রাঙামাটিতে পর্যটক জুটি যৌন হয়রানির শিকার
পর্যটন নগরী পার্বত্য জেলা শহর রাঙামাটিতে বেড়াতে এসে উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের হাতে মারধর ও পরে যৌন নিগৃহের শিকার হয়েছেন পর্যটক দম্পতি। গত সোমবার সন্ধ্যার দিকে লোক লজ্জার ভয়ে ঐ দম্পতি রাঙামাটি ছেড়ে চলে গেছেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও হয়রানির শিকার পর্যটক আবির (ছদ্মনাম) জানান, জীবনে কখনো রাঙামাটিতে না আসা তারা দুজনেই রাউজান থেকে সোমবার বেলা ১টার সময় রাঙামাটিতে এসেছেন বেড়ানোর উদ্দেশ্যে।
জানা যায়, দম্পতিদ্বয় পর্যটন কর্পোরেশনের নির্দিষ্ট টিকিট কেটে ভেতরে প্রবেশ করেন এবং ব্রীজে উঠে সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করেন। পরে তারা দু’জনেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে হাঁটতে হাঁটতে সামনের দিকে এগুতে থাকেন। মনের অজান্তেই তারা উভয়েই ব্রীজের অপর পাশে অবস্থিত এক পাহাড়ি গ্রামের দিকে চলে যান। বেশকিছু পথ হাঁটার কারণে আবিরের (ছদ্মনাম) সাথে আসা মেয়ে সঙ্গীটির পায়ে ব্যথা করতে থাকলে সেখানে সে বসে পড়ে এবং কিছুক্ষণ পাহাড়ি এলাকায় অবস্থান করেন।
সেখানে কয়েকজন পাহাড়ি যুবক এসে তাদের ঘিরে ধরে এবং বেধড়ক মারধর করতে থাকে। পাহাড়ি যুবকরা তাদের মোবাইল ফোনের ক্যামেরা চালু করে তাদের দুই জনকেই উলঙ্গ করে অসামাজিক কাজ করতে বলে। এ সময় তারা এ ধরনের কাজ করতে অস্বীকৃতি জানালে মেয়ে সঙ্গীটিকে গণধর্ষণ করার হুমকি দেয় এবং বেদড়ক পেটাতে থাকে পাহাড়ি যুবকরা। পরে বাধ্য হয়ে তাদের কথামতো কাজ করতে বাধ্য হয় পর্যটক জুটি। পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা তাদের হাতে মোবাইল ফোনে তাদের এই দৃশ্য ভিডিও রেকর্ড করে নেয় বলে জানায় ভূক্তভোগী যুবক।
এ সময় মেয়েটি কান্নাকাটি করতে থাকলে তাদের দু’জনকেই মারধর করতে থাকে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা। পরে মেয়েটির কান্না শুনে ঘটনাস্থলের কিছুটা দূরেই গরুর জন্য ঘাস কাটতে থাকা বাঙ্গালী যুবক মালেক ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে। মালেকের সাথেও পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের বকা-বিতণ্ডা হয়। পরে ঘটনাটি লোক লজ্জার ভয়ে কাউকে না জানিয়ে ভয়ে রাঙামাটি ছেড়ে চলে যান ভূক্তভোগী এই দম্পতি।
ঘটনাস্থলে উদ্ধার করতে আসা মালেক জানান, 'আমি মেয়েটির কান্না শুনে একটু এগিয়ে সামনের দিকে গেলেই তাদের দুইজনকেই উলঙ্গ অবস্থায় দেখতে পাই। এ সময় তারা দু’জনেই আমার কাছে এসে আমার পায়ে ধরে বাঁচানো জন্য আকুতি জানাচ্ছিল। পরে আমি সঞ্জয়-সাত্তারসহ পাহাড়ি যুবকদের কাছে এদেরকে ছেড়ে দিতে অনুরোধ করি। তারা আমার সাথে বাকবিতণ্ডা লিপ্ত হয়। এসময় আমি একটু রাগান্বিত হলে তারা তাদের ছেড়ে দেয়। মালেক জানান, আমি নিজে দেখেছি সঞ্জয় ও সাত্তার নিজেদের মোবাইলে এই জুটিকে উলঙ্গ করে ভিডিও করছে।
এদিকে এলাকায় খোঁজ নিয়ে বিশ্বস্থ সূত্রের মাধ্যমে জানা গেছে, পর্যটকদের এ ধরণে যৌন নিগৃহের শিকারের ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন সঞ্জয় চাকমা নামের এক যুবক। তার পিতা টুংকু মনি চাকমা জেলার খাদ্য গুদামে চাকুরিরত আছেন। এ সময় তার সাথে আরো যারা ছিলেন তাদের মধ্যে যাদের নাম পাওয়া গেছে তারা হলেন, তত্তারাম চাকমা, মিন্টু চাকমা ও ভগিরথ চাকমা প্রমুখ।
এলাকাবাসি জানায়, এই সঞ্জয় চাকমা গত বছরে একটি এ রকম আরো একটি ঘটনায় দায়িত্বরত পুলিশকেও মারধরের চেষ্টা চালিয়েছে। এর বিরুদ্ধে থানায় বেশ কটি মামলাও ছিলো এবং তার পিতা তাকে বারংবার জামিনে নিয়ে আসেন।
পর্যটন কর্পোরেশন এলাকায় দিনে-দুপুরে এই ধরনের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এখানে আগত পর্যটকদের মাঝে। অনেকেই ঘুরার সময় সংক্ষিপ্ত করে পরিবার-পরিজন নিয়ে পর্যটন এলাকা ছেড়ে চলে যান বলে জানিয়েছে করপোরেশনে কর্মরত একটি সূত্র।
এদিকে ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে রাঙামাটি পর্যটন কর্পোরেশনের ম্যানেজার আখলাকুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এব্যাপারে কোনো অভিযোগ পাননি বলে জানান।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।