রাখাইনদের জলকেলী উৎসব শুরু
বাংলা বর্ষবরণের আমেজ শেষ না হতেই কক্সবাজারের আদিবাসী রাখাইনপল্লীতে শুরু হয়েছে বুড্ডিস্ট নববর্ষ উদযাপনের প্রস্তুতি। বিগত বছরের অসারতা, পাপ, কালিমা ও সকল পংতিলতা ধুয়ে ১৩৭৮ রাখাইন বর্ষকে বরণ করে নিচ্ছেন রাখাইন ধর্মালম্বীরা। এ লক্ষ্যে রাখাইন সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষেরা মেতে উঠেছে সাংগ্রে বা জলখেলী উৎসবে।
শনিবার (১৬ এপ্রিল) নতুন রাখাইন বছরের শুরুতে কক্সবাজারের রাখাইন পল্লীগুলোতে ছিল উৎসবের আমেজ। আর রবিবার (১৭ এপ্রিল) নতুন বছরের দ্বিতীয় দিন থেকে শুরু হচ্ছে তিনদিন ব্যাপী জলকেলীর মূল অনুষ্ঠান। এ উৎসব ‘সাংগ্রে পোয়ে’নামে পরিচিত। মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) সমাপ্তি ঘটবে এ উৎসবের।
পর্যটন শহরের পূর্ব ও পশ্চিম মাছবাজার, ফুলবাগ সড়ক, ক্যাংপাড়া, হাঙর পাড়া, টেকপাড়া, বার্মিজ স্কুল রোড, বৌদ্ধমন্দির সড়ক, চাউলবাজার ও বড়বাজার রাখাইনপল্লীতে ডজনখানেক প্যান্ডেল তৈরী হয়েছে। এছাড়াও মহেশখালী, টেকনাফ, চকরিয়া, হারবাং, রামু, চৌফলদন্ডীসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে উৎসক মূখর পরিবেশে চলছে এ আয়োজন।
রাখাইনরাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছরের মতো এবারও বেশ ঝাঁকঝমকপূর্ণভাবে উদযাপিত হচ্ছে রাখাইনদের নববর্ষ বরণ। উৎসবের মূল লক্ষ্য অতীতের সকল ব্যাথা-বেদনা, গ্লানি ভুলে ভ্রাতৃত্ববোধের মাধ্যমে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়া। রাখাইন তরুণ-তরুণীরা নতুন ও আকর্ষণীয় পোষাক পরে সেজেগুজে রাস্তার মোড়ে মোড়ে এবং রাখাইন পল্লীতে তৈরি করা জলকেলী উৎসবের প্যান্ডেলে গিয়ে একে অপরকে পানি নিক্ষেপ করে অন্যের মঙ্গল কামনা করছে। এ সময় ঢাক-ঢোল আর কাঁসার তালে-তালে নেচে গেয়ে আনন্দ প্রকাশ করছেন রাখাইন আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা।
বরাবরের মতো এবারও দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা প্যান্ডেল ঘুরে রাখাইনদের বর্ষবরণ ও বিদায়ের এই জলকেলি উৎসব উপভোগ করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
রাখাইন বুড্ডিষ্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মং ক্য রাখাইন জানান, গত বছরের মতো এবারও কক্সবাজার শহরের ৮টি এবং টেকনাফ, উখিয়া, মহেশখালী, রামু, চৌফলদন্ডী, চকরিয়া, হারবাংসহ জেলার বিভিন্ন স্থানের অন্তত ৪০টি প্যান্ডেলে জলকেলি উৎসব চলছে। জলকেলি ছাড়াও উৎসবের প্রথম দিন সড়কে শোভাযাত্রা করা হয়েছে। সমাপনী দিনে বৌদ্ধ বিহারে গিয়ে সমবেত প্রার্থনার মাধ্যমে রাখাইনরা বিশ্ববাসীর শান্তি ও সবার জীবনে মঙ্গল কামনা করবেন।
চৌফলদন্ডীর তরুণ ইউ মংথিন রাখাইন বলেন, আমরা এই উৎসবের জন্য অপেক্ষায় থাকি। ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সেজে জল ছিটিয়ে পুরোনো বছরের সব গ্লানি ভুলে নতুন বছরকে বরণ করে নিই। সবার জন্য সুন্দর ও মঙ্গলময় জীবন কামনা করি। এবারও হিংসা বিদ্বেষ ভুলে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছি। এটি আমাদের কাছে খুবই পবিত্র ও আনন্দের দিন। শিশু-কিশোরেরা, ঢাকঢোল পিটিয়ে নেচে গেয়ে আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠে এ উৎসবে।
কক্সবাজার সিটি কলেজের অধ্যক্ষ ক্যাথিং অং জানান, রাখাইন অব্দের ১৩৭৭ সালকে বিদায় এবং নতুন ১৩৭৮ বছরকে বরণ করে নিতেই মূলত এই ‘সাংগ্রে পোয়ে’ উৎসব। আমাদের দেশে সব সম্প্রদায়ের উৎসব সার্বজনীন হয়ে দেখা দেয়। সব ধর্মের লোকজন সকল সম্প্রদায়ের উৎসবে এসে শুভেচ্ছা জানায়। তাদের পাশাপাশি পর্যটন শহর হিসেবে দেশি-বিদেশি পর্যটকরাও জমিয়ে রাখাইন সম্প্রদায়ের এ অনুষ্ঠানে ভিড় জমান। এবারও তাই হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজন গত ১৫ এপ্রিল থেকে মোমবাতি প্রজ্জলন, পুষ্প অর্পণসহ ধর্মীয় পূজা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেছেন।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ বলেছেন, রাখাইনদের জলকেলী উৎসব উপলক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাড়তি নিরাপত্তায় পুলিশের পাশাপাশি মাঠে রয়েছে র্যা বের বিশেষ টহলটীম।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।