নৃশংসতার শিকার শিশু সফির আহমেদ
নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রকাশ : ২১ জানুয়ারি, ২০১৫
প্রিন্টঅঅ-অ+
আড়াই বছরের ফুটফুটে শিশু সাফির আহমেদ। চিকিৎসক দম্পতির আদরের সন্তান। গরম পানি গায়ে পড়ে চঞ্চল এই শিশুটির ডান পা পুড়ে গিয়েছিল। ব্যাকুল মা-বাবা সন্তানকে সুস্থ করতে ছুটে আসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। পরিপূর্ণ সুস্থ হওয়ার পর রোববার বিকেলে সাফিরকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জে নানার বাসার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। সেখানে রয়েছে তাদের চার মাস বয়সী আরেক শিশুসন্তান। তবে কী মর্মন্তুদ! বাসায় পৌঁছার আগেই দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রোলবোমার আগুনে আবার ঝলসে যায় ছোট্ট সাফিরের সেই পুড়ে যাওয়া ডান পা, চাঁদের মত মুখ, দুই হাত; সঙ্গে পোড়ে একটি দম্পতির স্বপ্নও।
সাফির এখন রাজধানীর লালমাটিয়ার সিটি হাসপাতালের আইসিইউতে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। চঞ্চলতা আর খিলখিল হাসির শব্দ ফোটে না তার আদুরে কণ্ঠ। সিমাহীন যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে তার বাবা-মা। পোড়া শরীর নিয়ে তারাও পড়ে আছেন হাসপাতালের বিছানায়। সন্তানের পাশে থাকতে না পারার যন্ত্রণা তাদের পোড়া শরীরের যন্ত্রণার চেয়েও অনেক বেশি। নিজেরা চিকিৎসক হয়েও তারা আজ ভাগ্যের কাছে পরাজয়।
রোববার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারে দুর্বৃত্তরা। সেই আগুনে দগ্ধ হয় শিশু সাফির, তার মা ডা. শারমিন সিদ্দিকা এবং বাবা ডা. সাইফুল ইসলাম। তাদের উদ্ধার করে লালমাটিয়া সিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গতকাল দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, একটি বেডে হেলান দিয়ে বসে আছেন মা শারমিন। তার দুই হাত ব্যান্ডেজ করা। একটি হাত গলায় ঝোলানো। ছেলেকে আগুন থেকে বাঁচাতে গিয়ে এ হাত ভেঙে গেছে। পুড়েছে কপাল, চোখের কোণসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ। একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাইফুল ইসলাম। সাফিরের শরীর থেকে আগুন লাগা জ্যাকেট খুলতে গিয়ে তার পুড়েছে দুই হাত, গলা ও মুখের একাংশ। ভেঙেছে একটি হাতও। ব্যান্ডেজ লাগানো ভাঙা হাতটি গলায় ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
'সাফির কান্না করছে, মাকে খুঁজছে'- নার্সদের কাছে এমন তথ্য পেলেই নিজেদের শরীরের যন্ত্রণা ভুলে দৌড়ে যান ছেলের শয্যাপাশে। চেষ্টা করেন ছেলের কান্না থামাতে। নানা গল্প শোনান। কিন্তু যন্ত্রণাকাতর সাফিরের কান্না থামে না। কোলে ওঠার আবদার নিয়ে মা-বাবার দিকে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ব্যান্ডেজ লাগানো ভারী হাত তোলার শক্তি নেই ছোট্ট শরীরে। কাঁদতে কাঁদতেই সে ঘুমিয়ে পড়ে আইসিইউর বিছানায়। মা-বাবার চোখেও ঝরছে পানি। অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন ছেলের অচেনা মুখের দিকে। চিকিৎসকদের পরামর্শে আবার ফিরে যান নিজেদের নির্ধারিত শয্যায়।
আলাপকালে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন শারমিন; একপর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। বলেন, 'কী দোষ করেছিলাম? কোন অপরাধে এই ছোট্ট নিষ্পাপ শিশু মৃত্যুযন্ত্রণা ভোগ করছে?'সিটি হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের চিফ কনসালট্যান্ট শহিদুল বারী জানান, সাফিরকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কামুক্ত- এ কথা এখনই বলা যাবে না।
ফারুক বাসের আগুন দেওয়ার ঘটনা সম্পর্কে বলেন, বাসে আগুন ধরে যাওয়ার পর শারমিনকে জানালা দিয়ে বাইরে বের করার চেষ্টা করেন সাইফুল। এ সময় শারমিন নিচে পড়ে গিয়ে হাত ভেঙে যায়। পরে তাড়াহুড়ো করে সাফিরকে নিয়ে বাস থেকে নামার সময় সাফির হাত থেকে ছুটে যায় এবং তার শরীরে আগুন ধরে যায়। সে আগুন নেভাতে গিয়ে সাইফুলের দুই হাত পুড়ে যায়।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।