দগ্ধক্ষত বুকে নিয়ে আজও বেঁচে আছেন ৭১'র বীরকন্যা ফুলমতি
মহান স্বাধীনতা জাতীয় দিবস ও বিজয় দিবস এলেই সেই অসহ্য যন্ত্রণা আর নির্যাতনের স্মৃতি তাড়িয়ে ফেরে ৭৫ বয়সী বৃদ্ধা ফুলমতি রানীকে। হাজারো চেষ্টা করেও তিনি ভুলতে পারেনা ৭১’র সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাক হানাদার বাহিনীর হাতে লালসার স্বীকার হওয়ার কথা। অথচ স্বাধীনতার ৪৩ বছরেও তার ভাগ্যে জোটেনি মুক্তিযুদ্ধের সেই অবদানের স্বীকৃতি।
ফুলমতি বলেন, জোটবে কেন? আমরা যে সনাতন ধর্মের সব চেয়ে নিচু জাতের মানুষ। ভদ্র ভাষায় যাকে বলে হরিজন। সোজা কথা মুচি। বংশানুক্রমে জুতা সেলাই বা মেরামত করাই আমাদের কাজ। সেই ঘরে জন্ম নেওয়াই হয়েছে আমাদের কাল। তাই তার যত বড় অবদানেই থাকুক না কেন তার আবার কিসের স্বীকৃতি? কান্নাজড়িত কন্ঠে এভাবে কথা বললেন বীরাঙ্গনা ফুলমতি রানী।
গাইবান্ধা জেলাধীন সাদুল্যাপুর উপজেলা শহরের উত্তর পাড়ার ভূমি অফিসের পূর্ব পার্শ্বে রাস্তার ধারে খাস জমিতে ফুলমতি রানীর বাড়ি। বাড়ি তো নয়, কয়েকটি টিন আর বাঁশ ও ছনের ঝুপড়ি ঘর। তার স্বামীর নাম ফসিরাম রবিদাস। নিজের সব কিছু বিলিয়ে দিয়ে আজ তিনি সর্বহারা। ৭১ এর নির্যাতনের ক্ষত বুকে নিয়ে দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে না খেয়ে এখনও বেচে আছেন এই বীরঙ্গনা। এখন কেউ আর তার খোঁজ রাখেনা।
ফুলমতি রানী এ প্রতিবেদককে জানান, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে একদিন স্থানীয় এক বিহারীর সঙ্গে পাক হানাদার বাহিনীর কয়েকজন সৈন্য তার বাড়িতে এসে তাকে ঘর থেকে বের করে অন্যত্র নিয়ে গিয়ে ইজ্জতহানী করে। ৭১ এর উত্তাল দিন গুলোর মধ্যে এভাবে কয়েক বার পাকিস্থানী হায়েনাদের লালসার শিকার হন ফুলমতি রানী।
চার ছেলে এক মেয়ের জননী ফুলমতি বলেন, ১৯৮৮ সালে স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে অতিকষ্টে জীবন যাপন করে আসছি। ছেলেদের সংসারে বাড়তি বোঝা হয়ে কোন মতে খেয়ে না খেয়ে বেচে আছি। অদ্যবদি বীরঙ্গনা হিসাবে কোন স্বীকৃতি পাইনি। পাব কি? এটাই এখন তার প্রশ্ন।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।