ধ্বংস করা হচ্ছে সোনামসজিদ সীমান্তের পপি ক্ষেত
অবশেষে ধ্বংস করা হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সোনামসজিদস্থলবন্দর সংলগ্ন সীমান্তের নো-ম্যান্স ল্যান্ডের নিষিদ্ধ পপি ক্ষেত। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের পর ১ বছরের মাথায় এই পপি চাষ বন্ধ করার জন্য এসব পপি ক্ষেতগুলো ধ্বংস করা হয়।
মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল পর্যন্ত এ পপিক্ষেত ধ্বংসের সময় বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৯’বিজিবি ব্যাটালিয়নের সোনামসজিদ কোম্পানী সদরের কোম্পানী কোমান্ডর সুবেদার শামসুর রহমান এবং ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দেন মোহদীপুর বি.এস.এফ ক্যাম্প কমান্ডার এ.সি বিশ্বাস।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের দিলালপুরের বিপরীতে সোনামসজিদসহ সংলগ্ন সীমান্তের নো-ম্যান্স ল্যান্ড এলাকার আন্তর্জাতিক সীমান্ত মেইন পিলার ১৮৪/১ এস হতে ৪এস পিলার পর্যন্ত এলাকার প্রায় ৭৫ একরের বেশী জমিতে গত ২ বছর ধরে চলছিল হেরাইন উৎপাদনের জন্য নিষিদ্ধ পপি চাষ। ভারতীয় ও বাংলাদেশের কতিপয় মাদক ব্যবসায়ী বাংলাদেশী সীমান্ত পিলার ঘেঁষে নোম্যান্সল্যান্ডের এবং ভারতীয় জমিতে এই পপি চাষের সাথে জড়িত ছিল। ভারতীয় ভূখন্ডের কাটাতারের বেড়ার বাংলাদেশের দিকে ও নোম্যান্সল্যান্ডে এর চাষাবাদ হওয়ায় সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ প্রশাসন দ্রুত ব্যাবস্থা নিতে না পারায় মাদক ব্যাবসায়ীরা দেশের অভ্যন্তরে বিনা বাধায় এখানে উৎপাদিত মাদক সরবরাহ করছিল।
জানা গেছে, সোনামসজিদ স্থলবন্দর সংলগ্ন ভারতের মিলিক সুলতানপুর মৌজায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের নো-ম্যান্সল্যান্ডসহ এর আশেপাশের প্রায় ৩৫০ বিঘা জমিতে এবছরও মরণনেশা হেরোইন ও আফিম তৈরির মুল উপাদান নিষিদ্ধ পপির চাষ করেছিল ভারতীয় কৃষকরা। ভারতের মালদহ জেলার সুলতান মিলিক এলাকার জনৈক আরশাদ এসব পপি চাষের মূল উদোক্তা বলে অনুসন্থানে জানা গেছে। অধিক লাভজনক ও নিরাপদ স্থান হওয়ায় পপি চাষের জন্য সোনামসজিদ সীমান্ত এলাকাকে বেছে নিয়েছে ভারতীয় নাগরিকরা। এর আগে গত বছর ফেব্রয়ারীতে একই এলাকায় পপি চাষ এবং পপি সংগ্রহ হওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন সীমান্ত এলাকার মানুষরা।
এর প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ফেব্রয়ারীতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ-চিত্র ও প্রতিবেদন প্রকাশের পর দায়িত্বপূর্ন ৯’বিজিবি ব্যাটালিয়ন বিষয়টি তদন্ত করে ও পরবর্তীতে বিজিবি-বিএসএফ এর মধ্যে অনুষ্ঠিত এক সীমান্ত বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে কড়া প্রতিবাদ ও সীমান্তে পপি চাষ বন্ধের অনুরোধ জানান হয়। চলতি বছর আবারও সীমান্ত এলাকায় পপি চাষ হলে গত মঙ্গলবার থেকে ৯ বিজিবি’র উপস্থিতিতে ভারতের মালদহ জেলার এক্সাইজ বিভাগের সুপারিনটেনডেন্ট এন্ড ডেপুটি কমিশনার আর.আর সরকারের নের্তৃত্বে বিএসএফ, পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিভাগের কর্মকর্তারা সোনামসজিদ সীমান্তে ভারতীয়দের চাষ করা সাড়ে ৩’শ বিঘা জমির পপি ক্ষেত ধ্বংসের সিধান্ত নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার পপি ক্ষেত ধ্বংসে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়। বুধবার পর্যন্ত ১৫৫ বিঘা জমির পপি ধ্বংস করা হয়েছে। বৃহস্প্রতিবার বাকি জমির পপিক্ষেত ধ্বংস করা হবে বলে বিজিবি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়।
এ ব্যাপারে ৯’বিজিবি’র সোনামসজিদ কোম্পানী কোমান্ডার সুবেদার শামসুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমাদের দেশের স্বার্থে সমস্ত পপিক্ষেত যতক্ষন পর্যন্ত পুরোপুরি ধ্বংস না হবে ততক্ষন পর্যন্ত এর ধ্বংস কার্যক্রম উভয় দেশের সীমান্ত বাহিনীর উপস্থিতিতে চলবে।
এ ব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৯ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্নেল আবু জাফর, দু’দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে সোনামসজিদ সীমান্তে চাষকৃত পপিক্ষেত ধ্বংস অভিযান গত মঙ্গলবার থেকে পরিচালনা করা হচ্ছে। বুধবার পর্যন্ত ১৫৫ বিঘা জমির পপিক্ষেত ধ্বংস করা হয়েছে। বাকি জমির পপি বৃহস্প্রতিবার দু’দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর উপস্থিতিতে ধ্বংস করা হবে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।