সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। চাহিদা পাঠালেও কবে নাগাদ আসবে তা বলা যাচ্ছে না। একই অবস্থা এলপি গ্যাস কোম্পানি যমুনা ও মেঘনারও।
ঝালকাঠির ৩ টি ডিপো সূত্রে জানা গেছে, প্রতি মাসে প্রায় ১ হাজার ২০০ এলপি গ্যাস সিলিণ্ডার আসত। কিন্তু অবরোধের কারণে এক মাস ধরে আসছে না।
ঝালকাঠির মেঘনা ডিপো সুপার মনিরুল বাশার বলেন, প্রতি সপ্তাহে ট্রাকে করে সাড়ে ৪শ সিলিণ্ডার আসত। অবরোধের মধ্যে হরতাল দেয়ায় তা আসছে না।
যমুনা ডিপো সুপার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বরিশাল থেকে গাড়ি আসার স্বাপেক্ষে আমরা অল্প কিছু গ্যাস পাই, তা আমরা সাপ্লিমেন্টারী হিসেবে স্থানীয় ক্রেতাদের সরবরাহ করি।
জেলা বিক্রয় কর্মকর্তা মোঃ রুবেল বলেন, চট্টগ্রাম থেকে আমাদের গ্যাস সরবরাহ করা হয়। ঠিকাদার হরতাল অবরোধের কারণে পুলিশি প্রহরা ছাড়া দিতে চাচ্ছে না। তাই ঝুঁকি নিয়ে ট্রাক না আসায় গ্রাহকের নিকট চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে না।
পদ্মা ডিপো সুপার মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, ৪ জানুয়ারি অবরোধ ঘোষণার পর থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। তাই গ্রাহকদের কাছে আমরা গ্যাস দিতে পারছি না। এদিকে সরকারি এসব ডিপো থেকে এলপি গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় বেসরকারি গ্যাসের ওপর প্রভাব পড়েছে। হরতাল-অবরোধে বেসরকারি বসুন্ধরা, টোটালসহ বিভিন্ন কোম্পানির গ্যাস সরবরাহ অনেকটা কমে গেছে। শহরের বিভিন্ন খুচরা গ্যাসের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, বেসরকারি এলপি গ্যাস নানা অজুহাতে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে।
ক্রেতারা জানান, সরকারি গ্যাস তো পাওয়াই যায় না। তার ওপর সরবরাহ বন্ধ থাকায় বেসরকারি গ্যাসেরও দাম বাড়ানো হচ্ছে নানা অজুহাতে। এ অবস্থায় চরম বিপাকে পড়েছেন সাধারণ গ্রাহকরা।
এ ব্যাপারে কলেজ রোডের সজল এন্টারপ্রাইজের এলপি গ্যাস বিক্রেতা সজল বলেন, সরকারি গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় এর প্রভাব বাজারে পড়েছে। কিন্তু দাম বাড়েনি বলে তিনি দাবি করেন।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।