প্রধানমন্ত্রীর নামে জমি লিখে দিয়ে চাকরি!
নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রকাশ : ১৩ আগস্ট, ২০১৪
প্রিন্টঅঅ-অ+
প্রধানমন্ত্রীর নামে জমি রেজিস্ট্রি করে নিয়ে অবৈধভাবে চাকরি দেওয়ার এক অভিনব ঘটনা ধরা পড়েছে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার মোহনগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে। শেখ হাসিনার নামে লিখে নেওয়া জমিতে কার্যালয় স্থাপন করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। পুরো ঘটনাই ঘটেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অগোচরে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা এ ঘটনাটিকে অপরাধ হিসেবেও মনে করছেন না। সুলতানা পারভীন নামের এক নারীকে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ দিতে ২০১১ সালে ওই জমিটি লিখে নেওয়া হয়। মোহনগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক লুৎফর রহমান ওই নারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে ভুয়া ইনডেক্স ব্যবহার করে নিয়োগ নেওয়ার অভিযোগ করার পর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর তদন্ত শুরু করে। তদন্তের একপর্যায়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর নামে জমি লিখে নেওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে।
বাগমারা ভূমি অফিসের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০১১ সালের ২৯ জুন ভবানীগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে জমিটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে রেজিস্ট্রি করা হয়। যার ক্রমিক নম্বর-৫১৪৩, বহি নম্বর-০১, দলিল নম্বর-৫১২৯। মোহনগঞ্জ মৌজা নম্বর-১১৫, আরএস খতিয়ান নম্বর-৮৬, হাল দাগ নম্বর-৯২৬ ও ৯২৭, ইউনিয়ন- গনিপুর, উপজেলা- বাগমারা, জমির পরিমাণ- ১ ডেসিমেল (১০ ছটাক)। শেখ হাসিনার পক্ষে জমিটির দলিলে গ্রহিতার স্বাক্ষর করেন গনিপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজাম্মেল হক। নিয়োগ পাওয়া শিক্ষিকা সুলতানা পারভীনের শ্বশুর আবদুল করিম ও চাচাশ্বশুর কোহিনুর মৃধা জমিটি রেজিস্ট্রি করে দেন।
মোহনগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি ইনছান আলী জানান, শিক্ষক সুলতানা পারভীনের কাছ থেকে এক শতক জমি নেওয়া হয়েছে সরকারপ্রধানের নামে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ অফিস নির্মাণের জন্য জমিটি নেওয়া হয়েছে। তিনি বিষয়টি জানেন। কোনো ব্যক্তির নামে নয়, আওয়ামী লীগ প্রধানের নামে জমিটি রেজিস্ট্রি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
মোহনগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া সুলতানা পারভীন জানান, তাকে নিয়োগ দিতে দুই লাখ টাকা দাবি করা হয়েছিল। তিনি এক লাখ টাকা নগদ দেন। এর পর বেতন হলে ধাপে ধাপে বাকি টাকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই এক লাখ টাকার জন্য তার কাছ থেকে পরে জমিটি লিখে নেওয়া হয়। চাকরির জন্য তার শ্বশুর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে জমিটি রেজিস্ট্রি করে দেন। এখন সেখানে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কার্যালয় করা হয়েছে।
মোহনগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক লুৎফর রহমান জানান, তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে চারজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ওই চারজনই শিক্ষক নিবন্ধনের ভুয়া ইনডেক্স ব্যবহার করে নিয়োগ পান। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া শুরু করেন। এর পর জানতে পারেন, চারজনই ভুয়া ইনডেক্স ব্যবহার করেছেন। তিনি মাউশির মহাপরিচালকের কাছে বিষয়টি লিখিতভাবে জানান। মাউশি বিষয়টি তদন্তের জন্য রাজশাহী অঞ্চলের উপ-পরিচালককে দায়িত্ব দেয়। উপপরিচালক তদন্ত শুরু করলে সুলতানা পারভীনের কাছ থেকে নিয়োগের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে জমি নেওয়ার বিষয়টি বেরিয়ে আসে।
রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী জানান, তিনি তদন্ত করতে গিয়ে সুলতানা পারভীনের কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রীর নামে জমি লিখে নেওয়ার সত্যতা পান। বিষয়টি তদন্ত করে মাউশির মহাপরিচালকের কাছে ইতিমধ্যে রিপোর্টও দেওয়া হয়েছে।
বাগমারা উপজেলার গনিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুন-অর-রশিদ জানান, স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ করলে সব জায়গায় টাকা নেওয়া হয়। এখানে সুলতানা পারভীনের কাছ থেকে জমি নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, 'এক শতক জমি তার (সুলতানা পারভীন) শ্বশুর আওয়ামী লীগ প্রধানকে দিয়েছেন। আমরা নিজের নামে নিইনি। প্রধানমন্ত্রীর নামে নিয়েছি। এতে কোনো অন্যায় দেখি না।'
এ ব্যাপারে কথা বলতে গ্রহিতার স্বাক্ষর করা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজাম্মেল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় তার সঙ্গে কথা বলা যায়নি।
বাগমারা উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিকুল ইসলাম জানান, তিনি কয়েক দিন আগে যোগদান করেছেন। এ কারণে ওই জমিটির কোনো তথ্য তার কাছে নেই। তবে তিনিও প্রধানমন্ত্রীর নামে জমি রেজিস্ট্রির কথা শুনেছেন বলে জানান।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।