রানাপ্লাজা ট্র্যাজেডির তিনবছরেও বিথীর খোঁজ মেলেনি
আজ রানাপ্লাজা ট্র্যাজেডির তিনবছর পূর্ণ হলো। এই ট্র্যাজেডির তিনবছর পূর্ণ হলেও গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের মধ্য ভাঙ্গামোড় গ্রামের নিখোঁজ গার্মেন্টসকর্মী বিথী খাতুনের (২১) খোঁজ মেলেনি আজও।
বিথী বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন, তাও জানে না তার পরিবার। সন্তান হারানোর শোক আর শত দুঃখ-কষ্ট নিয়ে বাবা-মা, ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজন বিথীর ফেরার আশায় চেয়ে আছেন।
এদিকে নিখোঁজ বিথীর পরিবার সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো সাহায্য সহযোগিতাও পায়নি। এমনকি কেউ কখনও পরিবারটির খোঁজও নেয়নি বলে অভিযোগ করেন বিথীর পরিবার।
সংসারে অভাব-অনটনের কারণে রানাপ্লাজা ধসের এক বছর আগে বিথী চাকরির উদ্দেশে সাভার যান। সেখানে গিয়ে রানাপ্লাজার তৃতীয় তলায় ওয়াশিংয়ের কাজ নেন। মাস শেষে বেতন পেয়ে বাড়িতে টাকাও পাঠাতেন বিথী। ভালোই চলছিল তাদের সংসার। কিন্তু রানাপ্লাজা ট্র্যাজেডির পর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন বিথী। সংসারেও নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। অভাব-অনটন তাদের পরিবারের এখন নিত্যসঙ্গী।
শনিবার বিকেলে সরেজমিনে বিথীর বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার মা অঞ্জুয়ারা বেগমের সাথে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ঘটনার এক সপ্তাহ আগেও বিথী ফোন করে জানায়, ‘মা তোমরা চিন্তা করো না, এবার এসে নতুন ঘর বানাব’। কিন্তু সেই নতুন ঘর আর বানানো হলো না।
তিনি বলেন, ‘মেয়ে হামার বেঁচে আছে, না মরে গেছে তাও জানি না। মেয়ের লাশ না হোক তার শরীরের হাড্ডিও যদি পেতাম তাও শান্তি পেতাম’। এ সময় তিনি মেয়ের ছবি হাতে নিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
বিথীর বাবা আবদুল বারী বলেন, দুই মেয়ে আর এক ছেলে নিয়ে আমাদের সংসার। বিথী আমার বড় মেয়ে। ছোট মেয়ে ফাইমাকে কষ্ট করে বিয়ে দিয়েছি। এখন সংসারে ছোট ছেলে আশিকুর। আশিকুর বাড়ির পাশে একটি মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে। সংসারে সবসময় অভাব অনটন লেগেই থাকতো। সংসার চালানোর জন্য মেয়েকে গার্মেন্টসে পাঠাইছিলাম। কিন্তু তাকে গার্মেন্টসে পাঠিয়ে আমার সব শেষ হয়ে গেল। এখন মেয়ে বেঁচে আছে না মরে গেছে, তাও জানি না।
রানাপ্লাজা ধসের ঘটনায় সরকারি হিসাব মতে গাইবান্ধা জেলার নারীসহ ৪৯ জন নিহত ও শতাধিক আহত হন। এর মধ্যে নিখোঁজ রয়েছেন ১১ জন। আহত অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করে খেয়ে না খেয়ে দিন যাপন করছেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল স্মরণকালের বড় বিপর্যয় নামে ঢাকার সাভারে। ধসে পড়ে বেশ কটি পোশাক কারখানার বহুতল ভবন রানাপ্লাজা। চাপা পড়ে শত শত মানুষ। জীবিত উদ্ধার করা হয় অনেককে। এরপর ১৪ মে উদ্ধার অভিযান সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।