অন্য এক রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথ, সোম্যকান্ত, দামী বেশভূষা, নিজস্ব বজরায়/পালকিতে জমিদারনন্দন আয়েশী জীবন। শুধু লেখেন এবং আনন্দিত জীবন কাটান।
তাঁর কথা মনে পড়লেই আমাদের চোখের সামনে এরকম একটি চিত্র ভেসে উঠে। অধিকাংশ লোকই এমনটা মনে এবং এরকম ধারণা প্রচলিত। কিন্তু এটি রবীন্দ্রনাথের আসল পরিচয় নয়। এক সুগভীর জ্ঞান-তৃষ্ণা জিজ্ঞাসা এবং অনুসন্ধানরত এক মহান ঋষি। কঠিন বাধন দায়িত্ব এবং অতলান্ত বেদনা বিধুর জীবন তাঁর। হৃদয়ের গভীরে যার বয়ে চলে দু:খের নদী।
পিতার মৃত্যুর পর এক বিশাল সংসারের দায়িত্ব এসে তাঁর কাধে এসে পড়ে। বড় ভাই যতীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন নি:সন্তান এবং অত্যন্ত কর্মব্যস্ত একজন মানুষ। তাঁর এক চাচা অনেকগুলো ছেলেমেয়ে রেখে অল্পবয়সে মারা যান এবং নিজের সংসার মিলিয়ে প্রায় ৬০/৭০ জন মানুষের লেখাপড়া ও জীবনযাপনের সব দায়িত্ব তাঁর কাধে এসে পড়ে।
কলকাতা, শিলাইদহ, শাহজাদপুর এবং আরো বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বিশাল জমিদারি তাকেই দেখাশুনা করতে হয় ফলে প্রায় সারাবছরই তাকে ছুটে বেড়াতে হত।
এরপর মৃত্যুর মিছিল। একে একে পিতা, মাতা, স্ত্রী, ভাই এবং পাঁচটি সন্তান। বলা যায় তাঁর হাতের উপর মারা যায়। মেয়ে মীরা মাত্র ১৪ বছর বয়স। দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য পাঠিয়ে ছিলেন পাহাড়ে। মৃত্যুর আগে মীরা ইচ্ছে প্রকাশ করে সে তার পিতার বাড়িতে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করতে চায়।
সংবাদ পেয়ে ছুটলেন রবীন্দ্রনাথ। প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে গাড়ি ঘোড়া না পেয়ে মেয়েকে কোলে নিয়ে পাহাড় থেকে নামতে থাকলেন। একসময় পথিমধ্যে মেয়েটি তাঁর কোলেই মারা যায়।
এক সুগভীর বেদনার জীবন। যন্ত্রনার গভীর থেকে উঠে আসে কবিতা, গান এবং জাতীয় সঙ্গীত।
আসুন আমরা এই অন্য রবীন্দ্রনাথকে আজ থেকে অন্য চোখে দেখি।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।