স্কুল কর্তৃপক্ষের উদাসিনতার অভিযোগ
অর্ধশতাধীক শিক্ষার্থী অজ্ঞান
মশিউর রহমান রাহাত
প্রিন্টঅঅ-অ+
বুধবার দুপুরে পিরোজপুর জেলা সদরের করিমুন্নেছা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অর্ধশতাধীক ছাত্রী প্রচণ্ড রৌদ্রের খরতাপে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।
জানা গেছে, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আগের দিন মঙ্গলবার সাড়ে আটটার মধ্যে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য বলে দেয় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ছাত্রীরা বুধবার যথাসময়ে বিদ্যালয়ে হাজির হয়ে অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য একেএমএ আউয়ালকে স্বাগত জানাবার অপেক্ষা করতে থাকে।
বেলা ১১.৩০ টায় এমপি উপস্থিত হলে বিদ্যালয়ের মাঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের জন্য দাড় করানো হয় শিক্ষার্থীদের। জাতীয় সংগীতের প্রথম চার লাইন গাওয়ার পরই লাইনে দাড়ানো ছাত্রীরা অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। এ সময় এমপি আউয়াল ছাত্রীদেরকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠাতে বলেন। হাসপাতালের বিছানায় ক্রমশ বাড়তে থাকে অসুস্থ ছাত্রীদের ভীড়। বেলা একটার মধ্যে যার সংখ্যা দাড়ায় অর্ধশতাধীক।
ওই বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেনীর ছাত্রী হুমাইরা ইসলাম রাফির বাবা পুলিশ কর্মকর্তা এসআই আবু জাফর আহম্মেদ জানান, তার মেয়ে এক ঘন্টা অচেতন থাকার পর জ্ঞান ফেরে। এখনও তার চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। অসুস্থ রাফি জানায়, সকাল থেকে রৌদ্রে দাড়িয়ে ক্লান্ত অবস্থায় একটু পানি চেয়েছিল। কিন্তু পানির কোন ব্যাবস্থা সেখানে ছিলো না। এরপর লাইনে দাড়ানোর পর বুকে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করে সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এরপর সুস্থ হয়ে সে দেখতে পায় সে হাসপাতালের বিছানায়।
এদিকে এ ঘটনায় অভিভাবকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। অভিভাবক নাসির শেখ বলেন, আমার মেয়ে কিছুদিন আগে সড়ক দূর্ঘটনার শিকার হয়েছিল। সেই মেয়েকে আড়াই ঘন্টা প্রচণ্ড রোদে দাড় করিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি সাংবাদিকদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন এরা কি মানুষ না কসাই? হাসপাতালের বিছানায় গুরুতর অসুস্থ কয়েকজনকে কৃত্রিম অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে জান্নাতুল, জেরিন এবং আখি জানায়, তাদের শরীর, বুক জ্বলছে। তারা শ্বাস করতে পারছে না। ৬ষ্ঠ শ্রেনীর অসুস্থ ছাত্রী মাহফুজা এবং নুরজাহান জানায়, পানির জন্য হাহাকার করলেও তাদের জন্য পানির ব্যবস্থা করা হয়নি। রোদে দাড়িয়ে থেকে তারা অসুস্থ হয়ে পড়ে।
এ সময় হাসপাতালে উপস্থিত হন ওই বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও এমপি আউয়ালের স্ত্রী লায়লা ইরাদ, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ মজিবুর রহমান খালেক, মহিলা পরিষদ সভাপতি মনিকা মন্ডল। হাসপাতালে অসুস্থ ছাত্রীদের উপজেলা চেয়ারম্যান ৫০ টি জুস কিনে দেন।
এ সময় মনিকা মন্ডল বলেন, মেয়েদের জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ পানির ব্যবস্থা রাখে নাই। তাছাড়া শীতকালীন মৌসুমের অনুষ্ঠানের পুরস্কার দীর্ঘ বিলম্ব করে দেওয়ার কারণ বুঝতে পারছি না। হাসপাতালে ভর্তি মেয়েদের সুষ্ঠ চিকিৎসা দাবী করছি।
এ ঘটনায় স্কুল কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল হালিম হাওলাদার।
তিনি সাংবাদিকদের বোঝাতে চান মেয়েরা সকালে প্রাইভেট পড়ে খালি পেটে স্কুলে আসার কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পানির ব্যবস্থা না থাকার বিষয়ে তিনি কোন সদোত্তর দিতে পারেননি।
পিরোজপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শংকর কুমার ঘোষ বলেন, গণ মনোস্তাত্বিক (মাস সাইকোজেনিক ইলনেস) রোগের কারনে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এসব ধরনের রোগ সাধারণত মেয়েদেরই হয়ে থাকে। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অভিভাবকেরা প্রশাসনের কাছে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অপসারণ দাবি করেছেন।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।