- হোম
- >
- আইন-মানবাধিকার
- >
- মসজিদে বসে মুয়াজ্জিনকে হত্যার পরিকল্পনা
মসজিদে বসে মুয়াজ্জিনকে হত্যার পরিকল্পনা
রাজধানীর ইসলামপুরে ঝব্বু খানম জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন বেলাল হোসেনকে (৪৯) হত্যার আগে কেরানীগঞ্জে একটি মসজিদে বসে হত্যার পরিকল্পনা করেছে এই পরিকল্পনার মূল হোতা খাদেম হাবীব ও দ্বিতীয় মুয়াজ্জিন মোশারফ।
ঘটনার দুই দিন আগে ছুটি নিয়ে হাবিব গ্রামের বাড়িতে যান। কেউ যেন টের না পায় তাই ছুটিতে থাকা অবস্থায় আবার ঢাকায় ফিরে এসে এই হত্যাকাণ্ড ঘটান। বুধবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লালবাগ বিভাগের উপ কমিশনার মফিজ উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, মুয়াজ্জিন হত্যার সঙ্গে জড়িত পাঁচজনের মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। বাকী একজন পলাতক রয়েছেন।
গ্রেপ্তারকৃত চারজন হলেন, ঝব্বু খানম জামে মসজিদের খাদেম হাবীব, দ্বিতীয় মুয়াজ্জিন মোশারফ হোসেন, বেলালের বন্ধু সরোয়ার হালিম এবং হাবীবের বন্ধু তোফাজ্জল।
উপ কমিশনার বলেন, ‘মুয়াজ্জিন বেলাল গত ২৮ বছর ধরে ওই মসজিদে চাকরি করেন। মসজিদের নীচের ৩৩টি দোকানের ভাড়া তুলতেন তিনি। দান বাক্স থেকে কিছু টাকা আসতো। আশপাশের আরো বিভিন্ন দান খয়রাতও তুলে তিনি তার কাছে রাখতেন। প্রতিমাসে ভাড়া বাবদ প্রায় ৪৫ হাজার টাকা উঠাতেন। মসজিদের কোন কমিটি না থাকায় মসজিদের কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার পর বাকী টাকা নিজের কাছেই রাখতেন। সব মিলিয়ে তিনি ভালো টাকা আয় করতেন। কমিটি না থাকায় কেউ তদারকি করতো না। তাই টাকাগুলো তার নিজের একাউন্টে রাখতেন।
এর মধ্যে কিছু টাকা বন্ধুদের মাধ্যমে সুদে খাটাতেন এবং কিছু টাকা শেয়ার বাজারে খাটানোর জন্য বন্ধুকে দিয়েছিলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘গত তিন বছরে আসামিদের কারোরই বেতন বাড়েনি। তাই আসামিরা মুয়াজ্জিন বেলালকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেন। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য তারা দুই বছর আগে পরিকল্পনা করেন। এর আগে দুইবার তাকে মারার প্রস্তুতি নিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন তারা।
ঘটনার দুইদিন আগে হাবীব ২ এপ্রিল ২ দিনের জন্য ছুটি নিয়ে নড়াইলে গ্রামের বাড়ি যান। কেউ যাতে তাকে সন্দেহ না করে তাই তিনি নড়াইলে গিয়ে আবার ৩ এপ্রিল ঢাকায় এসে কেরানীগঞ্জে এক বন্ধুর বাসায় ওঠেন। এই বন্ধুও হত্যা পরিকল্পনাকারীদের একজন। ঘটনার দিন বন্ধুর সঙ্গে তিনি একটি মসজিদে নামাজ পড়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঝব্বু খানম জামে মসজিদে আসেন। তখন বেলাল মসজিদের বাইরে ছিলেন।
এ সময় হাবীব দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার মাঝখানে সিড়ি বরাবর অবস্থান নেন। মসজিদের তৃতীয় তলাতেই সবাই রাতে ঘুমান। মুয়াজ্জিন বেলাল রাতে ফিরে যখন ঘুমানোর জন্য সিড়ি দিয়ে তৃতীয় তলায় উঠছিলেন ঠিক তখনই হাবীব ধারাল ছুরি দিয়ে পেছন থেকে কয়েকটি আঘাত করেন। এরপর তার হাত ও মুখ চেপে ধরেন। এক পর্যায়ে বেলাল নিস্তেজ হয়ে পড়লে তাকে সিড়িতে ফেলে দিয়ে তার পকেট থেকে ছয় হাজার টাকা ও চাবির গোছা নিয়ে মোশারফের বিছানায় যান।
সেখানে মোশারফকে দুই হাজার টাকা ভাগ দিয়ে হাবীব আবার কেরানীগঞ্জে চলে যান।
হাবীবের দেওয়া তথ্যমতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিটি বাবুবাজার ব্রীজের নিচে একটি ড্রেন থেকে উদ্ধার করা হয়।
উপ কমিশনার বলেন, ‘সরোয়ার হালিম বেলালের বন্ধু। এর আগে বেলাল ৮ লাখ টাকা তাকে শেয়ার বাজারে খাটানোর জন্য দেন। এই টাকা যাতে ফেরত দিতে না হয় সে জন্য মোশারফের সঙ্গে বেলালকে হত্যায় যোগ দেন সরোয়ার হালিম। সারোয়ার হালিম মসজিদের পাশেই থাকতেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আসামি এর আগে হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে নানা কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন।’
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।