বৃহস্পতিবারের মধ্যে বকেয়া বেতন বোনাস, নয়ত ধর্মঘট
তুবা গ্রুপের পাঁচটি গার্মেন্টস কারখানার শ্রমিকরা বৃহস্পতিবারের মধ্যে তাঁদের তিনমাসের বকেয়া বেতন, বোনাস এবং ওভারটাইম ভাতা দাবি করেছেন।
তা না হলে শনিবার থেকে দেশের সব গার্মেন্টস শিল্পাঞ্চলে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন তাঁরা। বুধবার প্রায় সব শ্রমিকই ঢাকার বাড্ডা এলাকায় গার্মেন্টস ইস্যুতে তুবা গ্রুপের অবস্থান নিয়ে তাঁদের অনশন কর্মসূচি এবং প্রতিবাদ অব্যাহত রাখেন। বিকেলে গার্মেনস্ট ভবন থেকেই আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন তুবা গ্রুপ সংগ্রাম কমিটি।
কমিটির নেতা মোশারেফা মিশু তাঁর ঘোষণায় বলেন, ‘‘কাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে তুবা গ্রুপের শ্রমিকদের তিন মাসের বকেয়া বেতন, বোনাস এবং ওভারটাইমের বিল পরিশোধ করতে হবে। নয়ত শনিবার বাংলাদেশের সব গার্মেন্টস শিল্পাঞ্চলে ধর্মঘট পালন করা হবে।''
এখানেই শেষ নয়। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি এবং আমরণ অনশন অব্যাহত রাখারও ঘোষণা দেন তিনি। বলেন, বেতন-ভাতা দিতে হবে তুবা গ্রুপের অফিসে বসে। কারণ তাঁরা বিজিএমইএ ভবনে গিয়ে বকেয়া বেতন নেবে না। তবে শ্রমিকরা যেখানে আন্দোলন করছেন, পুলিশ সাংবাদিকদের সেখানে ঢুকতে দেয়নি। কর্মসূচি ঘোষণার পর কাগজে সেগুলো লিখে আন্দোলনকারীরা তা নীচে ফেলেন। সেখান থেকেই আন্দোলনের তথ্য পাওয়া যায়।
এদিকে ঢাকার কারওয়ান বাজারে বিজিএমইএ ভবনে বুধবার সকাল থেকে শ্রমিকদের দুই মাসের বকেয়া বেতন দেওয়া শুরু করেন বিজিএমইএ-র কর্মকর্তারা। বেতন দেওয়ার জন্য ১৬টি বুথ খোলা হলেও স্থানীয় সময় বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত মাত্র ৩২৬ জন শ্রমিক তাঁদের দুই মাসের বকেয়া বেতন নিয়েছেন। তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-র সভাপতি আতিকুল বিকেলে জানান, ‘‘সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত মজুরি দেওয়ার কথা। তবে এরপরও যদি শ্রমিকেরা আসেন, সে ক্ষেত্রে সময় বাড়ানো হবে।''
মজুরি দেওয়ার আগে মঙ্গলবার বিজিএমইএ-র পক্ষ থেকে তুবা গ্রুপ এলাকায় মাইকিং করা হয়। বুধবার সকালে বাসও পাঠান হয় শ্রমিকদের আনতে। কিন্তু সাড়া মেলে খুবই কম। তার ওপর বিজিএমইএ জানায় যে, বুধবারে শ্রমিকরা দুই মাসের বকেয়া টাকা নিলে বিজিএমইএ থেকে আর টাকা দেওয়া হবে না।
তুবা গ্রুপে পুলিশ
সকাল ১০টার দিকে বাড্ডার হোসেন মার্কেটের নীচ তলায় তুবা গ্রুপের চারটি প্রবেশ পথের সবগুলোতে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। আর নীচে ভবনের সামনে ভ্যান, জলকামান ও এপিসি নিয়ে অবস্থান নেয় কয়েকশ' পুলিশ। এরপর বেলা ১২টার দিকে পুলিশ তালা ভেঙে প্রধান ফটক খুলে দিয়ে বিজিএমইএ ভবনে গিয়ে বেতন নেয়ার জন্য শ্রমিকদের অনুরোধ জানিয়ে পুলিশের ভ্যান থেকে মাইকিং করে।
এর কিছুক্ষণ পর ‘বহিরাগতদের' বের করে দিতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ কারখানা ভবনে ঢোকে। ওই ভবনের সাত তলায় দশ দিন ধরে অনশন চালিয়ে আসছেন তুবাকর্মীরা।
পুলিশ সাংবাদিকদের এবং অন্যান্য ২০/২৫ জনকে কারখানা ভবন থেকে বের করে দেয়। ভবন থেকে বেরিয়ে এসে গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের নেতা মঞ্জুর মইন সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘অসুস্থদের চিকিত্সা সেবা দিতে কারখানায় থাকা এক চিকিত্সককেও বের করে দেওয়া হয়েছে।'' এমনকি অনশনে অসুস্থ শ্রমিকদের চিকিত্সায়ও বাধা দেওয়া হয় বলে তিনি দাবি করেছেন।
তবে বাড্ডা থানার ওসি এমএ জলিল দাবি করেন, ‘‘যাঁরা তুবার কর্মী নন, তাঁদের সবাইকে বের করে দেওয়া হয়েছে।'' তিনি জানান, ‘‘নিরপত্তার কারণইে পুলিশ অবস্থান নিয়েছে। তাদের অবস্থান অব্যাহত থাকবে।'' শ্রমিকরা ভিতরে অবস্থান করে তাঁদের অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন।
ঈদের আগে প্রতিশ্রুত তিন মাসের বকেয়া বেতন-ভাতা না পেয়ে ২৮শে জুলাই ধেকে তুবা গ্রুপের ৫টি গার্মেন্টস-এর ১,৬০০ জন শ্রমিক অনশন শুরু করেন। এরইমধ্যে মঙ্গলবার এই গ্রুপের মালিক দেলোয়ার হোসেন শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধের মুচলেকা দিয়ে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। তাঁর আরেকটি পোশাক কারখানা তাজরীন ফ্যাশানস-এ ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে আগুন গেলে ১১৩ জন শ্রমিক নিহত হয়েছিলেন। সেই মামলার সূত্র ধরেই জেলে ছিলেন দেলোয়ার হোসেন।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।