গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনায় পানি বৃদ্ধিতে তলিয়েছে ফসল
ব্রহ্মপুত্র-যমুনায় হঠাৎ করেই পানি বৃদ্ধির ফলে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার নিম্নাঞ্চলের ২০ হেক্টর জমির কালি বোরো ধান ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। কৃষকরা বাধ্য হয়েই আধা-পাকা ধান কাটতে শুরু করেছেন। ফলে এ অঞ্চলের কৃষকরা চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
জানা যায়, গত কয়েকদিনে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনায় পানি বৃদ্ধির ফলে উপজেলার ব্রহ্মপুত্র-যমুনা তীরবর্তী কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের বালাসীঘাট এলাকার প্রায় ২০ হেক্টর জমির কালি বোরো ধান তলিয়ে গেছে। নারী-পুরুষ মিলে পানিতে ডুবে যাওয়া কাঁচা ধান কাটছেন। অনেকেই ধান কাটা শ্রমিকের অভাবে ডুবে যাওয়া ধান কাটতেও পারছেন না। শ্রমিক খরচ দিয়ে কেউ কেউ আবার অপরিপক্ক ধান কাটলেও লোকসান গুণতে হচ্ছে কৃষকদের।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা বলেন, যদি ধানগুলো পাকা হতো তাহলে সমস্যা ছিল না। গরুর খাওয়ার জন্য অনেকেই ধান কাটছেন বলে তারা জানান।
ফুলছড়ি উপজেলার পূর্ব কঞ্চিপাড়া গ্রামের কৃষক আয়নাল হক (৫০) হতাশার সুরে বলেন, অনেক কষ্ট করে কালি বোরো ধান গারলাম বাহে, সব তো পানিত তলে গেল, হামরা কি করব এখন? ডুবে ডুবে ধান কাটতে কাঁচিটাও হারালাম, হামাগড়ে দুঃখ কই থুই বা কাক কই সেটাই বুঝবার পাবানচি না।
প্রায় ৩ মাস আগে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী বালাসী ঘাটের পূর্ব পাশে ২ বিঘা জমিতে কালি বোরো ধান রোপণ করেছিলেন কৃষক আয়নাল হক। তার আশা ছিল নদীগর্ভে বিলীন হওয়া জমিতে ধানের আবাদ করে সংসারের কিছুটা অভাব দূর করবেন। কিন্তু অসময়ে নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তার এ স্বপ্ন পানিতে তলিয়ে গেল।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, ফুলছড়ি উপজেলায় ৭০টি চর এলাকা রয়েছে। নদীবেষ্টিত এসব চরাঞ্চলে চলতি বছর প্রায় ৩৮০ হেক্টর জমিতে কালি বোরো ধানের চাষ করেছে কৃষকরা।
উপজেলার এরেন্ডাবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন মণ্ডল বলেন, নদীর পানি হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় নিচু এলাকায় রোপন করা কাঁচা ও আধা-পাকা ধানের জমি তলিয়ে গেছে। কৃষকেরা অনেক কষ্ট করে ডুবে থাকা ধান কাটছেন। কাঁচা ধান কেটে কী লাভ? তাই অনেকেই ধান কাটার আশা ছেড়ে দিয়েছেন বলে তিনি জানান।
ফুলছড়ি উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ তাহাজুল ইসলাম বলেন, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা তীরবর্তী এলাকা কালি বোরো ধানের চাষ উপযোগী। এসব জমিতে শুকনো মৌসুমে পানি শুকানোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে কালি বোরো ধান লাগান কৃষকেরা। নদীর পানি কমতে থাকায় ধানের চারাগুলো শিকড় গজিয়ে বাড়তে শুরু করে। কিন্তু এসব জমির ফসলের কোনো নিশ্চয়তা নেই। আগাম বন্যা বা অতি বৃষ্টির ফলে যেকোনে মুহূর্তে তলিয়ে যেতে পারে। এবার ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদের পানি হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক কৃষকের ধান তলিয়ে গেছে বলে আমি শুনেছি। তবে কত হেক্টর জমি এখন পানির নিচে তা এখনো সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে চরাঞ্চলের কৃষকের আরো ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে তিনি জানান।
ফুলছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, যমুনা-ব্রহ্মপুত্র নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষকেরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হলেন। গরীর পরিবারে এই ধান দিয়ে হয়তো মাস ছয়েক চলতো তাদের সংসার। কিন্তু তাদের সে স্বপ্ন ধুলিসাৎ করে দিল অসময়ের বন্যা।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।