শিশু নির্যাতনের দায়ে চুয়াডাঙ্গায় ডাক্তার ও প্রকৌশলী দম্পত্তি কারাগারে
মেয়েটির ভালো নাম আসমা উল হুসন। প্রতিবেশীরা ডাকতো আসমা নামে। আর মা-বাবা আদর করে ডাকেন হুসনা নামে। পাঁচ মেয়ের খরচ কুলিয়ে উঠতে পারছিলেন না বিএডিসির শ্রমিক হুসনার বাবা শহিদুল ইসলাম। আর তাইতো একটু ভালো থাকা আর খাওয়ার আশায় মাত্র ৮ বছর বয়সী মেয়েকে বছর খানেক আগে তুলে দিয়েছিলেন ঢাকা ধানমন্ডির বাসিন্দা ডা. জান্নাতুল বাকীয়া ওরফে রতনা ও তার প্রকৌশলী স্বামী রেজাউল করিমের হাতে।
চুয়াডাঙ্গা রেলপাড়ার প্রফেসর শমসের আলীর মেয়ে ডা. জান্নাতুল বাকিয়া ওরফে রতনা ঢাকার ধানমন্ডিতে ভাড়ার বাসায় বসবাস করেন। বছরখানেক আগে তার শিশুসন্তানকে দেখভালের জন্য গৃহপরিচারিকা খোঁজ করেন। ওই সময় বিএডিসির শ্রমিক হুসনার বাবা শহিদুল ইসলাম মেয়েকে একটু ভালো থাকা আর খাওয়ার আশায় ডা. রতনার হাতে তুলে দিয়েছিলেন।
তারপর থেকেই ছোট্ট শিশু আসমার ঠিকানা হয় পশ্চিম ধানমন্ডির ই-১৪ নম্বর রোডের ডা. রতনার ফ্লাটে। এই দম্পতির ছোট্ট শিশু কন্যার দেখভালের পাশাপাশি বাড়ির সব কাজ করতে হতো তাকে। গ্রামের মুক্ত হাওয়ায় বেড়ে ওঠা শিশু হুসনার মন প্রায় কেঁদে উঠতো দরদী মা-বাবার জন্য। কিন্তু ইট পাথরের খাঁচায় বন্দী হুসনা গ্রিলের গরাদ ভেঙে বের হয়ে আসতে পারে না। ডাক্তার দম্পতি গত এক বছরের মধ্যে একটি বারের জন্যও তাকে বাবা-মায়ের কাছে আসতে দেয়নি।
ডা. রতনাকে আপু বলেই ডাকতো আসমা। অথচ সেই আপুর হাতে কি বীভৎস নির্যাতনের শিকার হয়েছে এই শিশুটি তা দেখলে যে কেউ শিউরে উঠবে। সারা শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন, কোথাও আবার দগদগে ঘা। পা থেকে মাথা পর্যন্ত সবখানে কাটা-ছেঁড়া। যেনো সেই মধ্যযুগীয় দাসপ্রথার কোনো চিত্র আমরা দেখছি।
এক বছর টালবাহানার পর গত মঙ্গলবার হুসনাকে তার মা-বাবার কাছে অসুস্থ অবস্থায় ফেরত দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার রাতে চুয়াডাঙ্গা থেকে সটকে পড়ার চেষ্টা করেন ডা. জান্নাতুল বাকীয়া এবং তার স্বামী প্রকৌশলী রেজাউল করিম।
কিন্তু তাতে বাধ সাধে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ। ঢাকাগামী একটি নৈশকোচ থেকে তাদের আটক করে থানায় আনা হয়। পরে হুসনার মা শিল্পি খাতুনের দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় এ দম্পতিকে। টানা শারীরিক নির্যাতনে মানসিকভাবেও অসুস্থ হয়ে পড়েছে হুসনা।
এদিকে মামলার বাদী শিল্পী খাতুনকে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন প্রলোভন, কখনও আবার প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি। এ অমানবিক নির্যাতনের পর ডা. জান্নাতুল বাকীয়া ওরফে রতনা বলেন, ‘ইচ্ছে করে এমন কাজ করিনি। রাগের মাথায় হয়ে গেছে।’ আর তার স্বামী প্রকৌশলী রেজাউল করিম জানালেন অবশ্য বাসায় যা ঘটেছে সে সম্পর্কে কিছুই জানতেন না তিনি।
বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে- হয়তো হুসনার ক্ষেত্রে ও তা ব্যত্যয় হবে না। অন্ধ আইনের ফাঁক-ফোকর গলে হয়তো বেরিয়ে যাবে সমাজের ভদ্র, শিক্ষিত হিসেবে পরিচিত এই অমানুষরা।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এরশাদুল কবির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, নির্যাতিত শিশু কন্যা হুসনার বাবা শহিদুল ইসলাম’র অভিযোগের ভিত্তিতে ডা. জান্নাতুল বাকীয়া রতনা এবং তার স্বামী প্রকৌশলী রেজাউল করিমকে ঢাকা মুখি একটি যাত্রিবাহী বাস থেকে ৫৪ ধারায় আটক করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। ঘটনাস্থল ঢাকার হাজারীবাগ থানায় হওয়ায় নির্যাতিত পরিবারকে ওই থানায় মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এবিষয়ে আগামীকাল শনিবার সকাল ৯ টায় চুয়াডাঙ্গা বড় বাজারের চৌ রাস্তা মোড়ে (শহীদ হাসান চত্তরে) জেলার সর্বস্থরের মানুষ এক মানব বন্ধনের আয়োজন করেছে মানুষরুপী এই হায়েনা দম্পত্তির দৃষ্টান্ত শাস্তির দাবীতে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।